ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিশ্ব বন দিবস আজ

ছোট হয়ে গেছে লাউয়াছড়া!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৫
ছোট হয়ে গেছে লাউয়াছড়া!

শ্রীমঙ্গল: ৮০০ একর এরইমধ্যে দখল হয়ে গেছে! অবশিষ্ট মাত্র ৪৫০ একর। মূল বনের তিনভাগের একভাগ! অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীনদের দখলের কারণে ছোট হয়ে গেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।



জীববৈচিত্র্যের মহামিলন ক্ষেত্রে মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল এই লাউয়াছড়া। কিন্তু দখলকারীদের উচ্ছেদ করে প্রাকৃতিক বনায়ন সৃষ্টিতে নেই কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
 
২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস। ‘জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বন’- এ শ্লোগান নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক সভায় বন ও বনভূমির নিরাপত্তা রক্ষার্থে ২১ মার্চকে আন্তর্জাতিক বন দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়।  

 
বিশ্ব বন দিবসে লাউয়াছড়াকে দখলমুক্ত করার আহ্বান জানান প্রাণিবিদ্যা ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।   
 
আমাদের দেশের অন্যান্য সংরক্ষিত বনগুলোর আয়তনের তুলনায় লাউয়াছড়া ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণির এক জীবন্ত-সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সাথে সাথেই নানা ধরনের পাখির ডাক এবং কীটপতঙ্গের ‘সাইরেন’ শোনা যায়।

আক্ষেপের বিষয় হলো এই ছোট বনটিকে আরো ছোট করে ফেলা হচ্ছে!
 
এছাড়াও লাউয়াছড়াকে বলা হয় নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেস্ট। প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য উপযুক্ত বন। সূর্যের আলো গায়ে মাখার প্রতিযোগিতায় নেমে একেকটি গাছের মাথা ছাড়িয়ে যায় অন্যটিকে। ঘন হয়ে থাকা গাছগুলোর জন্য সূর্যালোক মাটি স্পর্শ করতে পারতো না। কিন্তু আজ কোথায় সেই লম্বা লম্বা বিশালাকৃতির গাছগুলো?
 
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের আওতাধীন মৌলভীবাজার রেঞ্জের অধীন চাউতলী, কালাছড়া ও লাউয়াছড়া বন বিটের প্রায় ৮০০ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন প্রভাবশালীরা।

১৯৯৬ সালে এই বনের কমলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ভানুগাছ অংশের ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। যা আজ স্রেফ ৪৫০ একরে দাঁড়িয়েছে।
 
দখল শুরু হয় গোড়া থেকেই। ১৯৯৬ সালেই ইউএসএইডের অর্থায়নে তৎকলীন নিসর্গ সাপোর্ট প্রজেক্ট (বর্তমানে ক্রেল এর তত্ত্বাবধানে) ওই জাতীয় উদ্যানে জরিপ চালিয়ে লংগুরপাড়, বাগমারা, ছাতকছড়া এলাকায় ৫৫৬ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে বলে তাদের প্রতিবেদনে জানায়।
 
সূ্ত্র জানায়, গত কয়েক বছরে লাউয়াছড়া উদ্যানের ৮০০ একরেরও বেশি বনভূমি বেদখল হয়ে গিয়েছে। দখল হওয়া এসব বনভূমিতে গড়ে উঠেছে জনবসতি। লেবু, আনারস আর নানা জাতের রবিশস্য আবাদ হচ্ছে। তার থেকে বড় কথা – এ দখলপ্রক্রিয়া থেমে নেই। প্রতি বছর দখলের হাত আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। সংরক্ষিত বনের গাছ, বাঁশ, বেত কেটে পাচার করা হচ্ছে।
 
বর্তমানে দখলদাররা প্রতিনিয়তই বন উজাড় করে চলেছে। আর এতে বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল।
 
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম।
 
                              
জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। লাউছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণি রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি দেখা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন বিপন্ন ও দুর্লভ প্রজাতির জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ।
                              
প্রখ্যাত বন্যপ্রাণি গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, কিছু প্রাণি এখানে রয়েছে যারা পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন। তাই সবার আগে লাউয়াছড়া বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হবে।
 
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. সারওয়ার আলম দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, লাউয়াছড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এ ব্যাপারে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময় ১০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।