শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে নীলফামারী ট্রেনযাত্রায় অংশ নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রেলস্টেশনে আয়োজিত পথসভায় এ আহ্বান জানান তিনি।
পথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সালাম পৌঁছে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে দেশের শতভাগ উন্নয়ন হবে।
নির্বাচন বানচালে বিএনপির ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, গুজব ও সন্ত্রাস চালিয়ে বিএনপি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
শনিবার সকাল ৮টায় ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেনে যাত্রা শুরু করে নীলফামারী যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল, পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোর, বগুড়ার সান্তাহার, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট, দিনাজপুরের বিরামপুর, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর ও নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে ১১টি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে নাটোরের আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ ও নলডাঙ্গার হাট স্টেশনে ট্রেন পৌঁছালে নেতাকর্মীরা পথসভা দাবিতে রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়লে এই দুটি স্থানেও অনির্ধারিত পথসভা করতে হয়। সবশেষে রাতে নীলফামারী জেলা সদরের শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। হাজারো মানুষের সমাগমে পথসভাগুলো জনসভায় রূপ নেয়।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের উন্নয়নকাজের খবর তৃণমূলে পৌঁছে দিতে এবং দলকে শক্তিশালী করতে দেশের উত্তরাঞ্চলে এ ট্রেনযাত্রার আয়োজন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত পথসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, চারদিকে নৌকার গণজোয়ার দেখছি। পথসভাগুলো রীতিমত জনসভায় রূপ নিয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতি হয়, সমৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে যায়। বিশ্বের বুকে মর্যাদা বাড়ে, জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের অর্থ লুটপাট করে নিজেদের ভোগবিলাস ও বিদেশে পাচার, রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদ ঘটানো। কাজেই আগামী নির্বাচনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। সে কারণে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের ভেতরে কোন্দল করবেন না। বিশৃঙ্খলা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্লোগান দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনগণ যাকে পছন্দ করে, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। একটি নয়, পাঁচটি জরিপ হয়েছে। শেখ হাসিনার কাছে সবার আমলনামা রয়েছে। যারা মানুষের হৃদয়ে নাম লেখাতে জানেন না, জনগণের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, অপরাধ করেন- তারা মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়ন পেতে হলে জনগণের মনজয় করতে হবে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতার কোনো ক্ষমা নেই।
আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতার দায়ে বিএনপির ‘টপ টু বটম’ নেতার পদত্যাগ করা উচিত মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে পরাজিত হয়ে নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত করে নৌকা মার্কায় বিজয় ঘরে তুলবো।
প্রতিটি পথসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী নির্বাচনে আবারো আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। উপস্থিত নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ দুই হাত তুলে সেই প্রতিশ্রুতি দেন।
টাঙ্গাইল রেলস্টেশনের প্রথম পথসভায় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে কাদের বলেন, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। তিনদিনের মধ্যেই শোকজ যাবে। দিনাজপুর, রাজশাহী, বরগুনা ও সিলেট যাবে। তাই ঘরের মধ্যে ঘর বানানোর চেষ্টা করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি টানানোর চেষ্টা করবেন না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন।
এ সময় উপস্থিত সাধারণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল অফিসগামী ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন সেতুমন্ত্রী।
পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি রেলস্টেশনে পথসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৪ সালের মত বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনেও নাশকতার চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে। উন্নয়নের বাংলাদেশে কোনো নাশকতা চলতে দেওয়া হবে না। আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে।
নাটোর রেলস্টেশনে কাদের বলেন, বিএনপির এমন কোনো কাজ আছে, যে তারা ভোট চাইতে পারে? দেশে উন্নয়ন অগ্রগতির এমন কী আছে, যা দেখে বিএনপিকে মানুষ ভোট দেবে? কিছুই নাই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল বলেছেন আওয়ামী লীগের নাকি ভোট কমেছে। শেখ হাসিনার ইতিবাচক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ভোট বরং বেড়েছে। আর বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতিতে তাদের ভোট কমে গেছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ১০ বছরে ১০ মিনিটের জন্যও বিএনপি রাস্তায় নামতে পারেনি। ভেবেছিল খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর সাগরের উত্তাল ঢেউ নামবে কিন্তু নদীর ঢেউও হলো না। বিএনপির আন্দোলনের মরা গাঙে জোয়ার আর আসে না, আসবে না।
বগুড়ার সান্তাহার, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও জয়পুরহাট সদরের পথসভায় তিনি বলেন, দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। কেউ নিরাপদ থাকবে না।
শনিবার সকালে ট্রেনযাত্রার শুরুতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই যাত্রা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যাত্রা। এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নবার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিতেই এই নির্বাচনী সফর। তৃণমূলের মানুষ যাতে বিএনপি-জামায়াতের গুজবের রাজনীতি বিষয়ে সচেতন হন, সে বিষয়েও দলের এই সাংগঠিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনী এই ট্রেন সফরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ড. হাছান মাহমুদ, অসীম কুমার উকিল ও ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ০৮, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ