গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেড়েছে ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীর পানি।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান এই তথ্য জানান।
এদিকে এ পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছে ১০ জন। এর মধ্যে শুক্রবারই (০৩ জুলাই) মারা যায় ৪ জন।
জানা যায়, সকালে মাদারগঞ্জে পাট কাটতে গিয়ে বন্যার পানিতে পড়ে কমল মিয়া (৫৫) নামে এক কৃষক মারা যান। তিনি উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের বেড়া গ্রামের দোলায়ার হোসেনের ছেলে।
এদিকে, দুপুরে বকশীগঞ্জ পৌর এলাকায় কাগমারীপাড়া গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে জিসান (০৩) নামে এক শিশু মারা যায়। জিসান কাগমারীপাড়া এলাকার ইরান মিয়ার ছেলে।
অপরদিকে দুপুরে জেলার মাদারগঞ্জ এলাকার আম্রিতলা গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আম্রিতলা গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে আরিফ (৩০) ও ফকির মাহামুদের ছেলে একলাস (২৮) নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়।
দ্রুতগতিতে পানি বাড়লেও কমছে খুবই ধীর গতিতে, ফলে বন্যার্তদের মধ্যে দুর্ভোগ বাড়ছে। এদিকে কয়েকদিনের মধ্যে পানি আবারও বাড়বে বলে জানিয়েছে জামালপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ বাংলানিউজকে জানান, এ জেলার প্রধান নদ নদী হচ্ছে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র। এদের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে উজানে চীন ও ভারত।
উজানে বৃষ্টি হলে দ্রুতই এসব নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। বর্তমান বর্ষা মৌসুমের প্রথমভাগে অবস্থান করছি আমরা। এ সময়টাতে ভারত বাংলাদেশ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সে কারণে খুব সহসাই পানি কমছে না। বরং আগামী সপ্তাহে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বেশি। ফলে দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে চলতি বন্যা।
পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা আরও চরম আকার ধারণ করার পাশাপাশি জন দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
যমুনার পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাইসহ শাখা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নতুন করে জামালপুর সদরের তুলশিরচর, লক্ষ্মীরচর এবং মাদারগঞ্জের চরপাকেরদহ, কড়ুইচুড়া ইউনিয়ন, বকশীগঞ্জের নিলক্ষিয়া, মেরুরচর, সাধুরপাড়া বন্যা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
সবমিলিয়ে ৭ উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪২টি ইউনিয়নসহ ৫টি পৌরসভায় আশিংক বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ। বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানীয় ও আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার প্রায় ৮০ শতাংশই পানির নিচে। কাঁচা-পাকা বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পাট, আমনের বীজতলা, আউশ ধান, সবজিসহ অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস বাংলানিউজকে জানান, জেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় ৮০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী বাংলানিউজকে জানান, জেলার ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৩০৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ৬০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।
পানিবন্দি অবস্থায় দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ৬০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলে অভিযোগ বন্যা দুর্গতদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২০
আরএ