বুধবার (১ আগস্ট) দলের সহ-দফতর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম টিপুর পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। গত রোববার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে ফ্লাইওভারের ঢালে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে তিনি এ বিবৃতি দেন।
ঘটনার প্রায় তিন দিন পর দেওয়া বিবৃতিতে ফখরুল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পদত্যাগ, নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক বাসচালকের শাস্তিসহ ৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ব্যর্থ বলে অভিযোগ তোলেন, একইসঙ্গে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে বর্তমান সরকার সবক্ষেত্রে সীমাহীন ব্যর্থতায় পর্যবসিত। সরকারের প্রশ্রয়ে দুষ্কৃতিকারীদের দাপট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই দেশে এখন মানুষের জীবন-জীবিকা চরমভাবে নিরাপত্তাহীন। মানুষের ক্ষোভের আঁচ উপলব্ধি করতে পারে না বলেই সরকার গণবিরোধী বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কোমলমতি কিশোর-কিশোরী ছাত্র-ছাত্রীদেরও জীবন ঝরে পড়াটাও দুঃশাসনের ফলশ্রুতি। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর যখন সমগ্র দেশের মানুষ বেদনার্ত, শোকাহত ও ক্ষুব্ধ, তখন ছাত্র-ছাত্রীর লাশ নিয়ে নৌ-মন্ত্রীর হাসি যেন বিদ্রুপের বহিঃপ্রকাশ।
নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে পরিবহন সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, তার আশকারায় দীর্ঘদিন ধরে এই সেক্টরে অরাজকতা লেগেই আছে। কিছু প্রশিক্ষণহীন অদক্ষ চালক ও লাইসেন্সবিহীন কমবয়সী চালক এবং চলাচলে অনুপযুক্ত যানবাহনের প্রাধান্য থাকলে সড়ক-মহাসড়কে প্রাণঘাতী ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়তেই থাকবে। আর এগুলো প্রাধান্য পাচ্ছে কেবল নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের প্রশ্রয়ে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী’র হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে দেশজুড়ে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লেও তাতে সরকারের বিন্দুমাত্র টনক নড়েনি, বরং বেপরোয়া বাসচালকের দ্বারা এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি, টিয়ার গ্যাস ও বেধড়ক লাঠিচার্জে যেভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, তা কেবল নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকদের দ্বারাই সম্ভব। ন্যায়বিচার না পাওয়া, বঞ্চিত, প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের হিংস্র আক্রমণে আহত করার পর অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের এই অমানবিক আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করছি।
ফখরুল বলেন, ভোগ-লালসায় মত্ত ক্ষমতাসীনরা মানবিক বিবেচনাগুলো পদদলিত করছে। দুই শিক্ষার্থীর এই মর্মস্পর্শী মৃত্যুর ঘটনার পরও সরকারের নির্লিপ্ত উদাসীনতা হঠকারী বাসচালকদের উৎসাহিত করেছে। গতকালও একজন শিক্ষার্থী কুমিল্লায় গাড়ি চাপায় নিহত হয়েছেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করা জবাবদিহিহীন সরকার শুধু ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে নির্দয়ভাবে দমন করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বলেই অপরাধীরা প্রকাশ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। বারবার সংঘটিত শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়েসী মানুষের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক জীবনহানির জন্য দায়ী পরিবহন সেক্টরের বিশৃঙ্খলা, যার মদদদাতা হচ্ছে সরকার। সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতার জন্যই সর্বক্ষেত্রে অধঃপতন শুরু হয়েছে। বর্তমানে সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি পরিবহন সেক্টরের বিশৃঙ্খলার উস্কানিদাতা নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের পদত্যাগ দাবি করছি।
শিক্ষার্থীদের নিহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্ভুত সংকট সমাধানের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় দায়ী চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৮
এইচএ/