শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিয়ানীবাজারের মুক্তিযোদ্ধারা এ দাবি তোলেন।
গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘অনুপ্রবেশ: আলোচনায় বিয়ানীবাজার আ’লীগ সভাপতি’ শিরোনামে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সিলেটজুড়ে তোলপাড় চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিয়ানীবাজার উপজেলার সুপাতলা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিগত দিনে এ ব্যাপারে কথা বলার পরিবেশ ছিল না। অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ধরে নিয়েছি, এখনই কথা বলার সময়। আর সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। তাই এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কেন্দ্রীয় ও সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘উপজেলার আলবদর সদস্য ছিলেন আব্দুল খালিক ও তার ছেলে আব্দুল হাসিব মনিয়া। যুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ কর্মী জামাল উদ্দিনকে বাড়ির সামনে গাছে বেঁধে হত্যা করে রাজাকার-আলবদররা। ওই ঘটনায় মনিয়াও জড়িত। ’
তারা বলেন, ‘রাজাকার ও আলবদরমুক্ত আওয়ামী লীগের কমিটি হলে বিয়ানীবাজারের মানুষ সুযোগ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি সঠিক সেবাও পাবে। নতুবা লুটপাটকারীদের দখলে চলে যাবে বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ। তারা কেবল আমাদের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর। দলে ভিড়ে তারা কোটিপতি হয়ে প্রতিশোধ নেবে। তাদের দ্বারা কোনো দিন কোনো মুক্তিযোদ্ধার উপকার হয়নি। ’
সিলেটের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে প্রকাশিত ‘রণাঙ্গন-৭১’র বইয়ের উদ্বৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, বইয়ে উঠে আসা রাজাকারদের তালিকা সঠিক। কিছু বইয়ে মনিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দেখানো হয়েছে, সেসব ভুয়া। মন্ত্রণালয় থেকে আসা রাজাকার-আলবদরের তালিকায়ও মনিয়া ও তার পিতা আব্দুল খালিকের নাম আছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মকসুদুল ইসলাম আউয়ালের বাবা উপজেলার চান্দগ্রাম মুড়িয়া এলাকার কুটুচান্দ মেম্বারের নামও আছে শান্তি কমিটির তালিকায়।
বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি পদে থাকা আব্দুল হাসিব মনিয়া ও শান্তি কমিটির সদস্য কুটুচান্দ মেম্বারের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়ালকে অপসারণের দাবিও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘রণাঙ্গন-৭১ বইয়ে বিয়ানীবাজারের আলবদরের তালিকায় ২৩৩ নং ক্রমিকে রয়েছে উপজেলার খাসা দিঘীরপাড়ের আব্দুল খালিকের পুত্র আব্দুল হাসিব মনিয়ার নাম। যিনি ১৯৭১ সালের ১৭ জুলাই স্থানীয় সুন্দীর পিতা জামাল উদ্দিন হত্যার অন্যতম সদস্য। তালিকার ২২৩ নম্বরে রাজাকার হিসেবে উল্লেখ আছে আব্দুল হাসিব মনিয়ার পিতা আব্দুল খালিকের নাম। অথচ গত ১৬ বছর ধরে আব্দুল হাসিব মনিয়া বিয়ানীবাজার উপজেলার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের কাছে এর চেয়ে লজ্জা ও অপমানের আর কী হতে পারে?’
মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘তালিকায় ২২১ নম্বরে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছে চন্দগ্রামের কুটুচান্দ মেম্বারের নাম। এই কুটুচান্দের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল। একাত্তরের শান্তি কমিটির সদস্যের সন্তান হয়ে সে বীরদর্পে আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছে। আউয়াল আওয়ামী লীগের নাম ও পদবি ব্যবহার করে আমাদের সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্টজন হিসেবে বিয়ানীবাজার রাজত্ব করেছে। আওয়ামী লীগের এই তিন টার্মের শাসনামলে সে বিয়ানীবাজারে উন্নয়নের নামে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি- কোনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কখনোই দেশে লুটতরাজের রাজত্ব কায়েম করতে পারে না। একমাত্র দেশবিরোধী পরিবারের সন্তানদের দ্বারা এটি সম্ভব। ’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিয়ানীবাজারের নন্দীর ফল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাজন আলী, গোঙ্গাদিয়ার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন, শ্রীধরা গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আলী, আবংগী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এনইউ/এইচএ/