রাধা-কৃষ্ণের দেশে প্রেমের আখ্যান-উপাখ্যানের কোনো কমতি নেই। তাদের দেশেই আছে প্রেমের তাজমহল।
‘দুর্জনেরা যাই বলুক না কেন, নেহেরু-এডুইনার ভেতর প্রেম ছিল, তবে তা শারীরিক ছিল বলে কোনও সূত্র এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি,’ মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ লেখক ও গবেষক আলেক্স ফন টুনজেলমান।
বহুল প্রচারিত ‘ইন্ডিয়ান সামার : দ্য সিকরেট হিস্ট্রি অব দ্য অ্যান্ড অব অ্যান এম্পায়ার’-এর এই লেখক গেল সপ্তাহে ভারতের জয়পুরে যোগ দিয়েছিলেন এক সাহিত্যসভায়। এ সময় তিনি কথা বলেছিলেন সংবাদ সংস্থা আইএএনএসের সাথে।
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ও ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী এডুইনার প্রেমকাহিনী গত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ‘জীবন্ত’ হয়ে আছে গবেষকদের কাজে।
যদিও নতুন কথা নয়, তবুও টুনজেলমান জোর দিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই নেহেরু-এডুইনার প্রেম ছিল আধ্যাত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক। তিরিশোর্ধ্ব এই লেখক তাদের শারীরিক-সম্পর্ক নিয়ে তেমন কোনো তথ্যই জোগাড় করতে পারেননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, ‘এটা সত্য যে, তাদের ভেতর সম্পর্কটা ছিল বেশ রোমান্টিক। ’
১৯২০-এর দশকের শুরুতেই এডুইনা-মাউন্টব্যাটেনের সংসারে চলে এসেছিল দুই কন্যা। এই দম্পতির বিয়ের প্রথম দিকের প্রেমে যে জোয়ার ছিল, নিঃসন্দেহে ততদিনে লেগেছিল খানিক ভাটার টান। টুনজেলমানের ভাষায়, ‘বলা যায়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা তখন খুব একটা জমছিল না। দাম্পত্যে দেখা দিয়েছিল রোমান্টিকতার অভাব। ’
লেখকের মতে, মাউন্টব্যাটেন ছিলেন বেশ উদারমনা মানুষ। এডুইনার আরো প্রেম ছিল। আর সেগুলোর মতোই নেহেরুর সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্কটিকে তিনি স্বাভাবিক চোখেই দেখেছিলেন। ‘শুধু তাই নয়, এডুইনার আর সব প্রেমের মতো মাউন্টব্যাটেন এই প্রেমকে সমর্থনও দিয়েছিলেন। ’
কেননা, এডুইনার আর সব প্রেমের মতো নেহেরুর সঙ্গে প্রেমটি মাউন্টব্যাটেন পরিবারের জন্য ক্ষতিকর ছিল না। এই ভদ্রমহিলা এর আগে বেশ কয়েকবার বিবাহ-বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন স্বামীর কাছে। তবে এই প্রেমে তেমন কোনো ‘পাগলামি’ ছিল না। মাউন্টব্যাটেনের সংসারেও সৃষ্টি হয়নি কোনো অশান্তি।
টুনজেলমানের দৃষ্টিতে, প্রেমটা আসলেই খুব মজার ছিল। ‘এই প্রেমের সম্পর্কটি সমাজের দৃষ্টিতে অপ্রচলিত হলেও বাস্তবে তিনটি মানুষকেই সুখে রেখেছিল। কী আর করা, জগতে কতরকমের মানুষই না থাকে!’
২০০৩ সালের দিকে টুনজেলমান কাজ করতেন সাংবাদিক জেরেমি প্যাক্সম্যানের সঙ্গে একজন গবেষক হিসেবে। তখন প্যাক্সম্যান বই লিখছিলেন ব্রিটেনের রাজপরিবারের ওপর। এমনি এক সময়ে টুনজেলমানের চোখে পড়ে নেহেরু-এডুইনার ‘ঘটনাগুলো’। আগ্রহ জন্মে বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করার। সেইসব কাজের ফসল তার ‘ইন্ডিয়ান সামার..’। এই নন-ফিকশন বইটি নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে।
নেহেরু-এডুইনার গুটিকয়েক চিঠি পড়তে পেরেছিলেন টুনজেলমান। কিন্তু শত শত চিঠির ভা-ারটি এখনো সযতেœ আগলে রেখেছে ভারত সরকার। ‘আসলে এসব চিঠি প্রকাশ করা হলে অনেক সত্যই বেরিয়ে আসবে,’ আর সবার মতো টুনজেলমানেরও একই বিশ্বাস।
জিন্নাহ প্রসঙ্গ
টুনজেনমানের গবেষণায় দেখা গেছে, ‘গান্ধী-নেহেরুর মতো জিন্নাহ ভারত ভাগ চাননি। দেশভাগ এড়িয়ে যাওয়া যেত। ’
এই লেখক সম্প্রতি শেষ করেছেন তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘রেড হিট’। উপন্যাসটির বিষয় বেড়ে উঠেছে কিউবার মিসাইল সংকট নিয়ে।
বাংলাদেশ সময় ০০১০, জানুয়ারি ৩০, ২০১১