ঢাকা: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কচ্ছপসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যুতে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। এই কমিটি এর কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করছে।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্ট ওশানোগ্রাফি ক্লাইমেট বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সমুদ্রসৈকতে প্রাণীদের মৃত্যুতে গঠিত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির গবেষক আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই-কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শতাধিক সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু গভীর বেদনার একটি বিষয়। আমি তো নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ময়লা-আবর্জনা দেখে ভীষণভাবে অবাক হয়েছি। এগুলো দেখে আমার এমন মনে হচ্ছিল যে- আমি আসলে সারাদিন ধরে খেতে খেতে রাত দশটায় হঠাৎ আমার পেটে গণ্ডগোল হলো এবং আমি বমি করে ফেললাম!
‘তার মানে হচ্ছে- আমাদের বিচের আশপাশের কোনো একটা জায়গায় আবর্জনা জমতে জমতে এমন একটা দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি হয়েছে যে সমুদ্র আর সহ্য করতে পারছিল না, অবশেষে সব বিচে ঢেলে দিয়ে দিল। আমি ওভারলোডেড হয়ে গেছি! আমার কাছে তা-ই মনে হয়েছে। তবে এর সুস্পষ্ট কারণ আপনারা আগামী বছর নাগাদ জানতে পারবেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব রাখবো। যদি অনুমতি পাই তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে আমরা গবেষণায় নামবো।
শহরের আবর্জনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের কক্সবাজারের আবর্জনাগুলো তো সমুদ্রের পাশেই ফেলা হয়। সেই ময়লাগুলো কোথায় ওয়াশআউট হয়েছে তাও তদন্ত করে দেখতে হবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে, আহত কচ্ছপ উদ্ধারের মাধ্যমে দেখা গেছে কারো হাত নেই, কারো পা নেই। এটা আসলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান তার শারীরিক সমস্যা। জেলেরা মাছ ধরার সময় তাদের অপ্রয়োজনীয় জাল সাগরে ফেলে দেয়। সেই ফেলে দেওয়া জালে জড়িয়ে সমুদ্রের প্রাণীরা এভাবে আহত হয়ে থাকতে পারে। তবে কিছু কিছু বিষয় এখনো আমরা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হইনি। পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে বলা উচিত নয়।
‘এছাড়াও সাগরের ‘ফিজিক্যাল ফোর্স’ বিষয়ক জরুরি বিষয় এখানে জড়িত। তা হলো- আমাদের সমুদ্রের লাবনী পয়েন্ট থেকে শুরু করে হিমছড়ি পর্যন্ত শুধু ১০ কিলোমিটারে এই আবর্জনাগুলো দেখা গেলো। বাংলাদেশের আর কোনো দর্শনীয় স্থানে কি এগুলো দেখা গেছে? যেমন ধরেন- কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবনে? তার মানে হচ্ছে কী- যেমন ধরেন আপনি একটা বদনার পানি যখন ঢালা শুরু করবেন তখন তো নলের পানিটাই আগে পড়বে। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন- মানচিত্রের দিকে পাটুয়ারটেক থেকে শুরু করে মহেশখালীর মাথা পর্যন্ত সেই জায়গাটা ধনুকের মতো বাঁকা এবং মহেশখালী চ্যানেল দিয়ে হাইটাইডের (জোয়ার) সময় প্রচুর পানি ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ পায়।
‘সুগন্ধা, লাবনী, এবং হিমছড়ি এই রিজিওন দিয়ে হাঁটা শুরু করলে এক পর্যায়ে গিয়ে ৫ মিটার এবং পরে ১০ মিটার গভীরে নেমে যায় পথ। গবেষকরা ধারণা করছি- হিমছড়ি পটেকটাতে খুবই কম ঢালুর একটা প্লেন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ভেসে আসছে- ওগুলো অনেক দিন ধরে জমা হয়েছিল’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কচ্ছপ মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য কচ্ছপের স্যাম্পল ল্যাবে পাঠানো হয়েছে, রিপোর্ট এখনো আসেনি। এছাড়াও সমুদ্রসৈকতে প্রাণীদের মৃত্যুতে এডিসি মোহাম্মদ আশরাফুল আফসারকে প্রধান করে তদন্তকমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২০
বিবিবি/এএ