ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১৩ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

যেভাবে হবে যানজটের সমাধান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
যেভাবে হবে যানজটের সমাধান সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক

ঢাকা: গণপরিবহন হিসেবে বাসের প্রাধান্য, রিকশা ও পথচারীবান্ধব রাস্তা, ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করা, ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা- এসব পদক্ষেপ নিলে ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব।   
 
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে ‘নগর ঢাকায় যানজট : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক সভায় এ অভিমত দেন বক্তারা।


 
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মো. মশিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।
 
আলোচনায় তথ্য ও ধারণা উপস্থাপন করেন বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক, অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন ও স্থপতি তানভীর নেওয়াজ। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন কার্যনির্বাহী ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান, বিভিন্ন স্টেক-হোল্ডার, বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, সুশীল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
সভায় বিভিন্ন প্রস্তাব থেকে বাছাই করে সমাধানের পথ খুঁজতে মেয়র আনিসুল হকের প্রতি পরামর্শ দেন সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, সেগুলো থেকে বেছে নিয়ে কাজ করুন। মানবিক দিক ভাববেন, কিন্তু সব বিষয়ে মানবিকতা দেখালে চলবে না। হিসাব মতে, ১০ লাখ রিকশার কথা জানলেও বাস্তবে দেখবেন ২০ লাখ আছে। তাহলে মানবিকতা আর কতো দেখাবেন। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে পারছেন না, তাহলে অন্তত রাস্তা দখলমুক্ত করুন।
 
কাদের বলেন, অনেক ডিম এক ঝুঁড়িতে না রেখে কয়েকটি ডিম রাখুন। এভাবেই কাজ এগোবে। কোন নেতা কোন গরুর মার্কেটে লিজ নিয়েছেন, সেসব দেখবেন না। সাহস করুন, কাজ হবেই।
 
মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, হুট করেই রিকশা উঠিয়ে দেওয়া যাবে না। রংপুর  ও বিভিন্ন এলাকার মানুষ রিকশা চালান ঢাকায়। তাদের জীবিকার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তাদের বাদ না দিয়েই যানজট সমস্যা দূর করতে হবে।
 
আনিসুল হক বলেন, উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়নে প্রচুর টাকা খরচ করে। কিন্তু রাজধানী ঢাকার যানজট সরকারের কাজগুলোও সমালোচনায় বদলে দিচ্ছে। আমার দায়িত্ব খুব দ্রুত কিছু করা। অন্তত ৬ মাসে বা এক বছরে যেন একটি সমাধানে আসতে পারি।
 
তিনি বলেন, আমরা ইউ-লুপ করতে ৫টি জায়গা পেয়েছি, গাজীপুরে একটিসহ মোট ৬টি জায়গা। সব জায়গা আমরা ইঞ্চি ইঞ্চি করে পর্যবেক্ষণ করেছি। কোথায় কী করলে যানজট কমবে, বের করার চেষ্টা করছি।
 
রাজধানীতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেড় কিলোমিটার করে রাস্তা তার তত্ত্বাবধানে দিতে সেতুমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেন মেয়র আনিসুল। বাস মালিকদের কাছে আহবান জানান, নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া বাস যেন অন্য কোথাও না থামে, তা নিশ্চিত করতে। এতে যানজট অনেক কমবে বলে মনে করেন আনিসুল।
 
জবাবে মন্ত্রী মেয়রকে বলেন, রাস্তার জায়গা কেন দেব না? প্রয়োজনে স্ট্রাকচার ভেঙে দেব।
 
আনিসুল হক বলেন, রিকশা, হকার, ফুটপাত নিয়ে কাজ করার কথা আমাদের মাথায় আছে। ফুটপাত তুলে দেওয়া মুখের কথা নয়। অনেক শক্ত হাত এর পেছনে।
 
সাঈদ খোকন বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ ও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
 
বাপা’র যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, গণমানুষের পরিবহণ বাস। এটি সবার ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। মেট্রোরেল নিয়ে আশা দেখাচ্ছেন। কিন্তু মেট্রোরেল সবার সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে না। বাস সুলভ ও ব্যবহারোপযোগী করুন। দেখবেন, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে, তারাও বাসে চড়বে।
 
ইকবাল বলেন, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিয়ে দোকান চালান। সে টাকা দরকার হলে আপনারা নিন। তবু এসব ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো কিছু করুন। আর পথচারীদের কথাও ভাবুন। পথচারীবান্ধব নগর গড়ুন, মানুষ হাঁটবে, যানজট কমবে।
 
বিআরটিএ’র প্রতিনিধিরা ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর প্রস্তাব দেন। ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য জ্বালানি খরচ বাড়াতে বলেন। তাদের যুক্তি, যেসব গাড়ি কম সংখ্যক যাত্রী বহন করে, কিন্তু রাস্তায় জায়গা বেশি নেয়, সেগুলোকে নিরুৎসাহিত করলে মানুষ বাসে চড়বে। যানজট কমবে।
 
তারা জানান, ঢাকা মেট্রোতে রেজিস্ট্রার করা মোটরসাইকেল সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ, প্রাইভেটকার দুই লাখ, জিপ ও মাইক্রোবাস তিন লাখ, বাস ২২ হাজার ৫৩০টি।
 
বক্তাদের অনেকেই রিকশা উঠিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে মত দেন। তারা বলেন, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ বাসে বা অন্য পরিবহনে চলতে পারেন না। তাদের জন্য রিকশা প্রয়োজন। রিকশা ও পথচারী বাদ না দিয়েই উন্নত নগরী গড়তে হবে।
 
আলোচনায় যানজট সমস্যার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকনির্দেশনা দেন আলোচকরা।
 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার গোলাম ফারুক বিভিন্ন মেয়াদী সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন।
 
এর মধ্যে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা, ফিটনেস প্রদানে বিআরটিএ’র বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালন, লাইসেন্সবিহীন রিকশা ডাম্পিং, স্কুলপাঠ্যের সিলেবাসে ট্রাফিক আইন সম্পর্কিত পাঠ ও মানার সংস্কৃতি গড়া, রোড ডিভাইডার সঙ্কুচিত করে রাস্তা প্রশস্ত করা, রাস্তা নির্মাণে পিচের পরিবর্তে আরসিসি ব্যবহার, পরিকল্পিতভাবে রাস্তার সম্প্রসারণ ও নতুন রাস্তা তৈরি করে ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো, গণপরিবহণের সংখ্যা বাড়ানো ও রুট কমিয়ে পরিকল্পিত রুট পারমিট দেওয়া, কানেক্টিং সড়ক বাড়ানো এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠান, প্রধান প্রধান অফিস-আদালত রাজধানী থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া উল্লেখযোগ্য।
 
সভার সহযোগী আয়োজক- বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউট।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এসকেএস/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ