চট্টগ্রাম: শত বছর পার করেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র, ভোগ্যপণ্যের ঐতিহ্যবাহী পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ।
এ উপলক্ষে শনিবার চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য উৎসবের আয়োজন করেছে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্য কর্ণফুলী নদী থেকে প্রবাহিত চাক্তাই, রাজাখালী ও বদরশাহ এ তিনটি খালের উপকণ্ঠে বৃটিশ আমলে গড়ে উঠেছে পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ।
এ বাজারের গোড়াপত্তন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও চট্টগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নদী ও খালের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের বাড়তি সুবিধা নিয়ে ১৩ শতকে সুলতানী আমলে তৎকালীন চাটগাঁ’র শুলকবহর ও চকবাজার এলাকায় পাইকারী ব্যবসা শুরু করেছিলেন কয়েকজন বনেদি ব্যবসায়ী।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর কাছাকাছি হওয়ায় দ্রুত এ ব্যবসা বিস্তার লাভ করে। ক্রমে সেটা আরও ছড়িয়ে পড়তে পড়তে খাতুনগঞ্জে এসে থিতু হয়। বন্দর থেকে কর্ণফুলী নদী হয়ে খালের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে খাতুনগঞ্জের অবস্থান আরও কাছে হওয়ায় সেখানেই পাইকারী ব্যবসা স্থায়ীভাবে বসত গড়েছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, ১৮৭৫ সাল থেকেই মূলত খাতুনগঞ্জে চাঙ্গাভাবে পাইকারী ব্যবসা শুরু হয়েছে। সে হিসেবে খাতুনগঞ্জের এক’শ বছর পূর্তি হয়ে গেছে অনেক আগেই।
এরপরও শত বছর পূর্তি উৎসব কেন এমন প্রশ্নের জবাবে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সময় নিয়ে আমাদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। সেজন্য কত বছর পূর্তি সেটা আমরা উল্লেখ করছি না। আমরা বলছি- শত বছর পার করেছে খাতুনগঞ্জ। এজন্যই অনুষ্ঠান। ’
বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী- এমন প্রবাদ যেন খাতুনগঞ্জের বেলায় সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। এখানে চাল, ডাল, জিরা, এলাচ কিংবা দারূচিনির সওদা করে এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি, তারকা ব্যবসায়ী হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
এদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রামের প্রবীণ শিল্পপতি এনজিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান ননী গোপাল সাহা, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, টিকে গ্রুপের আবুল কালাম ও আবু তৈয়ব, মোস্তফা গ্রুপের প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমান, এমইবি গ্রুপের প্রয়াত মোহাম্মদ ইলিয়াছ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) হেফাজতুর রহমান প্রমুখ।
ব্যবসায়ীরা জানান, খাতনুগঞ্জে বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ১২শ’ দোকান আছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই খুচরা ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন মালামাল কিনতে। শুধু বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই এখানে বাকীর ভিত্তিতে শত শত কোটি টাকার লেনদেন চলে।
তবে শত বছর পার করা খাতুনগঞ্জে সমস্যারও অন্ত নেই। আছে ব্যবসার উত্থান-পতনও।
ব্যবসায়ীদের মতে, ঘিঞ্জি এলাকায় অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থা, প্রতিনিয়ত যানজট, খাল ভরাট হয়ে পণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা, চেক জালিয়াতিসহ শত সমস্যার মধ্যে তাদের ব্যবসা করতে হচ্ছে।
শত বছরকে সামনে রেখে শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়েছে।
শত বছর পূর্তির অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শনিবার বিকাল চারটায় চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা শুরু হবে। এতে বক্তব্য রাখবেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া, চট্টগ্রামের মেয়র এম মনজুর আলম, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও সাংসদ এম এ লতিফ, বর্তমান সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি আবদুচ ছালাম।
সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান। রাত সাড়ে ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে গান গাইবেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের জনপ্রিয় শিল্পী প্রেমসুন্দর বৈঞ্চব, হৈমন্তী রক্ষিত মান।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে গজল সন্ধ্যাও।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১১