ঢাকা: বর্তমানে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে। আবাসস্থল উজাড় ও অবৈধ চোরা শিকারের ফলে বাংলাদেশের জাতীয় পশু ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এই বাঘ এখন ‘বিপদাপন্ন’ অবস্থায়।
বুধবার (২৯ জুলাই) দেশে ‘বাঘ বাড়াতে করি পণ, রক্ষা করি সুন্দরবন’ প্রতিপাদ্য ধারণ করে বিশ্ব বাঘ দিবস-২০২০ পালিত হয়েছে। বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বন বিভাগের সহযোগিতায় ২০১৯ সালে সুন্দরবনে বাঘের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। সুন্দরবনে সর্বশেষ চালানো জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন এবং ঘনত্ব অনুযায়ী অন্তত ২০০টি বাঘ থাকার কথা।
পরিবেশবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং বাঘ গবেষকদের মতে, আবাসস্থল ধ্বংস, চোরা শিকার, চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবন এবং বাঘ একে অপরের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। বাঘ বাড়ানোর জন্য যেমন সুন্দরবন সংরক্ষণ প্রয়োজন, ঠিক একইভাবে সুন্দরবন রক্ষা করতেও বাঘের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। বাঘ বাগানের মালীর ন্যায় ভূমিকা পালন করে। মালী যেমন বাগানের ডালপালা ছেটে, অপ্রয়োজনীয় গাছ কেটে ফেলে এবং বাগানকে রক্ষা করে, বাঘও ঠিক তেমন করে সুন্দরবনকে রক্ষা করে। বাঘের আবাসস্থল হচ্ছে সুন্দরবন, বাঘের সংখ্যা বাড়াতে হলে সুন্দরবনকে সংরক্ষণ করাটাও অনেক জরুরি।
এ গবেষক আরও বলেন, সুন্দরবনের মাঝখান দিয়ে পশুর, শিবশাসহ আরও অনেক বড় বড় নদী প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীগুলোর কারণে বন অনেকটা ভাগ হয়ে গেছে। যেটাকে বলে বন বিভাজন (ফরেস্ট ফ্রাগমেন্টেশন)। অপরদিকে এসব নদী দিয়েই বড় বড় বাণিজ্যিক নৌজাহাজ চলাচল করে। নদীগুলোতে রাতে জাহাজ অবস্থান করার সময় বাতি জালিয়ে রাখা, শব্দদূষণ এবং নানা রকম কার্যক্রম করতে দেখা যায়, ফলে বাঘের চলাচল অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আলো বাঘের চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে। বাঘের পপুলেশন যত কম হয়, জেনেটিক্যাল ডাইভারসিটি তত কম হয়।
‘জেনেটিক্যাল ডাইভারসিটি কমে গেলে দীর্ঘমেয়াদে বাঘের টিকে থাকার সক্ষমতা কমে যায়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। সুতরাং জেনেটিক্যাল ডাইভারসিটি বাড়ানো উচিত। আমার পরামর্শ হচ্ছে, সাতক্ষীরার একটি বাঘ যদি লোকালয়ে চলে আসে, আমরা যদি সেটাকে উদ্ধার করতে পারি, তাহলে সেটাকে খুলনার সুন্দরবন অংশে ছেড়ে দিতে পারি, তাহলে বাঘের জেনেটিক্যাল ডাইভারসিটি বাড়বে। এছাড়াও রাতের বেলা যে জাহাজগুলো চলাচল করবে, সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে শব্দ এবং আলো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা। যেন রাতের বেলা বাঘ নদীগুলো দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। ’
বাঘ বাড়ানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ অধ্যাপক বলেন, বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার যে অঙ্গীকার, সেটা করতে হলে আমাদের প্রথম কাজ হবে বাঘের চোরা শিকার বন্ধ করা। গবেষণায় দেখা যায়, চোরা শিকার বন্ধ করতে পারলে বাঘের সংখ্যা আপন গতিতেই বাড়বে। একই সাথে বাঘের আবাসস্থল সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনের দূষণ এবং জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২০
আরকেআর/এইচজে