ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

অনন্য স্বাদের খেজুর রস

বেলাল হোসেন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৪
অনন্য স্বাদের খেজুর রস ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুর (বগুড়া): রস নেবেন, রস... খেজুর রস... রসওয়ালাদের (গাছি) এমন ডাকে এককালে গ্রাম বাঙলার মানুষের ঘুম ভাঙতো।

শীতের সেই কাকডাকা ভোর থেকেই মানুষ খেজুর রস কিনতে বালতি, জগ, মগ, গ্লাসসহ বিভিন্ন বাসন নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতেন রস বিক্রেতাদের অপেক্ষায়।

শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধসহ বাড়ির সবাই সেই রসে মুড়ি ভিজিয়ে মজা করে খেতেন। আর বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুর রসের পিঠা, পুলি আর পায়েস খাওয়ার ধুম।

বাংলানিউজের এই প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই খেজুর রস নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ গাছি মজু সরকার।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। আজ বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই মানুষটি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে খেজুর রস সংগ্রহ করে চলেছেন। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন তিনি।

বার্ধক্যের কারণে রোগবালাই বাসা বেঁধেছে শরীরে। চোখেও দেখেন না ঠিকমতো। তবে সংসারের অভাব এ বয়সেও তাকে গাছে উঠতে বাধ্য করছে। ফজরের আজানের আগেই হাতে হাড়ি, ছ্যান (ধারালো কাস্তে) আর কোমরে দড়ি লাগিয়ে ছোটেন রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। দড়ি মাঝায় লাগিয়ে উঠে পড়েন গাছে। এরপর গাছ পরিষ্কারে (গাছ ঝোড়া) ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবেই মজু সরকার নিজ গ্রাম সাধুবাড়ি ও পাশের মামুরশাহী গ্রামের প্রায় সব খেজুর গাছ থেকেই রস সংগ্রহ করেন।     
 
তিনি জানান, রস সংগ্রহ শেষে অর্ধেক রস গাছের মালিকদের দিতে হয়। আর বাকি রস বিক্রি করে অভাবের সংসারের খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। বর্তমানে প্রতি লিটার রস ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বছরের বাকি সময় দিনমজুরের কাজ করে তাকে সংসার চালাতে হয়।   

বৃদ্ধ গাছি মজিবর রহমান ও লোকমান হোসেনেরও একই অবস্থা।

এ বয়সেও তারা শীতের প্রতিদিন ভোর বেলায় গ্রাম ও শহর ঘুরে রস বিক্রি করেন।

তবে এখন রস সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয় তাদের। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এ উপজেলায়ও খেজুর গাছ কমে গেছে। বাড়তি মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে দিন দিন গাছপালা ও বনাঞ্চল উজার করা হচ্ছে। আর এসব কারণে অন্যস্থানের মত এখানেও খেজুর গাছ আঙ্কাজনক হারে কাটা পড়ছে।

তারপরও উপজেলার বরেন্দ্রখ্যাত শাহবন্দেগী, মির্জাপুর, কুসুম্বী, বিশালপুর, ভবানীপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে এখনও অসংখ্য খেজুর গাছ রয়েছে। এসব এলাকার গাছিরা বাংলানিউজকে জানান, তারা বেশ আগে ভাগেই গাছ পরিষ্কারের কাজ শেষ করে এনেছেন। এরই মধ্যে অনেক গাছ থেকে রসও পাওয়া যাচ্ছে।

শীতের সুস্বাদু প্রাকৃতিক পানীয় খেজুর রস সব শ্রেণিপেশার মানুষের নিকট কোমল পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গাছিরা জানান, পুরো শীতকাল এই রস সংগ্রহ চলবে। খেজুর রসকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ জনপদে জমে ওঠে ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব। অনন্য স্বাদের খেজুর রস দিয়েই পুরো মৌসুমজুড়ে চলে পিঠা, পুলি আর পায়েস তৈরির ধুম। কাঁচা, পাকা সব ভাবেই পান করা যায় খেজুর রস। গ্রামের ঘরে ঘরে খেজুর রস দিয়ে পিঠা, পায়েসের পাশাপাশি তৈরি হয় মুড়ির মোয়া, পাটালি (শক্ত) ও ঝোলা (তরল) গুড়।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।