শ্রীমঙ্গল: আমাদের সব রকম আনন্দ-বেদনার টুকরো টুকরো অংশগুলো যিনি প্রকাশ করে গেছেন গভীর নান্দনিক সৌন্দর্যে, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই প্রকাশতালিকা থেকে বাদ পড়েনি বাংলার পাখিরাও।
দোয়েল
ক্ষণিকা কাব্যগ্রন্থের এক গাঁয়ে শীর্ষক বিখ্যাত কবিতায় কত অপূর্বভাবেই আমাদের জাতীয় পাখিকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ‘আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি, সেই আমাদের একটি মাত্র সুখ, তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি, তাহার গানে আমার নাচে বুক। ’ ভালোবাসাময় আবেগের নিবিড়তম বন্ধন হয়ে এ কবিতাটি আজ কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে। যতবার কবিতাপ্রেমীরা এ কবিতার চরণগুলো উচ্চারণ করেন ততবার দোয়েল পাখির নাম নেচে ওঠে তাঁদের ঠোঁটে ঠোঁটে। ভোরের দিকে দোয়েলের মিষ্টি সুর প্রাকৃতিক সতেজতা ছড়ায়। এরা আমাদের দেশের জাতীয় পাখি। এদের ইংরেজি নাম Oriental Magpie-robin।
বুলবুলি
পূরবী কাব্যের অন্তর্গত শিলংয়ের চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বুলবুলিকে নিয়ে লিখেছেন— ‘বেশ আছি, এই বনে বনে যখন-তখন ফুল তুলি; নাম-না-জানা পাখি নাচে, শিস দিয়ে যায় বুলবুলি। ’ মাঝারি আকারের বৃক্ষচারী পাখি বুলবুলি। এদের রয়েছে মসৃণ দেহ, খাটো গলা ও গোলাকার ডানা। মুখে রয়েছে গোঁফ। অনেক প্রজাতির মাথায় ঝুঁটিও থাকে। কালাঝুঁটি বুলবুল আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। তবুও অনেকেই দেখননি এই সুন্দর পাখিটিকে। এদের ইংরেজি নাম Black-crested Bulbul।
শালিক
শিশু কাব্যের অন্তর্গত পুরোনো বট কবিতায় তিনি বলেছেন— ‘তোমার তলে মধুর ছায়া, তোমার তলে ছুটি; তোমার তলে নাচত বসে, শালিক পাখি দুটি। ’ মাঝারি আকারের অত্যন্ত উজ্জ্বল পালকের পাখি শালিক। এরা মাটিতে ছুটে চলতে পটু। এদের প্রায়ই দ্রুত হাঁটতে, লাফাতে ও দৌড়াতে দেখা যায়। প্রায় এগারো প্রজাতির শালিক রয়েছে আমাদের দেশে। বামুনি কাঠশালিক আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। এদের রয়েছে দারুণ গানের গলা। এদের ইংরেজি নাম Brahminy Starling।
চন্দনা
খাপছাড়া-৮ এ চন্দনা পাখিকে নিয়ে দারুণ একটি কথোপকথনমূলক কাব্য রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। পাখিওয়ালা পাখি বিক্রির জন্য চন্দনা নিয়ে এলে এটাকে নিয়ে নানান কথা বলছেন জনৈক ক্রেতা। ‘পাখিওয়ালা বলে, এটা কালোরং চন্দনা। পানুলাল হালদার বলে, আমি অন্ধ না। ’ টিয়া পরিবারভুক্ত পাখি চন্দনা। এরা ছোট থেকে মাঝারি আকারের বলিষ্ঠ পাখি। মাথা বড় ও বাঁকানো। এদের রয়েছে শক্তিশালী ঠোঁট। এরা অত্যন্ত সুদর্শন পাখি। চন্দনা টিয়াকে মানুষ খাঁচায় বন্দি করে আজ মহাবিপন্ন তালিকাভুক্ত করে ফেলেছে। এদের ইংরেজি নাম Alexandrine Parakeet।
পাপিয়া
বনফুল নাটকে পাপিয়া পাখিকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন— ‘মাথার উপরে জড়ান মালা, নদীর উপরে রাখিয়া আঁখি; জাগিয়া উঠেছে নিশীথবালা জাগিয়া উঠেছে পাপিয়া পাখি!’ কোকিল পরিবারের সদস্য পাপিয়া। এরা ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষচারী পাখি। বেশিরভাগেরই সরু ঠোঁট ও দীর্ঘ লেজ। আমাদের দেশে প্রায় বারো প্রজাতির পাপিয়ার নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। বউ কথা কও পাপিয়া আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক পাখি। ওর গলা তীব্র স্বর প্রকৃতির মাঝে বারংবার নতুন বউকে কথা বলা বিনীত আহ্বান জানায়। ইংরেজিতে একে বলা হয় Indian Cuckoo।
পেঁচা
শিশু ভোলানাথ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত দুয়োরানী কবিতায় রবীন্দ্রনাথ পেঁচা সম্পর্কে লিখেছেন— ‘তারপরে যেই অশত্থবনে; ডাকবে পেঁচা আমার মনে । ’ এরা মাঝারি আকারের নিশাচর পাখি। অন্য পাখির তুলনায় এদের মাথা বড়। বড়শির মতো তীক্ষ্ম ঠোঁট এবং শক্তিশালী পা ও নখ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় চৌদ্দ রকমের পেঁচার বিচরণ রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বিপন্ন হয়ে যাওয়া পেঁচাটির নাম লক্ষ্মীপেঁচা। এর মুখমন্ডল বড় ও অনেকটা পানপাতার মতো। অন্য পেঁচাদের থেকে এর চেহারা কিছুটা সুশ্রী। ইংরেজিতে একে বলা হয় Barn Owl।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫
এএ