বিখ্যাত ‘টাইম’ সাময়িকী তাদের বিচারে গত বছরের দশটি সেরা ফিকশন বইয়ের তালিকা করেছে। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য টাইম অবলম্বনে লেখাটি তৈরি করেছেন আহমেদ জুয়েল
এক. ফ্রিডম : জনাথন ফ্রাঞ্জেন
লেখক জনাথন আমেরিকান একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কয়েকজন সদস্যের গল্প এঁকেছেন এ উপন্যাসে।
দুই. অ্যা ভিজিট ফ্রম দ্য গুন স্কোয়াড : জেনিফার এগান
গঠনগত দিক থেকে অসাধারণ আর বছরের সবচেয়ে মজার বই। বছরের সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী বই বললেও হয়তো ভুল হবে না। লেখক যেন সত্যিকার অর্থেই জাদুর স্পর্শ লাগিয়েছেন তার কাহিনী বর্ণনায়। ছোট ছোট গল্পের মাধ্যমে কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও এটাকে হাইব্রিড নভেল বলে উল্লেখ করেছেন কোনো কোনো সমালোচক। বেন্নি নামের একজন সফল সঙ্গীত প্রযোজক এবং তার সহকারী শাসার জটিল সম্পর্কের একটা সুন্দর ও ঋদ্ধ ছবি উঠে এসেছে কাহিনীর নান্দনিকতায়। জেনিফার এগান আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার।
তিন. স্কিপ্পি ডাইস : পল মুরে
ডাবলিনের অভিজাত সিব্রুক কলেজের যে কিশোরদের নিয়ে এ বইয়ের কাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। তারা অন্য আবাসিক স্কুলের কিশোরদের মতো চৌকস নয়। তারা খুবই সাধারণ ১৪ বছর বয়সের কিশোর। এদের মধ্যে স্কিপ্পি সবচেয়ে সুন্দর আর শান্ত। লেখক কাহিনীর শুরুতেই এই কিশোরের মৃত্যু দেখিয়েছেন। এর মাধ্যমেই তিনি উপন্যাসে যোগ করেছেন বিশ্বস্ততা আর যুক্তিতর্কের বিষয়। এরপর ওই কিশোরদের যৌবনের পদার্পণের সময় আর তাদের জীবনের সংকটের বিষয় এঁকেছেন নিপুণ হাতে। সমালোচকদের চোখে বইটি বছরের সবচেয়ে মর্মভেদী বই। পল মুরে আইরিশ ঔপন্যাসিক।
চার. দ্য থাউজেন্ডস অটামস অব জ্যাকব ডি জোয়েট : ডেভিড মিশেল
উপন্যাসটির কাহিনী কিছুটা বাস্তবনির্ভর। আঠারো শতকের শেষের দিকে জাপানে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ কোম্পানিতে চাকরি করতেন তরুণ ডি জোয়েট। তিনি ব্যবসার মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাইলেন। কিন্তু ঠিক সেই সময়ই জাপানে পশ্চিমাদের ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হলো। এ সময় ডি জোয়েট ও তার সহকর্মীরা নাগাসাকি উপসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপে নির্বাসিত হলেন। ওই দ্বীপেই জোয়েট এক কুচক্রী ডিউককে ক্রুসবিদ্ধ করে হত্যা করেন। এরপর প্রেমে পড়েন এক রহস্যময় বিকৃত চেহার চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্রীর। ডেভিড মিশেল ইংরেজ ঔপন্যাসিক।
পাঁচ. লর্ড অব মিসরুল : জেইমি গর্ডন
বইটির বিষয় ঘোড়দৌড়। পশ্চিম ভার্জিনিয়ার রেসট্র্যাক। সেখানে কোনো সুপেয় পানীয় নেই। সবাই ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। কেউ ভাগ্যগুণে বেঁচে যায়, কেউ পথের মধ্যেই ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যায়। খাদ্যবিষয়ক লেখকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে একজন নারীর ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় নামা এবং বোকার মতো বিপজ্জনক জায়গায় নিজের ওপর চাপ নেওয়া আর একজন স্বেচ্ছাচারী মানুষ ও তার কান্ত, দৌড়াতে-অক্ষম ঘোড়ার প্রতি অনুরাগের ছবি এঁকেছেন লেখক। বইটি ২০১০ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। জেইমি গর্ডন আমেরিকান লেখক।
ছয়. উইলসন : ডেনিয়েল কোয়েস
উইলসন একজন অকর্মা মধ্যবয়সী মানুষ। কারো সঙ্গে তার আবেগী কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি সবসময় বলেন, ‘মানসিকভাবে সুস্থ সব মানুষই সুস্থ থাকতে চায় কিন্তু কেউ তা বলতে চায় না’। বইটি পড়ে মনে হবে চরিত্র কতটা অপ্রীতিকর, কতটা তিক্ত ও রাগান্বিত, নীচ আর অমার্জিত হতে পারে। এই চরিত্র নিয়েই ডেনিয়েল লিখেছেন তার এই গ্রাফিক উপন্যাস। ডেনিয়েল কোয়েস আমেরিকান লেখক, চিত্রনাট্যকার, কার্টুনিস্ট এবং বিকল্পধারার কমিক লেখক।
সাত. ম্যাটারহর্ন : কার্ল মারলানটিস
ভিয়েতনাম যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসের কাহিনী। এতে বর্ণনা করা হয়েছে যুদ্ধে মেলাস নামের একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের গল্প। সন্ত্রাস সম্পর্কে তার শিক্ষা এবং কষ্টের অভিজ্ঞতা। যুদ্ধ ত্যাগ করে আর ফিরে না আসার মানসে সঙ্গীদের নিয়ে তার পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে চলে যাওয়ার কাহিনীই স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় অসাধারণভাবে চিত্রিত করেছেন লেখক। কার্ল মারলানটিস আমেরিকান লেখক।
আট. হাউ টু লিভ সেফলি ইন এ সায়েন্স ফিকশনাল ইউনিভার্স : চার্লস য়ু
এটি একটি কল্পবিজ্ঞান। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের ফলে একজন মানুষ মাইনর ইউনিভার্স ৩১ নামে একটি ছোট্ট পৃথিবীতে বাস করেন। তার সঙ্গে আছে একটি কুকুর ও একটি কম্পিউটার। তিনি টাইম মেশিনের মেরামতকারী। পৃথিবীর মানুষের টাইম মেশিন মেরামত করে দেন। প্রযুক্তির এই কল্পলোকের খেলায় খেলায় লেখক সাজিয়েছেন তার উপন্যাসের কাহিনী। চার্লস য়ু আমেরিকান লেখক।
নয়. দ্য প্যাসেজ : জাস্টিন ক্রোনিন
আপনি কি মনে করেন ভাম্পায়ার সম্পর্কে অনেক জানেন? আসলে কিছুই জানেন না। ভাম্পায়ার নিয়ে অনেক লেখকই লিখেছেন। কিন্তু ক্রোনিন নতুন করে উপস্থাপন করেছেন ভাম্পায়ার চরিত্র। আর এতে লাগিয়েছেন মহাকাব্যিক আবেশ। বলিভিয়ার জঙ্গলে একটি ভাইরাস ছাড়া পায়, সেনাবাহিনী এটাকে গুলি করে মারার চেষ্টা করে কিন্তু কোনোকিছু বোঝার আগেই এটা বন্য হয়ে ওঠে, পুরো আমেরিকায় এ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। লেখকের নতুন এই ভাম্পায়ার নিষ্ঠুর, ভূ-চর এবং অধিক শক্তিশালী। জাস্টিন ক্রোনিন আমেরিকান ঔপন্যাসিক।
দশ. ফেইথফুল প্লেস : টানা ফ্রেঞ্চ
১৯ বছর বয়সে ফ্রাঙ্ক ম্যাকি পরিকল্পনা করেন তার বান্ধবী রোজির সঙ্গে লন্ডনে গিয়ে বাস করবেন। কারণ তারা বাস করেন ডাবলিনের এক ‘বিশ্বস্ত জায়গায়’। সেখানে অসংখ্য প্রতিবেশী, যাদের নেই কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। যে রাতে তারা গোপনে লন্ডনের পথে পা বাড়াবেন সেই রাতে ফ্রাঙ্ক প্রস্তুতি নিয়ে বের হলেও বান্ধবী রোজির দেখা মিলল না। ফ্রাঙ্ক একাই বের হলেন এবং কালক্রমে একজন গোয়েন্দা হয়ে উঠলেন। রোজিকেও পরে আর দেখা যায়নি। দুই দশক পর ওই ‘বিশ্বস্ত এলাকা’র একটি ভাঙা বাড়ির ফায়ার প্লেসে পাওয়া গেল রোজির সুটকেস। এ নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গেল। গোয়েন্দা হিসেবে ফ্রাঙ্ক সেই সুটকেস রহস্যের কিনারা করলেন। এরপর ফ্রাঙ্ক ফিরে এলেন সেই বিশ্বস্ত এলাকায়। এরপর শুধুই স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো। টানা ফ্রেঞ্চ আইরিশ ঔপন্যাসিক ও অভিনেত্রী।
বাংলাদেশ সময় ১৯১১, জানুয়ারি ০৪, ২০১১