শ্রীমঙ্গল: ‘গাছের গোড়ায় গর্ত করে ব্যাঙ বেঁধেছে বাসা,/ মনের সুখে গাল ফুলিয়ে গান ধরেছে খাসা’। সুকুমার রায়ের ‘বড়াই’ ছড়াটি হঠাৎ মনে পড়ে গেল গাছের গর্ত বা খোঁড়ল দেখে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গভীরে বিচরণের সময় হঠাৎ চোখে পড়ল এ গাছটি। সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম। স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেল, গাছটির নাম মেন্দা। এই গাছের ছাল, বাঁকল মেশিনে মিহিগুঁড়া করে মশার কয়েল তৈরি করা হয়। মূল্যবান মাঝারি আকারের এ গাছটি নিচের দিকে একটি গর্ত। তাতে জমে রয়েছে খানিকটা পানি।
খোঁড়ল অনেক রকমের রয়েছে। গাছের প্রকারভেদে খোঁড়লের আকার-আকৃতির তারতম্য ঘটে। কোনো কোনো খোঁড়লে আবার পানিও জমা থাকে। মশা, ব্যাঙ বা তার সমগোত্রীয় কোনো প্রাণী সেই পানিতে বসে থাকে।
আবার শুকনো খোঁড়লও রয়েছে। খোঁড়ল থেকে খুঁড়লে শব্দটি এসেছে। আর এই শব্দে আশ্রিত হয়ে খুঁড়লে পেঁচা (Spotted Owlet) নামক আমাদের দেশের একটি বিশেষ পাখির নামকরণ করা হয়েছে। সে খোঁড়লে থাকে বলে তার এ বৈশিষ্ট্য নামটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাকে স্পষ্ট পরিচিতি দান করছে। তার জীবনপ্রণালির অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে এই খোঁড়ল বা গর্ত।
অন্যদিকে কাঠ ঠোকরাদের (Woodpecker) কর্মচঞ্চলতা বনের নির্জনতা ভাঙে! এরা কীটপতঙ্গ খোঁজার সময় বা খোঁড়ল তৈরির জন্য গাছের গায়ে তাদের সুদৃঢ় লম্বা ঠোঁটের ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। তাতেই কিছুটা উচ্চৈঃস্বরের শব্দ তৈরি হয়।
চিরসবুজ বনে হঠাৎই হঠাৎই নামে বৃষ্টি। অনেকটা মুষলধারায়। সেই বৃষ্টিকণা গিয়ে জমা হয় গাছের গর্তে। সেই বৃষ্টিধারাকে বুকে জড়িয়ে রাখে গাছ। কোনো কোনো ছোট্ট প্রাণীর বংশবিস্তারে এমন খোড়লই একমাত্র অবলম্বন। এই খোড়লই নবজীবনে সাক্ষী হয়ে থাকে কোনো পাখি, ব্যাঙসহ অনেক প্রাণীদের ছানা বা সন্তান উৎপাদনে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৪