ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

গত বছরের লেখালেখি

১০ কবি-লেখকের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১১
১০ কবি-লেখকের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন

১. ২০১০-এ আপনার লেখালেখিকে নিজে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
২.  বছরটিতে আপনি কী লিখেছেন; এ বছরে আপনার কী কী বই প্রকাশিত হয়েছে?
৩. গত বছরটিতে বিভিন্ন সাময়িকপত্রে প্রকাশিত সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
বাংলানিউজের ‘শিল্প-সাহিত্য’ বিভাগ থেকে এ তিনটি প্রশ্ন করা হয়েছিল দেশের নানা ক্ষেত্রের ১০ কবি-লেখককে। নিজেদের অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন জানাচ্ছেন কথা বলেছেন মোহাম্মদ রফিক, যতীন সরকার, হায়াৎ মামুদ, মুহম্মদ নূরুল হুদা, আনোয়ারা সৈয়দ হক, হরিপদ দত্ত, আলতাফ হোসেন, মঈনুল আহসান সাবের, নাসরীন জাহান ও আকিমুন রহমান


খুব বেশ লেখালেখি করতে পারিনি : মোহাম্মদ রফিক

২০১০ সালে আমি খুব বেশ লেখালেখি করতে পারিনি।

সারা বছরই অসুস্থ ছিলাম। ওই সময় আমার একটি কবিতার বই ও গল্পসংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প সংগ্রহটা বের হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। বইটা মনে হয় কারও চোখেই পড়েনি।

২০১০ সালে আমাদের সমগ্র সাহিত্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ চোখে পড়েনি। অসুস্থ থাকার কারণে খুব বেশি পড়াশোনাও করতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে ২০১০-এ এভারেজ কিছু লেখালেখি হয়েছে।

২০১১ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় আমার বেশ কিছু বই বের হবে। তবে বেশির ভাগই পুরোনো বই। ইত্যাদি প্রকাশনী থেকে বের হবে ‘কবিতা সমগ্র-১’। এছাড়া শুদ্ধস্বর করবে জীবনানন্দকে নিয়ে লেখা একটি বই। প্রথমা থেকেও একটি কবিতার বই বেরুনোর সম্ভাবনা রয়েছে।


এ বছর আসলে আমি নতুন কিছু লিখতে পারিনি : যতীন সরকার

২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে আমি ছিলাম অসুস্থ। ২০১০ সালের প্রায় সারা বছরই আমার কেটেছে অসুস্থতায়। এ কারণে একুশের বইমেলাতেও যেতে পারিনি। এ বছর আসলে আমি নতুন কিছু লিখতে পারিনি।

তবে ২০১০ সালে আমার বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন’। এ বইটি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের  দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। এর মধ্যে ৫টি প্রবন্ধ আছে। প্রবন্ধগুলোতে প্রকৃতির সাথে জীবন ও সংস্কৃতির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। বইটি বিভিন্ন জায়গায় সমাদৃত হয়েছে।

আরেকটি বই হচ্ছে ‘সত্য যে কঠিন’। সেটি সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পরবর্তী বিশ্ব সম্পর্কে লেখা। অপর একটি বই রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কিত প্রবন্ধ ‘আমার রবীন্দ্র অবলোকন’।

২০১১-এর বইমেলায় আমার নতুন লেখা নিয়ে কোনো বই বেরুবে না। তবে বিভিন্ন সময় লেখা অগ্রন্থিত প্রবন্ধ নিয়ে চারটি বই বেরুবে। এগুলো হলো : ভাবনার মুক্ত বাতায়ন, বিনষ্ট রাজনীতি ও সংস্কৃতি, বরণীয় জনের স্মৃতি কৃতী নীতি এবং বাংলা কবিতার মূলধারা ও নজরুল প্রসঙ্গ। এছাড়া বেরুবে যতীন সরকারের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ও যতীন সরকারের রচনা সমগ্র-দ্বিতীয় খ-।

২০১০ সালে অসুস্থতার কারণে খুব একটা পড়তে ও লিখতে পারিনি। ওই বছরে মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম ‘অক্ষয়কুমার দত্ত ঊনিশ শতকের বাংলা’  বইটি আমার ভালো লেগেছে।

আমি আমার লেখা নিয়ে এ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারিনি : হায়াৎ মামুদ

আমি তো আসলে নিজেকে লেখক মনে করি না। আমি আমার লেখা নিয়ে এ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারিনি। এরপরও আমি লিখি যেহেতু লেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারি না। ওই হিসেবে ২০১০ সালে যা লিখেছি তা নিয়ে আসলে আমি মোটেও সন্তুষ্ট না। আমি মনে করি কোন লেখা থাকবে আর থাকবে না এটার শেষ মূল্যায়ন করবে পাঠকরাই।

২০১০ সালে আমার বেশ কিছু বই বের হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু বই নতুন, কিছু ছিল পুনর্মুদ্রিত। তার মধ্যে রয়েছে আমার সম্পাদিত রুশ উপন্যাসের বই ‘রুশ উপন্যাস সঞ্চয়ন’, ‘নোবেল ভাষণের অনুবাদের দ্বিতীয় খ-’, মাহমুদ দারবিশের কবিতার অনুবাদ ‘নির্বাচিত মাহমুদ দারবিশ’। এছাড়া বের হয়েছে ছোটদের জন্য ‘শিশুকিশোর রচনা সমগ্র-১’, প্রবন্ধের বই ‘বাঙালির বাংলা ভাষা ইদানীং’।

২০১০ সালে বিভিন্ন সাময়িকীতে অনেক লেখাই চোখে পড়েছে। কিন্তু খুব বেশি আসলে পড়া হয়নি। আমার মনে হয়েছে এ সময় লেখা হচ্ছে প্রচুর। অনেক নতুন নতুন লেখক লিখছেন বিভিন্ন বিষয়ে। আমার ধারণা এদের হাত থেকেই একসময় ভালো কিছু লেখা, ভালো কিছু বই বের হয়ে আসবে।

নতুন কাব্য লিখতে চেয়েছি আমি : মুহম্মদ নূরুল হুদা

২০১০ সালে বের হয় আমার কবিতার বই ‘ঝাউদরিয়ার ডানা’ ও  শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা একটি কবিতার সংকলন।

‘ঝাউদরিয়ার ডানা’য় বিষয় ও শৈলীতে আমি আমার কবিতাতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। এখানে নতুন উৎপ্রেক্ষা, নতুন উপমা ব্যবহার করতে চেয়েছি। পাহাড়-সমুদ্রের জীবনকে নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। মানুষ যে বেঁচে আছে, মানুষের বাঁচার জন্য যে সংগ্রাম, আমি এই অভ্যাসটিকে অন্যভাবে দেখাতে চেয়েছি। আমি দেখাতে চেয়েছি দরিয়া মানুষকে শেষ পর্যন্ত খেতে পারে না।

আমি এ বইটিতে ‘দরিয়া পুরাণ’ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছি। বঙ্গোপসাগরের পাশে জলসাগর আর বৃক্ষসাগরের প্যারালাল অবস্থান।   আমি এ নিয়ে সমান্তরাল উপমা তৈরি করেছি এখানে।   আমার এ লেখায় ওয়েস্টল্যান্ডের কথা এসেছে। লোকপুরাণ, আদিবাসী পুরাণ এসেছে। যেভাবে হোক নতুন কাব্য লিখতে চেয়েছি আমি।

২০১১ সালে আমার একটি নতুন কবিতার বই বেরুবে। ২০১০ সালে আমার শতবর্ষী পিতা চলে গেছেন। এত দিন তিনি এ পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন, এখানে তাকেই আমি নায়ক করেছি। আমার বাবা মৎস্য শিকারের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। তিনি একজন মৎস্যশিকারি ছিলেন। আমি তার ভেতর এক নায়কের প্রতিচ্ছবি দিয়েছি। আমার এ কবিতার বইটির নাম ‘নুন দরিয়ার ঘ্রাণ’।

আমার পিতাকে দেখেছি দরিয়ার ঘ্রাণ না পেলে তিনি স্বস্তি পেতেন না। আর তাকে মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গার মধ্যে শুইয়ে দিয়ে এসেছি। আমার মনে হয়, তিনি তো এ জগত ছেড়ে চলে যেতে চাননি, তাই তিনি বংশপরম্পরায় পরবর্তী প্রজন্মের মধ্য দিয়ে থেকে যাবেন।  

২০১০ সালে অনেকে লেখাই বিভিন্ন জায়গায় পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে মিডিয়া বেড়েছে অনেক, ফলে আমাদের লেখকদের ওপর অনেক চাপ। তাদের ঈদসংখ্যাগুলোতে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যরে বিবেচনা করে লিখতে হয়। এ উপন্যাসগুলো সম্ভাবনাময়, যদি পরে এগুলোকে আরও বাড়ানো হয় তবে হয়তো বড় মাপের কিছু হলেও হতে পারে।

কবিতার ক্ষেত্রে সৈয়দ শামসুল হকের কিছু খ- কবিতা ভালো লেগেছে। নতুন কবিরা নব্বই-শূন্য বা দ্বিতীয় দশকের ভিতরে আমি একটু অন্য রকমের কিছু করা চেষ্টা দেখেছি। ষাটের কবিরা এখনো অ্যাকটিভ। সত্তুরের দশকে কামাল চৌধুরী অন্য ধরনের কবিতা লিখছেন। এছাড়া আবু হাসান শাহরিয়ার, আসাদ মান্নানের লেখাও ভালো লেগেছে।

২০১০ সালে ভালো কাজই হয়েছে : আনোয়ারা সৈয়দ হক

২০১০ সালে সারা বছর ধরেই আমি লিখেছি প্রচুর। নিজের লেখা নিয়ে তো সব সময়ই মূল্যায়ন হয় ভালো। একজন লেখক যখন লেখেন তখন ভালো কিছু লেখা হচ্ছে ভেবেই লেখেন। তা না হলে লেখা সম্ভব হতো না। নতুন কিছু লেখার স্বভাবতই এক ধরনের আনন্দ থাকে।

২০১০ সালে বের হয়েছিল আমার উপন্যাস সমগ্রের দ্বিতীয় খ-। এতে ছিল ৫টি উপন্যাস। এছাড়া বের হয়েছিল একটি ছোটগল্পের সংকলন, উপন্যাস ‘বাড়ি ও বনিতা’, বাচ্চাদের জন্য ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধা দাদা ভাই’ ও ‘গল্প সমগ্র’।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যখন কেউ গল্পকার বা ঔপন্যাসিক হন  তখন কিন্তু দৈনন্দিন দুঃখ-কষ্টও তার লেখায় উঠে আসে। সামাজিক ব্যভিচারের মধ্য দিয়েও একজন লেখককে লেখা তুলে নিতে হয়। এই যে কষ্টের ভেতর থেকেও একজন লেখক লেখার উপকরণ খুঁজে বেড়ান বিষয়টা অদ্ভুত।

২০১০ সালে সারা বছরই আমাদের সাহিত্যে বিভিন্ন ধরনের লেখা হয়েছে,  গল্প-কবিতা-উপন্যাস-ছোটদের সাহিত্যসহ নানা বিষয়। প্রত্যেক লেখক নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজের মতো করে কাজ করেছেন। আমার মনে হয় ২০১০ সালে ভালো কাজই হয়েছে। অবশ্য খুব ভালো হয়েছে কিনা এটা বলতে পারব না, এটা মূল্যায়ন করবে তো মহাকাল। যেমনÑ ‘বাড়ি ও বনিতা’ উপন্যাসটি আমি লিখেছি অনেক দিন ধরে একটু একটু করে। লেখাটা আমার মনে হয় ভালোই হয়েছে। কিন্তু এটা আসলে কেমন হয়েছে তা বোঝা যাবে আরও অনেক পরে। মূল্যায়ন তো তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব না। ২০১০ সালে আসলে কী ধরনের কাজ হয়েছে, কোনো কালজয়ী কাজ হয়েছে কিনা এটা কয়েক বছর পরে বোঝা যাবে।

আমার কাজ লেখা। আমি লিখছি এবং লিখছি। কেউ প্রশংসা করলেও আমি লিখব, না করলেও লিখব।

প্রবন্ধের ক্ষেত্রে খুবই শূন্যতা বিরাজ করছে : হরিপদ দত্ত

২০১০ সালে সারা বছর ধরেই ‘চিম্বুক পাহাড়ের জাতক’-এর শেষ পর্ব লিখেছি। এ উপন্যাস লিখতে আমাকে যে কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে তার তুলনা হয় না। এ উপন্যাসের শেষ পর্বে আমি চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে চে গুয়েভারাকে কাল্পনিকভাবে এনেছি। চে গুয়েভারার মুখ দিয়ে বলিয়েছি, মানুষ যত ভূমিকে খণ্ড-বিখণ্ড করবে তার চিন্তা-চেতনা তত খণ্ড হয়ে যাবে। মানুষকে আসলে ভূমিকে অখ- রেখেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে।

এ উপন্যাসে এমন চরিত্র নিয়ে কাজ করেছি যারা মাতৃভূমির জন্য সংগ্রাম করে। এখানে সমতল ভূমির আদিবাসীদের যে পাহাড়ে আনা হলো, কেন আনা হলো তা দেখিয়েছি। আসলে এটা ব্রিটিশরা করেছে, পাকিস্তানি আমলে ওই সময়ের সরকার করেছে, তারা আদিবাসীদের সচেতনভাবে আলাদা  করেছে। তাদের  সংখ্যাগরিষ্ঠ করে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আমি বলতে চেয়েছি, ভবিষ্যতে এরা যাতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে সমাজ গড়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য মূল জনগোষ্ঠী থেকে  বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তাদেরকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়েছে বিপ্লবের ভয়ে। সেকুলার আদিবাসী একত্র হয়ে আমাদের চলতি রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ ভাগ নয়, আমি ভূমিকে খণ্ড-বিখণ্ড করার বিপক্ষে।

উপন্যাসে চে গুয়োভারাকে এনেছি মানসিক ভারসাম্যহীন এক চরিত্রের কল্পনার মধ্য দিয়ে। যে চরিত্র চে গুয়েভারা-সংক্রান্ত বিভিন্ন বই পড়ে। সে বিপ্লবের স্বপ্ন মনের মধ্যে লালন করে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে চে-কে দেখে । চে তার সাথে কথা বলে, চে তাকে দেখায় তার বুকে যে নয়টি গুলি করা হয়েছে তা। চে বলে ‘বিপ্লব করতে গিয়ে আমি বিশ্বাসঘাতকদের হাতে ধরা পড়েছিলাম’। এ উপন্যাসে আমার নায়কের মৃত্যুও চে-র মতো।

২০১০ সালে আমি চার-পাঁচটা ভিন্ন রকমের মুক্তিযুদ্ধের গল্প লিখেছি। এ গল্পে আমি আমার চিন্তা ও সময়টাকে ধরে রাখতে চেয়েছি। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়েছিল আমার ‘চিম্বুক পাহাড়ের জাতক’ উপন্যাসের তৃতীয় খ-।

আমাকে যদি ২০১০ সালের আমাদের টোটাল সাহিত্য সম্পর্কে মূল্যায়ন করত বলা হয়, তাহলে আমার পক্ষে পজিটিভ কথা বলা সম্ভব না। আমি সাধারণত ঈদসংখ্যার গল্প-উপন্যাস বা প্রবন্ধগুলি পড়ি। আমার কাছে মনে হয়েছে কথাসাহিত্য পতনের দিকে যাচ্ছে। কথাসাহিত্যে ওইভাবে উজ্জ্বল দিক আমার চোখে পড়েনি। কেউ কেউ হয়তো ভালো লেখার চেষ্টা করেছে। জাকির তালুকদারের ‘মুসলমান মঙ্গল’ নামে একটি উপন্যাসে ভালো কিছু করার চেষ্টা আমি দেখেছি।   জাকির তালুকদার আরও নতুন একটি উপন্যাস লিখছে বাংলানিউজে, আমার ধারণা বইটা ভালো হচ্ছে।

তরুণদের কবিতা, এ সময় আমার খুব ভালো লাগে। পত্রিকাগুলোতে কেউ কেউ মাঝেমধ্যে ভালো ভালো কবিতা লেখেন। ওরা যদি হারিয়ে না যায় কাব্যের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রবন্ধের ক্ষেত্রে খুবই শূন্যতা বিরাজ করছে। আনু মুহম্মদের অর্থনীতি ও রাজনীতিবিষয়ক বেশ কিছু প্রবন্ধ আমার ভালো লেগেছে। তবে আমার মনে হয় এখানে যাদের বলা হয় ক্রিয়েটিভ লেখক তারা আসলে ক্রিয়েটিভ না।

কবিতা লেখার ব্যাপারে যেন একটি জোয়ার এসে  গেছে : আলতাফ হোসেন

আমার লেখালেখি বিষয়ে আমার মূল্যায়ন? দেখুন, অল্পবয়সে হঠাৎই একদিন লিখতে শুরু করেছিলাম এটা ঠিক, তারপর থেকে আজ অনেক দিন হলো লিখছি, কমবেশি লিখছি এটাও ঠিক, কিন্তু কেন লিখছি সে বিষয়েও যদি আজ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি বলতে পারব না। আমি লিখতে ভালোবাসি, হয়তো এমনও বলতে পারি যে আমি লেখা ছেড়ে থাকতে পারব না, বলতে পারি যে আপন খেয়ালখুশিতে লিখি, কিন্তু নিজের লেখার মূল্যায়নের কথা যদি বলেন তাহলে আমাকে মাপ করতে হবে। আমি পারব না। তবে একটা কথা প্রায়ই আমার মনে হয়, মনে হয় যে, লিখতে পারিনি কিছু, এখন থেকে চেষ্টা করে যাব লেখা বলতে যা বুঝি সে রকম কিছু লেখার।

২০১০ সালে লেখা খুব কম হয়নি, আবার যতটা লিখতে চেয়েছি তত লিখতে পারিনি, এটাও ঠিক। আরও যে কত নেশা! বই পড়ার, ছবি দেখার, গান শোনার, ক্রিকেট খেলা দেখার, সংসারের কাজের ব্যাপারটাও আছে। কবিতাই বেশি লেখা হয়েছে। বিভিন্ন কাগজে সেসব ছাপা হয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি বইমেলায় আমার একটি গদ্যের বই বেরিয়েছে। নাম, ‘যুবক রবি অন্য রবি ছিন্নপত্রে’।

বিভিন্ন সাময়িকীর সাহিত্যের পাতায় চোখ পড়ে বৈকি, লেখা পড়ি অনেকের, কিন্তু সেসবের মূল্যায়ন কি দু-এক কথায় সম্ভব? আমার খুব ভালো লাগে দেখে যে সাহিত্যচর্চার ব্যাপারে, বিশেষত কবিতা লেখার ব্যাপারে যেন একটি জোয়ার এসে  গেছে, এটা হয়েছে, আমার ধারণায় বিভিন্ন ব্লগ আর বিশেষ করে ফেসবুক-এর মতো একটি চর্চার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে। অনেকে লিখছেন আর সঙ্গে সঙ্গে মতামতও পাচ্ছেন, তাতে উৎসাহ বাড়ছে। ফেসবুকে এখন বাংলা কবিতার ছড়াছড়ি। অনেক ভালো কবিতা পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার ওখানে। আমাদের দেশের অনেক তরুণ কবির লেখায় পরীক্ষানিরীক্ষা দেখছি, নতুনত্বের আভাস দেখছি। ভালো লাগছে।
আপনাদের বাংলানিউজেও অনেক লেখালেখি দেখছি। ভালো লাগছে এই উৎসাহ দেবার প্রবণতা দেখে।

মিডিয়া নেতিবাচক সাহিত্যকে উৎসাহিত করে : মঈনুল আহসান সাবের

২০১০ সালের আগ থেকে ৩-৪ বছর আমি কিছুই লিখিনি। অভিমান  করে বা মনমতো স্বীকৃতি পাইনি বলে এভাবে লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম লেখালেখি বন্ধ করে দিলে তো আমার নিজেরই ক্ষতি। আমি লিখতে পারি, আমার লেখার ক্ষমতা আছে আমি কেন লিখব না।

২০১০ সালে আমার নতুন কোনো বই বের হয়নি। পুরনো কিছু বইই পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। তবে এ বছর বেশ কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০১১ সালটা পুরোপুরি লিখব। ১-২টা মেজর উপন্যাস লিখব। তাছাড়া আমার সবচেয়ে প্রিয় যে জায়গা তা হচ্ছে ছোটগল্প। আমি বেশ কিছু ছোটগল্প লিখব। বয়স হয়েছে। এখন মনে হয়, সময় নষ্ট করার মতো যথেষ্ট সময় নেই আমার হাতে। যে সময়টুকু পাই তা কাজে লাগাতে হবে।

সারা বছরের আমাদের সমগ্র সাহিত্যকে মূল্যায়ন করত বললে বলব, বেশ কিছু সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের কারণে দেশের একাংশের সাহিত্য একেবারেই পচে গেছে। আমাদের একাংশ সাহিত্য একেবারেই যাচ্ছেতাই। এর জন্য অবশ্য মিডিয়াগুলোরও দোষ কম না। মিডিয়াগুলো বলে আজকের মেলায় এ বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু যেগুলো বেশি বিক্রি হয়নি সেগুলির তো কোনো খবর থাকে না। সেগুলি ভালো কি মন্দ এ বিষয়য়ে কোনো খবর থাকে না। আমার মনে হয় মিডিয়া নেতিবাচক সাহিত্যকে উৎসাহিত করে।

আমি সাধারণত বছরে একটার বেশি উপন্যাস লিখতে পারি না : নাসরীন জাহান

২০১০ সালে ‘সেই সাপ জ্যান্ত’ নামে আমার একটা উপন্যাস বেরিয়েছিল। বিশেষ কারণে আমি খুব আবেগপ্রবণ ছিলাম উপন্যাসটি নিয়ে। উপন্যাসটির মূল বিষয়বস্তু ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় ও যুদ্ধপর্ব নিয়ে। এটা লিখতে গিয়ে ইতিহাসকে আমি একটু কম জায়গা দিয়েছি। এখানে আমি তুলে ধরতে চেয়েছি সেই সময় আর এই সময়ের বাস্তবতা। এ উপন্যাসে আমি নাসিম ও নাদিয়া নামে দুই চরিত্রের ১৯৭১ সালের ৯ মাস ও এ সময়ের ৯ মাসের জীবনযাপন তুলে ধরেছি।

আমি সাধারণত বছরে একটার বেশি উপন্যাস লিখতে পারি না। ২০১০ সালে আমার একটা গল্পগ্রন্থও বের হয়। নাম ‘ছেলেটি যে মেয়ে, মেয়েটি তা জনত না’। এই গল্পগ্রন্থটির জন্য আমি ‘আনন্দ আলো’ পুরস্কার পেয়েছি।

২০১০ সালে মেলাকে মাথায় রেখে লিখতে গিয়ে আমি এক ধরনের চাপ অনুভব করি। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেলাকেন্দ্রিক বই করার জন্য যদি চাপ অনুভব করি, তবে আমি ওই সময় লিখব না। এ বছর মেলায় আমার কোনো নতুন বই আসবে না।

মানুষ মেলায় ঢুকলেই প্রশ্ন নতুন কোনো বই এসেছে কিনা। বই তো কোনো পোশাক না যে, পরলেই পুরোনো হয়ে যাবে। আমার কথা হলো,  আমার যে বইটি একজন পাঠক পড়েননি, ওইটাই ওনার জন্য নতুন।   বই কেউ না পড়তেই পুরোনো হয়ে যাবে এটা কোনো কথা না।

বেশি ব্যস্ত ছিলাম প্রবন্ধ ও গবেষণামূলক কাজ নিয়েই : আকিমুন রহমান

২০১০ সালে আমার নতুন কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। পুরনো কয়েকটি বই পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’। এটি কলকাতা বইমেলায় পুনর্মুদ্রিত হয়।

তবে ২০১০ সালে আমি বেশ কিছু গল্প লিখেছি। বেশি ব্যস্ত ছিলাম প্রবন্ধ ও গবেষণামূলক কাজ নিয়েই। আমি আমার  লেখায় ‘পুরাণগুলোতে’ পুরুষের যে ভাবমূর্তি বা ধর্ম শ্লোকে তারা যা রচনা করেছেন, তা রচনার সময় তাদের যে মানসিক অবস্থা ছিল তা-ই বিশ্লেষণ করতে চেয়েছি। এই নিয়ে ‘পৌরাণিক পুরুষ’ নামে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখছি। এটা বের হবে কলকাতা বইমেলায়। এটা ছাড়াও সারা বছর ধরে একটি উপন্যাস লিখেছি। উপন্যাসটির নাম এখনও ঠিক হয়নি। বইটি এবার একুশের বইমেলায় বের হবে।

আমি তো সাহিত্যের ছাত্রী। আমার পিএইচডি আধুনিক সাহিত্য নিয়ে হলেও, আমার মনোযোগ মধ্যযুগের সাহিত্যের প্রতি। আমি সম্প্রতি ‘প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতি’ শিরোনামে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখছি। এটা লিখতে গিয়ে বেশ আনন্দ পেয়েছি।

২০১০ সালের বিভিন্ন সাময়িকী আর সাহিত্যপত্রিকাগুলোতে আমি বিশ্বসাহিত্যের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখেছি। এটা আমার কাছে চমৎকার প্রবণতা মনে হয়েছে। কয়েকটি ছোটকাগজ ঢাকার বাইরে থেকে বের হচ্ছে, তাদের স্বপ্ন ভিন্ন, এটাও চমৎকার। তবে বিভিন্ন সাময়িকীগুলোতে যেসব কবিতা দেখি এগুলো পড়ে অসার মনে হয়েছে । আমি এগুলোতে ধ্যানমগ্নতা এবং বাক্যসুষমা কোনো কিছুই খুঁজে পাইনি। আর গদ্যকে মনে হয়েছে নীরক্ত।

বাংলাদেশ সময় ১৯৩০, জানুয়ারি ১ , ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad