ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাহরাইন

বাহরাইনের হিমঘর থেকে ‘উধাও’ বাংলাদেশির লাশ

মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল, বাহরাইন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৪
বাহরাইনের হিমঘর থেকে ‘উধাও’ বাংলাদেশির লাশ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাহরাইন: বাহরাইনের রাজধানী মানামার সালমানিয়া মেডিকেল কমপ্লেক্স হাসপাতালের হিমঘর থেকে রফিকুল ইসলাম (৪০) নামের এক বাংলাদেশির লাশ ‘উধাও’ হয়ে গেছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস ‘ধারণা’ করছে, রফিকুলের লাশ দাফন করা হয়েছে।

কিন্তু কবে, কোথায় তার দাফন হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা নেই মানামার বাংলাদেশ দূতাবাসের।

রফিকুল চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের ব্রাহ্মণছোঁয়া গ্রামের হাজি বাড়ির আব্দুল মজিদের ছেলে। তার পাসপোর্ট নম্বর জি ৫২৯০৪৩।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ১৬ বছর বাহরাইনে কর্মরত ছিলেন। প্রায় আট বছর আগে তিন মাসের ছুটিতে দেশে গিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ছেলেমেয়ের পরীক্ষার ফি’র জন্য পাঁচ হাজার টাকা পাঠান।

২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রফিকুল হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার রুমমেট পলাশ, ফারুক ও বাদল তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। রফিকুল ইসলামের ভিসা ও সেন্ট্রাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (সিপিআর) না থাকায় শাহ আলম নামে এক সহকর্মীর সিপিআর দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৪টায় রফিকুল মারা যান।

রফিকুল ইসলামসহ তার অন্যান্য সহকর্মীদের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় আইনি ঝামেলা বা বিপাকে পড়ার ভয়ে কেউ তার লাশের খোঁজ-খবর নেয়নি। সেই কারণেই রফিকুলের লাশ হিমঘরে পড়েছিল বলে জানা যায়।

রফিকুলের প্রতিবেশী মুসা সাত্তার পলাশ বলেন, ‘আমি রফিকুলের সঙ্গে বাহরাইনে থাকতাম। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করি। মারা যাওয়ার পর কাগজপত্রে গরমিল থাকায় লাশ হাসপাতালে রেখে চলে আসি। আকামা না থাকায় আমাকেও ১৫ দিন জেল খাটতে হয়। এরপর দেশে ফিরে আসি। ’
একদিকে অবৈধ (কাগজপত্র ঠিক না থাকা), অন্যদিকে অন্য নামে (শাহ আলম) ডেথ সার্টিফিকেট (মৃত্যুসনদ) ইস্যু হওয়ার কারণে এ নিয়ে বিপাকে পড়ে দূতাবাস।

দূতাবাসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাশ দেশে পাঠানোর জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রদূত শাহ আলমের পরিবর্তে রফিকুল ইসলামের নামে মৃত্যুসনদ দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শাহ আলমের সিপিআর দিয়ে রেজিস্টারে ভর্তি ও মৃত্যুসনদ তৈরি হয়ে গেছে। এটি পরিবর্তন করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।

এরপর তৎকলীন রাষ্ট্রদূত নাম পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সেখান থেকে জানানো হয়, আদালতের নির্দেশ ছাড়া মৃত্যুসনদের নাম পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

এদিকে নানা জটিলতায় লাশ না পেয়ে সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৯ জুন এক ফ্যাক্সবার্তায় মৃত রফিকুলের স্ত্রী নিলুফা ও তার পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে লাশ দেশে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বাহরাইনে দাফনের অনুমতি দেন।

এ ব্যাপারে বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রফিকুল ইসলামের লাশের জন্য আমরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। মর্গে সব পুরনো লাশের খোঁজ নিয়েও রফিকুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়নি।

‘ধারণা করা হচ্ছে, তার লাশ ইতোমধ্যে দাফন করা হয়ে গেছে। তবে কোথায়, কখন তা দাফন হয়েছে এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছুই জানাতে পারেনি। আমরা এখনো রফিকুলের লাশের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাহরাইন এর সর্বশেষ