৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস, কেননা ১৮৮০ সালের এই দিনে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন এবং একই দিনে ১৯৩২ সালে প্রয়াত হন।
বাংলা একাডেমীর সেমিনার কক্ষে এ উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর বিকেলে আয়োজন করা হয় স্মারক-বক্তৃতার।
স্মারক-বক্তা অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, নারীবাদ মার্কস্বাদ থেকে উদ্ভূত হলেও শ্রেণিবৈষম্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শুধু শ্রেণি নয়, লিঙ্গ বিষয়টির প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করে। পূর্বে নারীবাদ জনমানসে সাগ্রহে গৃহীত না হলেও এখন তা অতি পরিচিত প্রপঞ্চ।
তিনি বলেন, পাশ্চাত্যে নারীবাদ একসময় মেরি উলস্টোনক্রাফট্-এর ‘ঞযব ঠরহফরপধঃরড়হ ড়ভ ঃযব জরমযঃং ড়ভ ডড়সবহ’ শীর্ষক গ্রন্থের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করলেও প্রাচ্যে নারীবাদ প্রচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল। নারীবাদের তাত্ত্বিক কাঠামো বিশ্লেষণে রোকেয়া ছিলেন স্পষ্টবাদী। নারী ও পুরুষকে তিনি বিবেচনা করেছেন একটি শকটের দুটি চাকা হিসেবে। রোকেয়া তাঁর লেখনিতে নারীবাদ কিংবা পিতৃতন্ত্র ধারণা সরাসরি ব্যবহার করেননি। তবে তাঁর লেখনির বিভিন্ন অংশে নারীর অধস্তনতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। নারীর অধস্তনতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে রোকেয়া শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। ইতিহাসে নারীরা যে নানাভাবে শোষিত-বঞ্চিত তা রোকেয়া ব্যক্ত করেছেন ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ ও ‘অর্ধাঙ্গী’ শীর্ষক লেখনি দুটিতে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বরেণ্য গবেষকগণ রোকেয়াকে এ অঞ্চলের প্রথম নারীবাদী তাত্ত্বিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, রোকেয়া তাঁর লেখনিতে শিক্ষাকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য দিয়েছেন। মুক্তবুদ্ধি, বিজ্ঞানচর্চা ও মানবিকতা প্রভৃতি তাঁর লেখনিতে ছিল সুস্পষ্ট। অত্যাশ্চার্য যে, রোকেয়া অসাধারণ কৌতুকবোধের মাধ্যমে নারীর অধস্তনতার মতো অতি প্রয়োজনীয় বিষয়টি উত্থাপন করেন। তাই নারীর স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য রোকেয়া-দর্শনের প্রয়োজনীয়তা এখনও অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯২৭, ডিসেম্বর ০৯, ২০১০