মাদারীপুর: ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনকারীদের স্তব্ধ করে দিতে যে স্থানটিতে গুলি করা হয়েছিলো ঠিক সে স্থানটিতেই নির্মিত হয় প্রথম শহীদ মিনার।
ওই শহীদ মিনারের রূপকার ছিলেন মাদারীপুরের কৃতি সন্তান ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন ভিপি ডা. গোলাম মাওলা।
১৯৫২ সালের অগ্নিঝড়া দিনগুলোতে ডা. গোলাম মাওলার ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত উজ্জল ও গৌরবময়।
১৯৪৮ সালে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ১৯৪৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর করাচীতে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঘোষণা করেন উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
উত্তরসূরীদের অনুসরণ করে ৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে মুসলিম লীগের জনসভায় খাজা নাজিম উদ্দিনও ঘোষণা করেন উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
খাজা নাজিম উদ্দিনের এই ঘোষণায় ভাষা আন্দোলনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের সভায় খাজা নাজিম উদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি রাত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভায় যে চারজন ছাত্রনেতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ডা. গোলাম মাওলা অন্যতম।
২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের পর সেদিন রাত ৯টায় মেডিকেল কলেজ ব্যারাকে ডা. আজমলের কোয়াটারে কর্মীদের যে সভা হয় সেখানে সভাপতিত্ব করেন ডা. গোলাম মাওলা। ওই সভায় ডা. গোলাম মাওলাকে আহ্বায়ক করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ পূনর্গঠিত হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ডা. গোলাম মাওলার কথামতো ডা. বদরুল আলমের (ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেধাবী ছাত্র) স্কেচ (ডিজাইন) অনুযায়ী হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য আনা ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে ডা. গোলাম মাওলা নিজে ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. এসডি আহমেদসহ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যে স্থানটিতে গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছিলো সে স্থানটিতে নিজেরাই নির্মাণ করেন প্রথম শহীদ মিনার।
পরে অবশ্য শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারটি ২৫ ফেব্রুয়ারি সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী ভেঙে গুড়িয়ে ভীতসহ উপড়ে ফেলে গর্তে মাটি ভরাট করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৫