চট্টগ্রাম : ‘রাউজানের নোয়াপাড়ায় মাস্টারদার বাস্তুভিটা পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘ ১০ বছর মামলা চালিয়েছি। এত বড় একজন বীরের সম্পত্তি যদি শত্রুসম্পত্তি হয়, তা লজ্জার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মদিনে বাংলানিউজকে এ কথা বলেন সূর্যসাথি খ্যাত জীবন্ত কিংবদন্তি বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী।
মোমিন রোডের বাসায় বিনোদ বিহারী চৌধুরী আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘দেশমাতৃকার জন্য হাসিমুখে প্রাণ উৎসর্গকারী মাস্টারদার নামে চট্টগ্রামে একটি সড়কের নামকরণও হয়নি। একটি বিবৃতিতে জেনেছিলাম, তৎকালীন মেয়র একটি সড়কের নামকরণের জন্য ঢাকায় প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু অ্যাপ্রুভড হয়নি। কথাটা কতটা সত্য জানি না। ’
বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী আশা করেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর একটি সড়কের নাম মাস্টারদার নামে হবেই। কেউ না কেউ এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসবেন। ’
বিপ্লবী বিনোদ বিহারী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে কথা দিয়েছিলেন, জালালাবাদ পাহাড়ে স্মৃতিস্তম্ভ গড়বেন। আপনারা দেশের জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন। চট্টগ্রামকে কয়েকদিনের জন্য স্বাধীন করেছিলেন। আমিই জালালাবাদ পাহাড়ে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তুলব। কিন্তু পঁচাত্তরে জাতির জনকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কারণে তা আর হয়নি। ’
বর্তমানে আমরা শিল্পমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছি মাস্টারদার সৈনিকদের স্মৃতি বিজড়িত জালালাবাদ পাহাড়ে উপযুক্ত স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হোক। যাতে নবীন প্রজন্ম বীরসেনানিদের নাম ও আত্মত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।
মাস্টারদা সূর্য সেনের গৌরবগাথা ও কর্মকীর্তি তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শতবর্ষী এ বিপ্লবী আজীবন লড়াই করে আসছেন। তিনি মাস্টারদার একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, এটা মাস্টারদার আসল ছবি নয়, শিল্পী এঁকেছেন।
ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু টাকা দিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারদার নামে স্মারক বক্তৃতা চালুর জন্য। দীর্ঘ ১০ বছর কোনো সাড়া মেলেনি। গত বছর একটা অনুষ্ঠান হয়েছে। এ বছর এখনো হয়নি। ’
আরেকটি স্মারক বক্তৃতা চালুর জন্য এশিয়াটিক সোসাইটিকে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। কথা ছিল এর সঙ্গে তারা ২ লাখ টাকা দিয়ে মোট ৫ লাখ টাকার তহবিল করে প্রতিবছর অনুষ্ঠান করবে মাস্টারদার নামে। আশা করি, তারা নিশ্চয়ই তা করবে। ’
জন্মদিনের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১২ জানুয়ারি মাস্টারদার ফাঁসি দিবস বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করি আমরা। আমি মনে করি, একজন মহানায়ক হিসেবে মাস্টারদার জন্মদিনটি আজও উপেক্ষিত। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী করে শিখবে জাতীয় কর্মবীরদের কীভাবে শ্রদ্ধা জানাতে হয়, কীভাবে সম্মান করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতো তরুণদেরই উদ্যোগী হতে হবে। ’
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট ড. তপন কুমার নাথ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজনের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য ছেলেরা সবাই এখনো হলে আসেনি। তাই অনুষ্ঠান রাখিনি আজ। ’ তিনি জানুয়ারিতে মাস্টারদা সূর্যসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বড় অনুষ্ঠান করা হয়েছিল বলে জানান।
চট্টগ্রাম নগরীর রহমতগঞ্জের জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে ১৯৭৫ সালের ১৮ এপ্রিল স্থাপিত হয়েছিল মাস্টারদা সূর্য সেনের আবক্ষমূর্তি। বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থা ও সূর্য সেন স্মারক প্রতিমূর্তি কমিটি কলিকাতার সৌজন্যে বাংলাদেশ সূর্য সেন স্মৃতিরক্ষা সংসদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে স্থাপিত ওই মূর্তির ফলকে লেখা আছে ‘বিপ্লবী মহানায়ক সূর্য সেন, জন্ম: ২২ই মার্চ ১৮৯৪, ফাঁসী: ১২ই জানুয়ারী ১৯৩৪’।
এখানে মাস্টারদা’র মূর্তির সঙ্গে আরও আছে যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত, নেলী সেনগুপ্ত, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও মহিমচন্দ্র দাশের আবক্ষমূর্তি।
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, প্রতিবছর ১২ জানুয়ারি ফাঁসি দিবসে মাস্টারদা সূর্য সেনের আবক্ষমূর্তিসহ অন্যগুলোতেও ফুলের মালা পরিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু জন্মদিনে কোনো কর্মসূচি থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১২
আল রাহমান
সম্পাদনা : আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর