একবিংশ শতকে এসেও গবেষকদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ১৬ শতকের মোনালিসা শিল্পকর্মটির ভেতর লুকায়িত রহস্য নিয়ে। পপলার প্যানেলের ওপর আকাঁ এই তেলচিত্রটি নিয়ে বছর বছর কত না ‘কল্পকাহিনী’র জন্ম হয়।
কানাডার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কুইন্স ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এমেরিটাস রস কিলপ্যাট্রিক সম্প্রতি ঘোষণা দেন, রোমান কবি হোরেস এবং ফোরেন্সের কবি পেত্রার্কের কবিতায় অনুপ্রাণিত হয়ে দা ভিঞ্চি তাঁর মোনালিসায় বিভিন্ন কল্পচিত্র ব্যবহার করেছিলেন। খবরটি ছেপেছে ইতালীয় জার্নাল মেডিসিয়া।
সাহিত্য থেকে কল্পচিত্র নিয়ে তা শিল্পকর্মে ব্যবহার করার একটা রীতি ছিল রেনেসাঁযুগের চিত্রশিল্পীদের ভেতর। কিলপ্যাট্রিক মনে করেন, ‘মোনালিসা এই ধারারই একটি শিল্পকর্ম। ’ তার প্রশ্ন, কেন দা ভিঞ্চি একজন অপরূপা নারীকে বেলকনিতে বসিয়ে তার ছবি আকঁলেন? আর পটভূমিতে রাখলেন অন্য এক জগৎ, যে জগতে রাখলেন অতীতের বিধ্বস্ততা, নগরের ধ্বংসস্তূপ?
তাই কিলপ্যাট্রিকের প্রশ্ন, ‘আসলে শিল্পী কী বোঝাতে চেয়েছেন?’ তার বিশ্বাস, ‘দা ভিঞ্চি পরোক্ষভাবে হোরেসের ‘ইন্তেগার ভিতা’ নামক গাঁথা এবং পেত্রার্কের দুটি সনেট থেকে নিয়েছেন কল্পচিত্রগুলো। ’ তার মতে, পেত্রার্কের সনেট দুটি হলো : Canzoniere CXLV, CLIX ।
কবিতা তিনটিতে রয়েছে একজন তরুণীর মৃদু হাসিমাখা মুখের বর্ণনা। রয়েছে সবিনীত প্রেমের প্রকাশ। সেই নারীর জন্য পাহাড়, মরু চষে বেড়ানোর দীপ্ত বাসনাও রয়েছে বর্ণনায়। মোনালিসার অনেক দর্শকই চিত্রকর্মটিতে এসবের ছোঁয়া অনুভব করেন।
হোরেস ও পেত্রার্কের কবিতায় দৃশ্যপটের যে বর্ণনা রয়েছে তারই প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় মোনালিসার পটভূমিতে। সন্দেহ করার কোনও অবকাশ নেই যে, দা ভিঞ্চি তার ছবিটি আঁকার আগে এই দুই মহান কবির কবিতা পড়েননি।
হোরেস এবং পেত্রার্কের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে দা ভিঞ্চির রয়েছে দীর্ঘ পরিচয়। মোনালিসার পটভূমিতে যে ভাঙ্গা সেতুর চিত্রকল্প রয়েছে তা যে পেত্রার্কের দেশের বাড়ি আরেজ্জো শহরের, তা বহু আগেই চিহ্নিত করা হয়েছে।
দা ভিঞ্চি যে সময় মোনালিসা এঁকেছিলেন সে সময়ের সামাজিক জীবনে এই দুই মহান কবির সাহিত্য নিয়ে বেশ আলোচনা হতো। উদ্ধৃতি হিসেবেও ব্যবহার করা হতো বেশ।
বাংলাদেশ সময় ১৬৫৫, জানুয়ারি ৯, ২০১১