রুশ কথাসাহিত্যিক ভ্লাদিমির নবোকভের ভক্তদের জন্য সুসংবাদ। আগামী বছর ইংরেজিতে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্ত্রী ভেরা স্লোনিমকে লেখা নবোকভের চিঠি।
নবোকভ জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালের ২২ এপ্রিল রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে। তার শৈশব ও যৌবনের অনেকখানি সময়ই কেটেছে রাশিয়ায়। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর তার পরিবার পালিয়ে যায় ইংল্যান্ডে, সেখানে ক্যামব্রিজ ট্রিনিটি কলেজে ভাষাতত্ত্বে ভর্তি হন নবোকভ। স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর জামার্নির বার্লিনে অনেক রুশ প্রবাসীর সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানেই বলা চলে লেখালেখিতে তার হাতেখড়ি। তার প্রথম ৯টি উপন্যাস ছিল রুশ ভাষায় লেখা। পরে লিখতে শুরু করেন ইংরেজিতে।
নবোকভ তার প্রকাশিত বেশির ভাগ লেখাই উৎসর্গ করেছেন স্ত্রী ভেরাকে, যিনি ছিলেন একই সাথে তার লেখার সম্পাদক ও অনুবাদক। বিবাহিত জীবনের খুব কম সময়ই এ যুগল একে-অপর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এরপরও দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে স্বল্প সময়ের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়ে তারা একে অপরকে স্মরণ করেছেন চিঠির মাধ্যমে।
ভেরাকে লেখা তিনশোরও বেশি চিঠি সংগ্রহে রয়েছে নবোকভের সত্তরোর্ধ ছেলে দিমিত্রি নবোকভের কাছে। চিঠিগুলি দিমিত্রি তার মা ভেরার সংগ্রহশালা থেকে উদ্ধার করেছেন। সম্প্রতি এ চিঠিগুলি মূল রুশ ভাষায় রাশিয়ান ম্যাগাজিন ‘স্নব’-এ ছাপা হয়েছে। এ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে সের্গেই নিকোলিভিচ বলেছেন ‘চিঠিগুলি খুব স্পষ্টভাবেই নবোকভের নিজস্ব স্টাইলকে চিহ্নিত করে। চিঠিগুলি প্রচলিত চিঠির সাথে হয়ত নাও মিলতে পারে। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এগুলি একজন মহৎ কবি-লেখকের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। ’
১৯৪০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়ে নবোকভ বসবাস করেছেন আমেরিকায়। চিঠিগুলিতে ওই সময়ের কিছু ভ্রমণ-পথের বর্ণনা পাওয়া যায়, যার সাথে তার বিখ্যাত ‘লোলিতা’ উপন্যাসের কোনও কোনও বর্ণনার মিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নবোকভ তার ‘লোলিতা’ উপন্যাসটি লেখার আইডিয়া পেয়েছিলেন আমেরিকাতে বসবাসকালেই। নবোকভ তার ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত উপন্যাস ‘লোলিতা’ লিখেছিলেন ইংরেজিতে।
চিঠিগুলিতে উঠে এসেছে স্ত্রী ভেরার সাথে নবোকভের ব্যক্তিগত প্রেম ও ভালোবাসার বিভিন্ন মুহূর্ত। স্ত্রী ভেরা স্লোনিমের সাথে তার প্রথম দেখা হয় ১৯২৩ সালে বার্লিনে। এরপর তাদের সম্পর্ক ছিল ১৯৭৭ সালে সুইজারল্যান্ডে নবোকভের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। ১৯২৫ সালে তারা বিয়ে করেন। প্রথম দেখার অল্প কিছুদিন পরই নবোকভ ভেরাকে লিখেছিলেন, ‘আমি কীভাবে তোমার কাছে নিজেকে প্রকাশ করি, বলো-- আমার আনন্দ, আমার সোনালি মুহূর্ত, আমার স্বর্গীয় সুখ-- কেবলই তোমাকে ঘিরে। আমার সমস্ত স্মৃতিসত্তা, আমার কবিতা আর ভেতরের আবেগ-অনুভূতি সবই তোমাকে উদ্দেশ্য করে। ’ ভেরা মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯১ সালে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯২৪, নভেম্বর ২৮, ২০১০