সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জোটগতভাবে নির্বাচনে কোন দলকে কতটি আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ ও কোন কোন আসন ছাড় দেওয়া হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দেখা করে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথাও বলছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও।
বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) রাতে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গণভবনে যান প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে পারেননি বলে জানা গেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী গণবভনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
তবে আওয়ামী লীগসহ জোটের শরিকদলগুলোর সূত্রে জানা যায়, আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন। তিনি জোটনেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। জোটের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের কথা জানিয়ে আসছেন।
আওয়ামী লীগ নিজেদের আসন চূড়ান্ত করলেও কিছু আসনে নানা হিসাব নিকাশ চলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিভিন্ন আসনের দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন নিয়ে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা জানাতে গণভবনে এসেছিলেন।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের অনেকের কথা শুনেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কিছু জানানো হচ্ছে না। যা কিছু আলোচনা করার পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ করছেন। আমরা কিছু জানতে পারছি না। আমরা অন্ধকারে আছি। উনি (এরশাদ) শুধু বলেন, অপেক্ষা করো।
১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির একটি সূত্র জানায়, ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৫টি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো, সভাপতি ও সমাজক্যল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন (ঢাকা-০৮), সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা (রাজশাহী-২), মোস্তফা লুৎফুল্লাহ (সাতক্ষীরা-১), ইয়াসিন আলী (ঠাকুরগাঁও-৩) ও টিপু সুলতান (বরিশাল-৩)।
এই ৫ জনসহ ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমানে ৬ জন এমপি রয়েছেন। আরেক জন নড়াইল-২ আসনে হাফিজুর রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি এই আসনের পরিবর্তে অন্য আসন চাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দরকষাকষিও চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সর্বশেষ ১০টি আসন চেয়ে তালিকা দিয়েছিলাম। আমাদের ৫টি ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছি। আর ৫টি নিয়ে আলোচনা হবে। আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যেই সব চূড়ান্ত করা হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
১৪ দলের আরেক শরিক জাসদের (ইনু) বিষয়টিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জাসদ ভেঙে যাওয়ার পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদে এমপি আছেন তিনজন। আসনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বাংলানিউজকে বলেন, এখনও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। দুই একদিনের মধ্যে হয়তো জানতে পারবো। আমরা তো গতবার যে আসনগুলোতে ছিলাম তার চেয়ে বেশি চাইবো, এটাই স্বাভাবিক।
দুই বছর আগে জাসদ ভেঙে যে দুই অংশ হয়ে যায় তার অপর অংশের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। গত নির্বাচনে জাসদের যে ৫ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তার দুইজন মঈনুদ্দিন খান বাদল ও নাজমুল হক প্রধান বাংলাদেশ জাসদে রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় বাংলাদেশ জাসদ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কায় নির্বাচন করবে বলে দলটির সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া জানান।
বাংলাদেশ জাসদকে কয়টি আসন দেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। বাংলাদেশ জাসদ সর্বশেষ তিনটির দাবি জানিয়েছে। এই তিনটি হলো মঈনুদ্দিন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮), শরিফ নুরুল আম্বিয়া (নড়াইল-১) এবং নাজমুল হক প্রধান (পঞ্চগড়-১)।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
এসকে/এমএ