ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

কক্সবাজার শহরের বর্জ্য থেকেই সাগরে দূষণ, হুমকিতে প্রাণীরা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২০
কক্সবাজার শহরের বর্জ্য থেকেই সাগরে দূষণ, হুমকিতে প্রাণীরা আহত দুই কচ্ছপের বেঁচে থাকার চেষ্টা/ছবি: আদনান আজাদ আসিফ

ঢাকা: সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা সামুদ্রিক কচ্ছপের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। কারো হাত নেই, কারো নেই পা।

সাগরে ছেড়ে দিলেও যেতে পারে না; ঢেউয়ে ঢেউয়ে আবার ফিরে আসে সৈকতে। আহত কচ্ছপগুলোর মধ্য থেকে দুটোকে কৃত্রিম লবণাক্ত ডোবা তৈরি করে বাঁচিয়ে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চলছে। অঙ্গহীন হলেও ওরা এখনো প্রাণে বেঁচে আছে।
 
প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ তার সরেজমিন অভিজ্ঞতায় বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি আমি ৪টি মৃত কচ্ছপ পেয়েছি। এমনকী সৈকতের যে কুকুরগুলো আছে তারা কচ্ছপ ধরে ধরে খাচ্ছিলো। বনবিভাগ, পরিবেশ বিভাগ সবাই উদাসীন। কেউ এগুলোর কোনো খবর নেয়নি। কুকুরের খাবারের শিকার হয়ে যে কয়েকটা কচ্ছপ মারা গেছে আমি কয়েকটাকে বিচের বালি গর্ত করে বালিচাপা দিয়েছি। একটা মৃত ডলফিন পেয়েছি; হাঙর পেয়েছি।

সাগরে ফেলে দেয়া জালে আটকা পড়েছে কচ্ছপ/ছবি: আদনান আজাদ আসিফ তিনি বলেন, যে কচ্ছপগুলোর হাত এবং পা নেই, একদম আলাদা- এমন কচ্ছপগুলোকে আমি বনবিভাগের ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের প্রধান জহির আকন্দের মৌখিক অনুমতি নিয়ে কক্সবাজারের একটি ফাইভস্টার হোটেল মালিকের সহযোগিতায় কৃত্রিম ডোবার ভিতরে ওগুলোকে আমি ট্রিটমেন্ট দিয়ে যাচ্ছি। কারণ, সাগরে ছাড়লে তো এরা যেতে পারছে না। ওখানে থাকলে কুকুর খাবে। যেহেতু কেউই আসছে না সৈকতের কচ্ছপগুলোকে সহায়তা করার জন্য; তাই আমার নিজের জ্ঞানে যা আছে তাই দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। দু’টি কচ্ছপ আমি হাত-পা ছাড়া হলেও জীবিত রাখতে পেয়েছি।
 
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে- বিদেশি জাহাজ হাজার হাজার টন বর্জ্য বাংলাদেশি সমুদ্রসীমায় ফেলে দিয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো সরেজমিনে কাজ করে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও পর্যবেক্ষণের আলোকে বুঝলাম স্থানীয় কক্সবাজারের বর্জ্যই সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। ওনারা কী তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এমন কথা বললেন?
 
‘যেসব বোতল ভেসে এসেছে তার প্রায় সবই বাংলাদেশি কোম্পানির। আর সাথে যেগুলোকে বিদেশি বলা হচ্ছে থাইল্যান্ড বা মিয়ানমার– এগুলো সব বাংলাদেশে পাওয়া যায়। কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেটে এগুলো বিক্রি করে। কক্সবাজারে শুধু শত শত দোকান নয়; শত শত বার্মিজ মার্কেট রয়েছে। ’

বর্জ্যের ভেতর আহত কচ্ছপ/ছবি: আদনান আজাদ আসিফ
এই যে কচ্ছপগুলো এভাবে আহত অবস্থায় এখানে এলো- এর দায় কার? বনবিভাগকে বললে বলে- এটা পরিবেশ বিভাগের ব্যাপার। পরিবেশ বিভাগকে বললে বলে যারা সমুদ্র গবেষণার সঙ্গে যুক্ত তাদের ব্যাপার। আহত কচ্ছপগুলো সাগরপাড়েই মরে পড়েছিল।  
 
আরো অবাক বিষয় হলো- দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের বিচে কচ্ছপ সম্পর্কে নানা তথ্য সাইনবোর্ডে লিখে রেখেছে সি টার্টেল এলিয়েন নামে একটি সংগঠন। পুরো এলাকাজুড়ে ‘মেরিনলাইফ অ্যালিয়েন্স’ নামে একটি সংস্থার অসংখ্য সাইন বোর্ড থাকলেও কচ্ছপ উদ্ধার কর্মকাণ্ডে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। যে কচ্ছপ নিয়ে তারা প্রজেক্ট করেছে; সেই একই জায়গায় কচ্ছপগুলো আহত অবস্থায় পানিতে ভেসে চলে এলো- এখন তারা নীরব কেন? নাকি এই প্রজেক্ট থেকে আর্থিক নানান সুযোগ-সুবিধা নিতেই থাকবে? নিজেদের এছাড়া কোনো দায়িত্ব নেই।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত বন্যপ্রাণি গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, যে কোনো বর্জ্যই কোনো অবস্থাতে সাগরে ফেলা যাবে না। এর ফলে সামুদ্রিক পরিবেশের বিপর্যয়সহ সাগর আশ্রয় করে বেঁচে থাকা অসংখ্য প্রাণীদের জীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। স্থানীয় প্রশাসনকেই এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে।

কচ্ছপ নিয়ে কাজ করা সংগঠনের সাইনবোর্ড/ছবি: আদনান আজাদ আসিফ
সচেতনতার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় পরিবেশ-পরামর্শক বিশ্বজিৎ সেন বাঞ্চু বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে বর্জ্য ফেলা রোধে মানুষকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য দপ্তর এবং জনসাধারণকে সচেতনতার সঙ্গে সাগরের দূষণ রোধে কাজ করে যেতে হবে। তবেই সাগরে সুস্বাস্থ্য ফিরে আসবে।  
 
সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশবাদী সংগঠনসহ স্থানীয় সামাজিক কর্মীদের নিয়ে সম্প্রতি সৈকতের সমস্ত বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। সৈকতের নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে হিমছড়ি পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় বারো কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পড়ে থাকা বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমাদের এ কার্যক্রম আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন>>সৈকতে ভেসে আসা সব বর্জ্য দেশি


বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।