আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এবং সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। দলের প্রার্থী ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে সে তালিকায় বর্তমান এমপিদের মধ্যে থেকে ২০/২৫ জন বাদ পড়েছেন বলে জানা গেছে। বাদ পড়াদের মধ্যে কয়েকজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও রয়েছেন। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে করা জরিপে এদের জনপ্রিয়তার ঘাটতি উঠে আসায় তাদের বাদ দিয়ে নতুন জনপ্রিয় প্রার্থীদের আনা হয়েছে। দলের সংসদীয় বোর্ড কয়েকটি ধারাবাহিক সভা করে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। তবে জোট মহাজোটের সমীকরণ ও হিসাবনিকাশে এই চূড়ান্ত তালিকায়ও শেষ মুহূর্তে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সর্বশেষ ৫০টি আসন দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ৪০ থেকে ৪৫টি আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে চায়।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সঙ্গে দুই-একদিনের মধ্যে বৈঠকের কথা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে কতটি আসন ছাড় দিতে হবে সেটা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের এ তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আরেক জোট ১৪ দলের সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ জোটকে নিয়েও নানা হিসাব করছে দলটি। এর বাইরে মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হচ্ছে বিকল্পধারা, জাকের পার্টিসহ কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গেও। এসব দলকেও দুই-একটি করে আসন ছেড়ে দেওয়ার আলোচনা চলছে। ১৪ দলসহ এসব দলকে ১৫ থেকে ২০টি আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
তবে দলগুলোর আসন ছাড় ১৫টির মধ্যে সীমাবব্ধ রাখার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের যেসব আসনে এমপি রয়েছেন তার থেকে এক-দুইজন বাদ পড়তে পারেন। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ যে আসনগুলো ১৪ দলের শরিকদের ছেড়ে দেয় এর বাইরেও প্রার্থী হয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার সেই অবস্থা নেই। এ কারণে এই দুই দলের আসন কমতেও পারে। তবে দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হওয়ার পর বাড়া-কমা হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায়ও পরিবর্তন আসতে পারে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ায় এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে মাঠে নামায় নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। একারণে জোটের ঐক্য ধরে রাখা এবং মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। জোটের স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, সারা দেশের ৩০০ আসনের প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগ বা জোটের প্রার্থীর কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর সঙ্গে। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা কেমন হবে, কোন আসনে কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে সেটিও পর্যবেক্ষণের বিষয় রয়েছে। এই সার্বিক বিষয় বিচার বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী শেষ মুহূর্তেও কোনো কোনো আসনে পরিবর্তন আসতে পারে। চূড়ান্ত তালিকা থেকে কেউ কেউ বাদও পড়তে পারেন বা যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ ফেরত আসতে পারেন। এ কারণেই দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়নি।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ