ঢাকা: দোকান থেকে এক প্যাকেট ‘মিল্ক চকলেট ডাইজেস্টিক বিস্কুট’ কিনেছেন সেগুনবাগিচার ইস্টার্ন পয়েন্টের বাসিন্দা রহমত আলী।
বাসায় ফিরে বিস্কুটের প্যাকেট খুলতেই তার চোখ কপালে! বিস্কুটের মধ্যে এক গুচ্ছ সাদা আঁশ।
একজন ভোক্তা হিসেবে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
বিস্কুটের ছবি তুলে ওই প্যাকেট নিয়ে ছুটে যান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত অভিযোগ করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে।
এক সপ্তাহ পরই অধিদপ্তর থেকে যোগাযোগ করা হয় রহমত আলীর সঙ্গে। রহমতকে জানানো হয়, “তদন্ত করে আপনার অভিযোগটি প্রমাণিত হয়েছে। এ অভিযোগে ‘মিল্ক চকলেট ডাইজেস্টিক বিস্কুট’ কোম্পানিতে অভিযান চালিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ”
দ্রুত বিচারের কথা শুনে আনন্দিত রহমত আলী আরও বিস্মিত হন, যখন তাকে বলা হয়, “ক্ষতিপূরণ হিসেবে আপনি পাচ্ছেন ১২ হাজার ৫০০ টাকা!”
বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালন অনুষ্ঠানে জানা যায় এ তথ্য।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গিয়ে জানা গেছে, ভোগ্য পণ্য বা সেবা পরিবেশনে ভোক্তার অধিকার বিরোধী অপরাধের কারণে এমন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ৩৩টি ঘটনা ঘটেছে।
অধিদপ্তর থেকে আহ্বান জানানো হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫১টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে আইন হলেও সাধারণ ভোক্তারা এ বিষয়ে সচেতন নন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় অভিযানে গতি নেই।
এমন পরিস্থিতিতেই শুক্রবার সারাদেশে পালিত হলো ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘ভোক্তাদের সুবিচারের সময় এখন!’ এ স্লোগানকে বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি কাজী ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, “পণ্য ও সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক অবস্থায় আছি। আমরা বাজার থেকে পাকা ফল কিনতে পারি না। পাকানো ফল কিনি। ”
তিনি বলেন, “এবারের ভোক্তা অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টি আমাদের জন্য প্রযোজ্য। এখনই আমাদের সুবিচারে সচেতন দাবি তুলতে হবে। ”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিঞা বাংলানিউজকে বলেন, “একটি সুসঙ্গত আইনের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে কাজ করছে অধিদপ্তর। আমি বলবো, আমাদের ৮০ শতাংশ সফলতা এসে গেছে। অধিদপ্তরে সুযোগ্য লোকবল কাঠামো নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। এখন ভোক্তা সাধারণকে সচেতনতার সঙ্গে এ সুযোগ নিতে হবে। ”
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ পাসের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকারে অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। এ অধিদপ্তরে অনুমোদিত লোকবল কাঠামো ২৩৩ জনের।
এখন পর্যন্ত মহাপরিচালক, দুই পরিচালক, ১১ উপ-পরিচালকসহ মোট ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন।
২০১০ সালের ৬ এপ্রিল কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত অধিদপ্তর পাঁচ হাজার ৭৮৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ছয় কোটি দুই লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
ভোক্তাদের পক্ষ থেকে ১৫১টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৩টি অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের কাছ থেকে এক লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অভিযোগকারীদের জরিমানার ২৫ শতাংশ দিয়েছে অধিদপ্তর। ঠিকানা ও অভিযোগ পূর্ণাঙ্গ না থাকায় অনেক অভিযোগ তদন্ত করা যায়নি বলে জানান কর্মকর্তারা।
ভোক্তার প্রতিকার: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী- ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা, ভেজাল দেওয়া, মোড়কে তথ্য না থাকা, মিথ্যা তথ্য দেওয়া, সেবায় প্রতারণা করা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করাসহ ১৭টি কর্মকাণ্ডকে অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে।
এসব অপরাধের শিকার হলে যে কোনো ভোক্তা আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন। এ জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদনে অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম, ফোন/ফ্যাক্স/ই-মেইল নম্বর ও পেশা উল্লেখ করতে হবে।
অভিযোগ পাঠানোর ঠিকানা- মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১, কারওয়ানবাজার (টিসিবি ভবন- অষ্টম তলা), ঢাকা।
প্রত্যেক জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও একইভাবে আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৩
আইএ/ সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর