বাংলা কবিতায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কবি মহাদেব সাহা ‘সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০১০’ পেলেন। ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা একাডেমীর সেমিনার কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে বাঙালি মুসলমানের ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা সা’দত আলি আখন্দের নামে বাংলা একাডেমীর পরিচালনায় ১৯৯০ সালে ‘সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়।
মহাদেব সাহা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্মাতক (সম্মান) এবং স্মাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করেন। মহাদেব সাহার বইয়ের সংখ্যা ৯২টি।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে এই গৃহ এই সন্ন্যাস, মানব এসেছি কাছে, কী সুন্দর অন্ধ, তোমার পায়ের শব্দ, ধুলোমাটির মানুষ, ফুল কই শুধু অস্ত্রের উল্লাস, বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, আকাশের আদ্যোপান্ত, অন্তহীন নৃত্যের মহড়া ইত্যাদি ।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মহাদেব সাহা পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, মাহবুবউল্লাহ জেবুন্নিসা স্মৃতি পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, কবি সুশান্ত সাহিত্য পুরস্কার, কপোতাক্ষ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কারসহ বেশকিছু পুরস্কার ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার দেশের সাহিত্যাঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। বহুমাত্রিক বিবেচনায় কবি মহাদেব সাহাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হলো। আমি মনে করি, এই পুরস্কার বাংলা একাডেমীর গুরুত্ব ও মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।
সা’দত আলি আখন্দ কন্যা তাহমিনা হোসেন বলেন, জীবিকার্জনে সা’দত আলি আখন্দ পুলিশের চাকরিতে নিয়োজিত থাকলেও সাহিত্যের প্রতি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে সফলতায় রূপ দেওয়ায় বাংলা একাডেমীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সা’দত আলি আখন্দ ১৯৭১ সালের ১২ মে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুদিবসে এই পুরস্কার প্রদানের জন্য আমি বাংলা একাডেমীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে কবি মহাদেব সাহা বলেন, আজকের দিনটি আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের। আমি পুরস্কারের জন্য লিখি, মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসার জন্য লিখি। এটি আমার উপলব্ধি। কারণ পুরস্কার মানুষকে কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়, তার কর্মের মূল্য দেয় এবং তাকে ঋদ্ধ করে। তাই পুরস্কারও সার্থক কাজের একটি অংশ। তিনি বলেন, আমি আমার সব পুরস্কার এ দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করতে চাই। আজকের পুরস্কারটিও এ দেশের মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা দেশের মুক্তির জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের অমর স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করছি।
সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, কবি মানেই যোদ্ধা। তাঁরা সমাজের সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং প্রেমের জাদুস্পর্শের হাওয়ায় মানুষকে মোহিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কবিতাঙ্গনে কবি মহাদেব সাহার স্থান প্রথম সারিতে। তাঁর কবিতা স্নিদ্ধ ও নিম্নকণ্ঠের অথচ শক্তিশালী প্রতিবাদের ভাষায় সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ সময় ২২১০, জানুয়ারি ১১, ২০১০