শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা মা-বোনকে রেপ করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, লুটপাট করেছে; তারা যুদ্ধাপরাধী।
‘যারা এদের (স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী) মন্ত্রী বানিয়েছিল, আমার লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে যারা তুলে দিয়েছিল, তাদের ব্যাপারে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। জাতি যেন কোনোদিন তাদের ক্ষমা না করে। জাতির কাছে আজকের দিনে এটাই আমার আবেদন। ’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন>>
** বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়াতে হবে
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় দেখেছি অনেকেই নিজে মুক্তিযোদ্ধা তা বলার সাহস পেতেন না। সরকারি চাকরি পাবার জন্য তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা কথাটা লিখতে সাহস পেতেন না, কারণ তাহলে চাকরি পাবে না। কি দুর্ভাগ্য আমাদের, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হারাবার পর এই অবস্থা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ছিল রাজাকারদের দাপট।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পর অন্ততপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে আজকে মানুষ গর্ববোধ করে। ভীত-সন্ত্রস্ত হয় না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো আবার সামনে এসেছে। মানুষ বলার সুযোগ পাচ্ছে, লেখার সুযোগ পাচ্ছে। অন্তত সেই আত্মবিশ্বাসটা ফিরে এসেছে। ’
তিনি বলেন, এই আত্মবিশ্বাসটা যেন হারিয়ে না যায়। আবার আমাদের সেই অন্ধকারের দিকে যেনো যেতে হয়। সেই পরিবেশ যেন ভবিষ্যতে আর কোনেদিন বাংলার মাটিতে না আসে। সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
‘যার হৃদয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশের সব রকম আরাম-আয়েশ ভোগ করার পরও তার অন্তরাত্মাটা পরে থাকবে ওখানে। তাদের জন্য আবার পাকিস্তানও কাঁদে। এই পেয়ারে পাকিস্তানওয়ালাদের থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। ’
বাংলা ভাষা চর্চার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃভাষার চর্চাটা থাকতে হবে। এটা অপরিহার্য বলে মনে করি।
উচ্চ আদালতে ইংরেজি ব্যবহার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা হয়। আমাদের দেশের অনেক সাধারণ মানুষ আছে যারা ইংরেজি বোঝেন না। উকিল যা বোঝায় তাকে সেটাই বোঝতে হয়। রায়ে কি লেখা আছে সেটা বোঝার অধিকার সাধারণ মানুষের আছে। প্রয়োজনে রায় অনুবাদ করা যেতে পারে। এখন নিম্ন আদালতে বাংলা ভাষায় রায় লেখা শুরু হয়েছে। আশা করি, উচ্চ আদালতেও এটা হবে।
ভাষার বিকৃত ব্যবহারের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বাংলা ভাষা ইংরেজি টোনে বলেন। সেটা কেন আমি জানি না। এই বিকৃতি থাকবে কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অন্য ভাষা শেখার পক্ষে। কিন্তু আমার মায়ের ভাষা, সেই ভাষার চর্চাটাও তো থাকতে চাই। সেটা পরিবার থেকেও উৎসাহিত করতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে বাংলা ভাষা শেখার ব্যবস্থা থাকবে না কেন? অবশ্যই থাকতে হবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, তথ্য-প্রক্তির এই যুগে অন্য ভাষাও শিখতে হবে। তবে সবার আগে ভালোভাবে বাংলা ভাষা শেখাটা জরুরি।
দাওয়াত পত্রে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিয়ের দাওয়াত কার্ডও এখন ইংরেজিতে লেখা হয়। এটা কেন লিখতে হবে?
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল মতিন খসরু, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আফজাল হোসেন প্রমুখ।
বিশিষ্টজনদের নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমিরিটাস রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন যৌথভাবে ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম আমিন।
নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম উচ্চ আদালতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বিষয়ে বলেন, উচ্চ আদালতের ভাষা বাংলা হতে আর কত বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। জানি না, এ কথার জন্য আবার আদালত অবমাননা হয় কি-না।
বাংলা ভাষার বিকৃত ব্যবহার বন্ধ, সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি ভাষা কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দেন তিনি।
এ বিষয়ে তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এসব কথা লিখে নিয়েছি। আশা করি একটা পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
এমইউএম/এমএ