ঢাকা: আমার পীরগঞ্জের মানুষ কমপ্লিকেটেড না। তারা অনেক সহজ সরল, চতুর না।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের জনগণ সম্পর্কে এ মূল্যায়ন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর। রোববার (৮ মে) বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন দক্ষিণবঙ্গের এই মেধাবী সন্তান।
পীরগঞ্জের মানুষের সরলতার ব্যাখ্যা দিয়ে স্পিকার বলেন, ধরেন কেউ অনুরোধ করলো একটা চাকরির জন্য। যদি বলি আমার হাতে নাই, তবে আমি চেষ্টা করবো। তাকে যদি বুঝিয়ে বলি, তাতেই তারা সন্তুষ্ট হন। চাকরি চেয়ে না পেলে সাধারণত কেউ ক্ষুব্ধ হন। আপনার সামনে একটা বলছে, পেছনে আরেকটা- পীরগঞ্জের মানুষ এমন না।
নতুন মানুষ হিসেবে তাকে পীরগঞ্জবাসী যেভাবে সাদরে গ্রহণ করেছে তাতে চমৎকৃত ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, এখন না হয় আমাকে কিছুটা জানার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু আমি যখন উপ-নির্বাচনের সময় মনোনয়ন নিয়ে গেলাম তখনতো তারা আমাকে জানতো না। নতুন একজন লোককে তখন গ্রহণ নাও করতে পারত। কিন্তু তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, পীরগঞ্জ উন্নয়নের দিক থেকে তুলনামূলক পিছিয়ে রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী রংপুর বিভাগ ঘোষণা করার পর পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সুষম উন্নয়নের বিষয়ে।
স্পিকার বলেন, অনেকে ভেবেছিলো- উনি আসবেন না। কিন্তু আমি ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রোগ্রামে বেশি যাই। কিভাবে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন টাচ করা যায়। প্রোগ্রাম সবগুলো একসাথে না করে আলাদা করে দেই। প্রত্যেক ইউনিয়নে না গেলে এলাকার সমস্যা ওভাবে বোঝা যায় না।
তিনি বলেন, অনেক সময় আপনি কুক্ষিগত হয়ে যেতে পারেন। একটা গ্রুপ এমনও চাইতে পারেন যে, আপনার সব জায়গার যাওয়ার দরকার নেই। সরাসরি যোগাযোগ করার দরকার কি, আমরা তো আছি। সেল ফোন থাকায় সেই সমস্যা নেই। মানুষ সরাসরি ফোন করে। আমিও সরাসরি ফোন করি। কাজেই এখানে কোন মাধ্যম লাগে না।
তারা রাত ১১টায় ফোন করে, কারণ ওরা তো জানে সারাদিন ব্যস্ত থাকি আমি। আমিও তাদের এইটা মেনে নিয়েছি। আমি যোগাযোগটা রাখতে পছন্দ করি মানুষের সঙ্গে। জনপ্রতিনিধির জায়গা যদি শূন্য থাকে তাহলে কিভাবে উন্নয়ন হবে। সে কারণে খুব বেশি যাওয়ার চেষ্টা করি। সোমবার আমার এলাকার লোকজনের জন্য উন্মুক্ত। তারা সরাসরি এসে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
পীরগঞ্জের মানুষের অন্যতম দাবি রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের। একদিকে প্রধানমন্ত্রীর আসন, সেই সঙ্গে স্বয়ং স্পিকার তাদের আসনের এমপি, সে কারণে প্রত্যাশাও এখন আকাশচুম্বি।
এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, সামগ্রিকভাবেই এখন সরকারিকরণ বন্ধ রয়েছে। সরকার শুরু করলে অবশ্যই আমাদের এলাকাগুলোতে প্রায়োরিটি বুঝে সরকারিকরণ করবো। ইতোমধ্যে শাহ-আব্দুর রউফ কলেজ সরকারিকরণের ঘোষণা হয়েছে। এটা মনে হয় বাস্তবায়ন হবে।
পীরগঞ্জকে জেলা ঘোষণা করার কোন ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইলে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমি শুনেছি স্থানীদের এ বিষয়ে দাবি রয়েছে। তবে এখনও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি না।
রংপুরবাসীর প্রাণের দাবি, পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ- এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, গ্যাসের এই আলোচনাটা শুনেছি। প্রাপ্যতা সাপেক্ষে নাকি পাওয়া যাবে, এখনও নাকি সেই পরিমাণ গ্যাস নাই।
প্রধানমন্ত্রীর আসন হওয়ায় চাপটা একটু বেশি মনে করেন কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ওনার (প্রধানমন্ত্রীর) সম্মানটা ধরে রাখার দায়িত্ব বেশি। যাতে কাজটা ঠিক ভাবে হয়। তা না হলে এর রিফ্লেকশন হতে পারে যে, উনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, উনি (স্পিকার) ঠিকভাবে করেননি। দায়িত্বটা যাতে সুচারুরূপে করতে পারি, ভবিষ্যতে নির্বাচন করি আর না করি মানুষ যেন সব সময় বলে, এখানে একজন জনপ্রতিনিধি ছিলেন, কাজ করেছেন, চেষ্টা করেছেন।
স্পিকারের কাছে প্রশ্ন ছিল- আর কখনও পীরগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচন করার কোন পরিকল্পনা আছে কি-না? প্রশ্ন শুনেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শব্দহীন হাসি ফোটে স্পিকারের। বলেন, ভবিষ্যতের কথা এখনই বলা কঠিন।
পীরগঞ্জের উন্নয়নের বিষয়ে সব সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করি। কি করার যাবে কি যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহী। এতে অনেক জায়গা লাগে। এ জন্য জেলা প্রশাসককে স্থান দেখতে বলা হয়েছে- জানান স্পিকার।
এতো দূর থেকে গিয়ে কোন সমস্যা হয় কি-না? জবাবে বলেন, জায়গা কোন ম্যাটার না। মানুষের আস্থাটা আগে অর্জন করতে হবে।
পীরগঞ্জ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শানেরহাট ইউনিয়নে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি স্কুলে অনুষ্ঠানে ৭৫০ জন মেয়ে উপস্থিত ছিল। তারা রেজাল্ট ভাল করছে, অবাক লেগেছে। সেখানে মেয়েরা যে এভাবে এগিয়ে আছে, এর চেয়ে জেন্ডার সমতার বড় কোন প্রমাণ লাগে না। মেয়েরা এগিয়ে আছে। একেবারে জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখা যায়।
পীরগঞ্জ ঢেলে সাজাতে চান, এ জন্য কর্মভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন স্পিকার। তিনি বলেন, মহিলাদের উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছি। মহিলাদের প্রশিক্ষণের একটা বিল্ডিং করার চেষ্টা চলছে। সেটা হবে মাল্টিপারপাস। সেখানে দিবা কেন্দ্রে থাকতে পারে। কিংবা উপরে মেয়েদের হোস্টেল হল এরকম একটা কিছু করার ইচ্ছা আছে।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। ওরা বলছে- জায়গা আছে অধিগ্রহণ করুন। কিন্তু মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এতো টাকা নেই জমি অধিগ্রহণ করার।
যতক্ষণ সেরকম বিল্ডি না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত উপজেলা অফিসে সেলাই মেশিন কিনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেছি। এ জন্য আমার বরাদ্দ থেকে অর্থ রাখার কথা বলেছি। শতরঞ্জির কাজটা খুব ভাল হয়। ওখানে জয়ীতার একটি স্টল খুলে দিয়েছি।
পীরগঞ্জকে অনেক বেশি বিদ্যুৎ কাভারেজের মধ্যে আনতে পেরেছি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবন নির্মাণ, তাছাড়া কোন ভবনের সংস্কার- এসব কাজ করেছি। প্রাচীর নির্মাণ সেগুলোর অনেক কাজ করেছি। মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। একাধিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। আর বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
স্বচ্ছতার সঙ্গে কাবিখা, টিআর বরাদ্দ করেন। বরাদ্দ পেয়ে সৌরপ্যানেল লাগানো হয়েছে কি না। সার্ভে করে দেখেছি তারপর বরাদ্দ দেই। কাজ করার পর ভিজিট করতে যাই, যদিও সবগুলোতে যাওয়া সম্ভব হয় না।
আপনার টার্গেড কতটুকু অর্জিত হয়েছে- আপনি যদি নিজের কাজের মূল্যায়ন করেন তাহলে কতো মার্ক দিবেন! এবারও হাসি দিয়ে বলেন, নিজেকে নিজে কি মার্ক দেওয়া যায়! মানুষ কতোটা মার্ক দেয় সেটাই বড়। তবে আরও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৪৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৬
এসআই/জেডএম