ঢাকা, সোমবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যক্ষ্মার টিকা আছে সিরিঞ্জ নেই, পোলিওর টিকাই নেই

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
যক্ষ্মার টিকা আছে সিরিঞ্জ নেই, পোলিওর টিকাই নেই

চট্টগ্রাম: ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’ প্রবাদটিই যেন সত্যি হতে চলেছে চট্টগ্রামের ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে। নবজাতক থেকে শুরু করে দেড় মাস বয়সী শিশুদের যক্ষ্মা প্রতিরোধে যে ‘বিসিজি’ টিকা অত্যাবশ্যক তা-ই দেওয়া যাচ্ছে না বিশেষায়িত সিরিঞ্জের অভাবে।

এ সংকট পাঁচ মাস ধরে চলছে। ফলে যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের। পাশাপাশি ১৪ সপ্তাহ বয়সী শিশুদের পোলিও রোগ প্রতিরোধে ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাক্সিন’ বা ‘আইপিভি’ টিকা সরবরাহ তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

মাঠ পর্যায়ের এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, বিসিজি সিরিঞ্জ, আইপিও টিকার পাশাপাশি সরবরাহ নেই ইপিআই কর্মসূচির ট্যালি শিট, ইপিআই টিকাদান কার্ড (শিশু) ইত্যাদি মুদ্রিত লজিস্টিক সাপোর্টও। ফলে অনেক মাঠকর্মী চাকরি রক্ষার খাতিরে ট্যালি শিট ও টিকাদান কার্ড ফটোস্ট্যাট করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। মাঠকর্মীরা চাকরি রক্ষা করলেও শিশুর মা-বাবা ও অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কেবল বাড়ছেই।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই বিভাগ থেকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিসিজি সিরিঞ্জ (০ দশমিক ০৫ এমএল) এসেছিল চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি। ওই চালানে ৯ হাজার ৬০০ পিস সিরিঞ্জ পাঠানো হয়েছিল। আইপিভি টিকার সর্বশেষ চালান এসেছে গত ২১ জানুয়ারি, ৩ হাজার ৩৬০ ভায়েল (বোতল)। এক বোতলে ৫ ডোজ টিকা। এর আগে আইপিভি এসেছিল ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর, ৩ হাজার ৩৬০ ভায়েল।

এসব সিরিঞ্জ-টিকা জেলা সিভিল কার্যালয় থেকে ভাগ হবে ১৪ উপজেলা আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাতটি জোনে। চসিকের জোনগুলো হচ্ছে- আগ্রাবাদ, বন্দর, দেওয়ানবাজার, কাপাসগোলা, আলকরণ (মেমন), পাঁচলাইশ, উত্তর কাট্টলী ও পাঁচলাইশ। সেখান থেকে সব সরকারি, বেসরকারি, এনজিও ক্লিনিকগুলোতে সরবরাহ দেওয়া হয়।

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী চসিক এলাকায় ইপিআই কর্মসূচিতে এক বছরের জন্যে শিশু-কিশোরী ও নারীর লক্ষ্যমাত্রা পাঠিয়েছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। যাতে ০-১১ মাস বয়সী ৮৪ হাজার ৬২১ জন, ১২-২৩ মাস বয়সী ৯১ হাজার ৬১৯ জন, ৯৯ হাজার ৫৪৯ জন গর্ভবতী ও ১৫-৪৯ বছরের ৮ লাখ ৫১ হাজার ৪৫৮ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ১৪ উপজেলায় ১ বছরের নিচের ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ শিশুকে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।  

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর মোমিন রোডের নিষ্কৃতিসহ বেশিরভাগ টিকাদান কেন্দ্রেই ‘টিকার ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আইপিভি টিকা দিতে আসা শিশুদের টিকা দেওয়া ছাড়াই ফেরত নিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। রোকসানা রূপা নামের একজন মা চার মাস বয়সী প্রথম সন্তান রুপাইদা রাফাকে নিয়ে এসেছিলেন টিকাদান কেন্দ্রে। আইপিভি টিকার সরবরাহ নেই শুনে ফেরত যাচ্ছিলেন তিনি।  

এই মা বাংলানিউজকে জানান, বাচ্চাদের অত্যাবশ্যকীয় টিকা, সরবরাহ নেই শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কেন এমন হয়!

শুধু রূপা নয়, ফেরত যাচ্ছেন অনেক মা, অনেক বাবা।

সদরঘাট কালী বাড়ির মোড়ের মেমন হাসপাতালের নিচতলায় টিকাদান কেন্দ্রে কথা হয় মেমন জোনের দায়িত্বে থাকা নূর মো. খানের সঙ্গে। তিনি জানান, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আইপিভি টিকা সরবরাহ নেই। বিসিজি সিরিঞ্জও সরবরাহ নেই। তাই আমরা দিতে পারছি না।

এসময় রূপনা নামের একজন টিকাদান কর্মী জানান, মেমন হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে পুরোনো যেসব বিসিজি সিরিঞ্জ ছিল সেগুলো দিয়ে কোনোরকমে বিসিজি টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে সেটির মজুদও শেষ পর্যায়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ বাংলানিউজকে বলেন, যক্ষ্মার ঝুঁকি এড়াতে যেখানে প্রথম দিন থেকে টিকাদান কেন্দ্রে শিশুর প্রথম ভিজিটের সময় বিসিজি টিকা দিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে সেখানে তিন-চার মাসেও বিসিজি সিরিঞ্জ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে না পারাটা উদ্বেগের। এটি সরকারের টিকা খাতে যে সাফল্য বা অর্জন তা ম্লান করার ষড়যন্ত্র কিনা খতিয়ে দেখা উচিত।

যোগাযোগ করলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, বিসিজি সিরিঞ্জ, আইভিপি টিকা এবং টিকাদান কার্ড, ট্যালি শিট ইত্যাদি ইপিআই সামগ্রীর সরবরাহ নেই এটি সত্য। আমরা ঢাকায় চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। আশাকরি, সংকট কেটে যাবে।

নবজাতক ও শিশুরা পোলিও এবং যক্ষ্মার ঝুঁকিতে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পোলিওর ঝুঁকি নেই বললেই চলে কারণ আমরা পোলিওর খাওয়ার টিকা কনটিনিউ করতে পারছি। নবজাতক মায়ের গর্ভ থেকে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে আসে, জন্মের পর শালদুধসহ ছয় মাস বুকের দুধ পান করার ফলে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে তা ক্ষয় হতে কিছুটা সময় লাগে।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টিকাদান কার্ডটি শিশুর জন্মনিবন্ধন, স্কুল ভর্তি, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের মাঠকর্মীরা অনেক জায়গায় ফটোকপি করে টিকাদান কার্যক্রম সচল রেখেছে। যখন কার্ড সরবরাহ করা হবে তখন সংশ্লিষ্টদের মাস্টারকপি দেওয়া হবে।     

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬

এআর/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ