ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

মেলায় বৃক্ষের যাবতীয় তথ্য জানাচ্ছে বিএফআরআই

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৮
মেলায় বৃক্ষের যাবতীয় তথ্য জানাচ্ছে বিএফআরআই মেলায় দর্শনার্থীদের বৃক্ষ সম্পর্কে জানাচ্ছেন অফিসাররা, ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: শুধু বয়স বাড়লেই যে গাছ বড় হয়, তা নয়। বরং গাছের বয়স যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে যায়, তবে পরিবেশ রক্ষার বিপরীতে দূষণও হয়।

যেমন রেইন্ট্রি! আমরা ভাবি গাছ যতো বড় হবে, কাঠ ততো ভালো হবে। কিন্তু ৩০ বছর পর যদি এই গাছ কাটা না হয়, তবে কার্বনডাই-অক্সাইড শোষণ না তা ত্যাগ করবে।

তাই এটা জানা খুব জরুরি যে, কোনো গাছ কখন কাটতে হবে।

রোববার (২২ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় বৃক্ষমেলায় এমনটাই জানাচ্ছিলেন বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) রিচার্স অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান। মেলায় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্টলের মাধ্যমে জনগণকে জানাচ্ছে নানাবিধ তথ্য।

প্রতিষ্ঠানটি তাদের স্টলের মাধ্যমে তুলে ধরেছে-তাল কাঠের টেবিল, সিমেন্ট বোর্ডের নমুনা ঘর, বনজ বৃক্ষের কতিপয় ক্ষতিকর পোকামাকড়, বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদের নমুনা, কাঠের তৈরি রকমারি আকর্ষণীয় সামগ্রী, কাঠের বাটি, টেবিল ল্যাম্প, মোমবাতি স্ট্যান্ড, প্লেট ও শো-পিচ, ফুলদানি, মোজাইক টেবিল, প্লাই বোর্ড, পার্টিকেল বোর্ড, বাঁশের টাইলসসহ কাঠ ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস।

স্টল ঘুরে কাঠের সিমেন্ট বন্ডেজ আর বাঁশের টাইলস দেখে অবাক হয়েছেন ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী মারিয়া ইয়াসমিন অবাক। এসময় তাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেন স্টলে থাকা ফরেস্ট রেঞ্জার নাসির হোসেন। তিনি বলেন, কাঠের সিমেন্ট বন্ডেজ হলো বাঁশ-কাঠের গুড়া আর সিমেন্টের সংমিশ্রণে তৈরি। এটি সাধারণ বোর্ডের মতোই ব্যবহার করা যায় এবং এর সব থেকে বড় গুণ হলো এ বোর্ড পানি, আগুন, শব্দ এবং তাপ নিরোধক। সঙ্গে খরচও অনেক কম।

অপরদিকে প্রসেস করা বাঁশে আঠা লাগিয়ে তৈরি করা হয় বাঁশের টাইলস। এটি বিভিন্ন প্যানেল ও ফার্নিচারের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একইসঙ্গে এটি নিশ্চিত করে বাঁশের বহুমুখি ব্যবহার।

এসময় রিচার্স অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বাঁশের ব্যবহার বাড়িয়ে বনজ বৃক্ষে চাহিদা কমাতে। কেননা একটি গাছ বড় হতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে, সেখানে একই সময়ে ৫ থেকে ৬ দফায় বাঁশ পাওয়া যায়। আর ক্যামিকেলের মাধ‌্যমে ঘুন ধরা বন্ধ করে দিলেই তা সেগুন কাঠের থেকেও অনেক বেশি মজবুত হয়।

স্টল ঘুরে দেখা যায়, শুধু প্রদর্শনী নয়, সকলের প্রয়োজনে এখান থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন তথ্যও। এরমধ‌্যে ঘুন পোকার আক্রমণ ও তার নিয়ন্ত্রণ, বনজ বৃক্ষ প্রজাতির মিশ্র বাগান সৃজন কৌশল, বেতের গুরুত্ব ও চাষাবাদ, আগর বৃক্ষ প্রজাতির চারার উত্তোলন ও বনায়ন কৌশল, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাঠ সনাক্তকরণ, বৃক্ষের বীজ সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ, সজিনার কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ও তার নিয়ন্ত্রণ, পানের বরজ সম্পর্কিত তথ্য, বাঁশের ঝাড় ব্যবস্থাপনা ও চাষ পদ্ধতি, বৃক্ষের চারা রোপন ও পরিচর্যাসহ কোথায় কি গাছ লাগাতে হবে তা তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন পোস্টার ও লিফলেটের মাধ্যমে।

মেলায় আগত দর্শনার্থী ও অন্যান্য নার্সারি মালিকদেরও বেশ আগ্রহ আছে এ স্টলের প্রতি। তারা এখান থেকে জেনে যাচ্ছেন নার্সারিতে গাছের চারা রোপন, পরিচর্যা এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে চারা রক্ষা করে যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি। আর ফার্নিচার মালিকেরা জানছেন, কিভাবে বাঁশের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি করা যায়।

এ প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান জানান, মেলা থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমাদের গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ও মাঠ কর্মীদের সহায়তায় আমরা এসব তথ্য পৌঁছে দেয় মাঠ পর্যায়ে।

দর্শনার্থী আব্দুল বারী চৌধুরী বলেন, স্টল ঘুরে এবং কথা বলে মনে হলো এ মহামূল্যবান তথ্য সরবরাহের প্রচেষ্টা। জাতীয় উন্নয়নে এটি অবশ্যয় গুরুত্বপূর্ণ এবং মহা উপকারী কার্যকর পদ্ধতি। এখন শুধু এর সম্প্রসারণ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৮
এইচএমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।