ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক: ঢাকার পাশেই বিনোদন স্বর্গ!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৫
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক: ঢাকার পাশেই বিনোদন স্বর্গ! ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে ফিরে: ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।

আয়তন তিন হাজার ৪০০ একর। ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা ও নীচু ভূমিসমৃদ্ধ শালবন আমলকি, বহেরা, হরিতকি, কড়ই, পলাশ, চাপালিশসহ নানা গাছগাছালি আর  হরেক লতাগুল্মে ভরা।

তীব্র গরমেও  মনকে শীতলকরা এক মনোরম পরিবেশ। সাফারি পার্কে বাঘ, সিংহ, জিরাফ, হরিণ, বুনো মোষ, হাতি, ক্যাঙ্গারু, আলপাকা, ওয়ালাবি, স্প্রিংবক, অরিক্স ও ওয়াইল্ডবিস্টের অবাধ বিচরণ।

কয়েকটি ভাগে বিভক্ত সাফারি পার্ক। ভিন্ন ভিন্ন  স্থানে ভিন্ন ভিন্ন জীবজন্তু , পাখি ও সরিসৃপের বিচরণ।

কোর সাফারি: কোর সাফারি পার্কে গাড়ি ছাড়া দর্শনাথীদের প্রবেশ নিষেধ। চিড়িয়াখানার মতো বন্দিদশায় নেই এখানকার পশুপাখিরা। ১ হাজার ২১৭ একর এলাকায় আলাদাভাবে উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করছে জিরাফ, বুনো মোষ, হরিণ, চিত্রল হরিণ, বাঘ, সিংহ, কালো ভাল্লুক, হাতি, ক্যাঙ্গারু, গয়াল, শম্বর, জেব্রা আর জলহস্তী। কখনও জোড়ায় জোড়ায় বা দল বেঁধে। কখনো বা একা একা। যার যেমন মর্জি।
 
সাফারি কিংডম: সাফারি কিংডমে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো যাবে। প্রাণিকূলকে ছোট-খাট বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর নৈপুণ্য ও খেলাধুলা প্রদর্শনের মাধ্যমে পর্টকদের বিনোদন দেয়া হচ্ছে।
 
এখানে আছে। অসংখ্য ম্যাকাউ। আছে প্রজাপতির রাজ্য, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম, ছোট জাতের পাখিশালা, পেলিকন আইল্যান্ড।
 
অন্যদিকে আছে বৃহৎ আকারের গাছপালা ঘেরা ক্রাউন্ট ফিজেন্ট এভিয়ারি, ধনেশ এভিয়ারি, প্যারট এভিয়ারিসহ দেশি-বিদেশি পাখির পাখিশালা। দেখে সবার চোখ আর মন ভরবে।
 
কুমির পার্ক, অর্কিড হাউজ, শকুন ও  পেঁচাকর্নার, কুমিরের জন্য  জলাধার রয়েছে। এগ ওয়ার্ল্ড গেলে দেখা যাবে নানা প্রজাতির পাখি ও সরিসৃপের ডিম।
 
বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক: এই পার্ক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য বিরল, বিলুপ্তপ্রায়, দুর্লভ ও বিপন্ন প্রজাতির গাছের জিন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।   এটি ৮২০ একর এলাকা নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের উদ্ভিদ বৈচিত্রকে প্রাধান্য দিয়ে এটি তৈরি ।
 
এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক: এপার্কে গিয়ে দেখা মিলেছে এশীয় তৃণভোজী এবং মাংসাশী প্রাণি, পাখি, সরিসৃপ ও উভচর প্রাণীর। রয়েছে জলাধার, বাগান ও অজগর শেড। অজগর শেডে গেলে অনেকেরই গা ছমছম করবে। কারণ প্রায় ১০টি বড় অজগর ছেড়ে দেয়া হয়েছে এখানে। শেডের বাইরে থেকে দুটি বড় বড় অজগর দেখে ভিতরে প্রবেশের সাহস হয়নি।
 
প্র্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র: এ কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রায় সকল ধরনের বনাঞ্চলের গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর মডেল ও ম্যুরাল দেখা যাবে। প্রায় ৯৮০ ধরনের বন্যপ্রাণী ও অসংখ্য গাছগাছালির মডেল ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১২ মিনিটের একটি অডিও-ভিস্যুয়ালের মাধ্যমে দর্শকরা অপার ও নির্মল আনন্দ লাভ করতে পারবেন।
 
হাতির পিঠে চড়া: পার্কের মধ্যাংশে আনুমানিক ১৫০ হেক্টর এলাকাজুড়ে  হাতির বেষ্টনী। বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ এ বেষ্টনীতে হাতিদের অবমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। যেকোনো দর্শক হাতি দেখে ও চড়ে আনন্দে সময় পার করতে পারবেন। এ ব্যাপারে হাতির মাহুত সাহায্য করবেন।
 
জলাধার: সাফারি পার্কের অভ্যন্তরে বিচরণরত বন্য পশুপাখির জন্য জলের উৎস সৃষ্টির জন্য ৫০ হেক্টর এলাকায় ৮টি জলাধার খনন করা হয়েছে। এখানে অসংখ্য অতিথি পাখির বিচরণ। এখানে আছে ঝুলন্ত ব্রিজও।
 
পর্বেক্ষণ টাওয়ার: এখান থেকে দর্শনাথীর্রা অনায়াসে বিভিন্ন বেষ্টনীতে বিচরণরত বাঘ, জিরাফ, বুনো মোষ, সিংহ, কালো ভাল্লুক, জেব্রা ও হরিণের বিচরণ দেখতে পারবেন। মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে  সাফারি পার্কে প্রবেশ করা যাবে।
 
এই সাফারি পার্ককে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পার্কে পরিণত করতে চান সংশ্লিষ্টরা। থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ড ও ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের কিছু ধারণা নেয়া হয়েছে।
 
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সঙ্গে শুরু যুক্ত আছেন পার্কের সহকারী অফিসার  কৃষ্ণ কমল মজুমদার। পার্কের প্রতিটি স্থানেই তার পায়ের চিহ্ন লেগে আছে।
 
কৃষ্ণ কমল মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সবাই একত্রিত হয়ে নিজের সন্তানের মতো গড়ে তুলেছি সাফারি পার্কটি। এক দিন এই পার্কটি এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পার্ক হবে। শুধু দেশ নয় বিদেশ থেকেও অনেক পযর্টক এখানে বেড়াতে আসবেন। পুরো সাফারি পার্ক ঘুরে দেখতে কমপক্ষে তিনদিন সময় লাগবে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৫
 জেএম

** মা হতে যাচ্ছে সিংহী, ডিম পেড়েছে উটপাখি ও ইমু
** রেস্তোরাঁয় খেতে বসে কাচের ওপাশে দেখুন বাঘ-সিংহ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।