লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের পুরোদমে সঞ্জীবিত করে এখন অন্যরকম এক আবেশ ছড়াচ্ছে প্রকৃতি। রাস্তার ধারে ধারে বিবর্ণ হয়ে থাকা গাছগুলোতে এখন সবুজ কচিপাতা চোখ মেলছে।
এ নিয়ে মহাখালীর বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, কর্মব্যস্ত নগরী ঢাকায় এমন মনকাড়া দৃশ্য ভাবাই যায় না। সব কী সুন্দর হয়ে সেজেছে নতুন পাতা আর ফুলে। ভ্রমর আর প্রজাপতিও উড়ছে এখন আগের থেকে অনেক বেশি। লকডাউন এ পরিস্থিতির মধ্যে প্রকৃতিও প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে পেরে নিজস্ব রূপে নিজেকে মেলে ধরেছে।
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন গণপরিবহন আর জনশূন্য হয়ে ছিল ঢাকা। তার ফলেই ঢাকা এখন আর দূষণের নগরী নয়। বাতাসে নেই ভারী সিসা। দীর্ঘদিন উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকায় বাতাসে ধুলাও কম। ফুরফুরে হাওয়ায় তরতর করে বেড়ে উঠেছে সড়কদ্বীপের গাছ আর পথ বিভাজনে সংসার-পাতা ফুলগুলো। সারা বছরের ধূসরতা কেটে গেছে এ কদিনেই। আপন রূপে ফিরছে শোভা বাড়ানোর জন্য লাগানো লতাগুল্ম।
নগর কর্তৃপক্ষের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন গাছগুলারে দেখলে মন ভরে যায়। কী সুন্দর সবুজ হয়ে উঠছে। সাধারণত এমন সময় সবুজ দেখা যায় না, ধুলার পরত পড়ে থাকে।
রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ, ধানমন্ডি, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী এবং বিমানবন্দর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, পথের দু'পাশে লাগানো গাছগুলোতে নতুন সবুজপাতায় রোদ পড়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। পথ বিভাজনের ফুল গাছ, লতাগুল্মগুলোও সতেজ হয়ে উঠেছে।
এদিকে, জনবহুল ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বাতাস নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল। মূলত নির্মাণ কাজের নিয়ন্ত্রণহীন ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা প্রভৃতি কারণে রাজধানীতে দূষণের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে করোনা পরিস্থিতি এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে কমেছে দূষণ। দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় পিছিয়েছে ঢাকার নাম। সহনশীল হয়েছে ঢাকার বায়ুমানও।
গবেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনের কারণেই বাতাস ও প্রকৃতির এমন পরিবর্তন। লকডাউনের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকা, সবধরনের শিল্প কারখানা বন্ধ থাকা, এমনকি মানুষও করোনার জন্য ঘর থেকে বের হয়নি। এজন্যেই বায়ুমানে যেমন নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তেমনি প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতিও। তবে শিল্প কারখানা ও যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পেলে ফের আগের অবস্থায় ফিরতে পারে ঢাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২০
এইচএমএস/ওএইচ/