মৌলভীবাজার: সদ্য ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা উল্টানো মার্চ মাসে দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সিলেট এবং শ্রীমঙ্গলে। পাহাড়ি এলাকাবেষ্টিত এই দুই এলাকায় দেশের অন্য অঞ্চল থেকে অনেক বেশি।
শুধু বৃষ্টিপাত নয়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ৯ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ঘরটি দখল করে ছিল শ্রীমঙ্গল। বিগত ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ দিন শ্রীমঙ্গল ধরে রেখেছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। মার্চ মাসের অপর ২২টি দিন দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে তেঁতুলিয়া, রাজারহাট, বদলগাছি এবং সীতাকুন্ড রয়েছে। আরও উল্লেখযোগ বিষয় হলো-১৭ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ এ ৩ দিন ধারাবাহিকভাবে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল শ্রীমঙ্গলেই।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতি থেকে শীত মুছে গিয়ে ঋতুরাজ বসন্ত আসায় ধীরে ধীরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সংখ্যাগুলো ক্রমবর্ধমান। ১ মার্চ শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ৩১ মার্চ সেই তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটিই ছিল গতকাল বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, যে ৯টি দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড করা হয়েছে সে তারিখগুলো যথাক্রমে: ১৩ মার্চ ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৫ মার্চ ১৬ দশমিক ৭ ডি.সে, ১৭ মার্চ ১৭ দশমিক ২ ডি.সে, ১৮ মার্চ ১৫ দশমিক ৮ ডি. সে, ১৯ মার্চ ১৬ দশমিক ৪ ডি. সে, ২৩ মার্চ ১৬ দশমিক ৪ ডি.সে, ২৪ মার্চ ১৮ দশমিক ২ ডি.সে, ২৮ মার্চ ১৫ দশমিক ৩ ডি.সে, এবং ৩১ মার্চ ১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র আরো জানায়, শুধু সব দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাই নয়, পুরো মার্চজুড়ে সিলেট এবং শ্রীমঙ্গলেরই দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম প্রধান ফসল চা এর জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। ৭ মার্চ, ৯ মার্চ, ৩০ মার্চ এবং ৩১ মার্চ সিলেটের মোট রেকর্ডকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৩১ মিলিমিটার। আর সেই তারিখগুলোতে শ্রীমঙ্গলে মোট বৃষ্টিপাত ১১৬ মিলিমিটার।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অবহাওয়া সহকারী আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে তুলনামূলকভাবে সিলেট-শ্রীমঙ্গলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। এর অন্যতম কারণ এ দু’টি এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল। মেঘ কিন্তু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বাতাসে ভেসে বেড়ালেই যে বৃষ্টি হবে তা কিন্তু নয়। বাতাস জলীয় বাষ্প নিয়ে বয়ে বেড়ানোর সময় সেই মেঘ যদি অপর দিক থেকে আসা মেঘের সঙ্গে ধাক্কা খায় বা কোনো কিছুর সঙ্গে যখন বাঁধাপ্রাপ্ত হয় তখনই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এজন্যই সিলেট-শ্রীমঙ্গল পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বেশি। এছাড়া ভৌগলিকগত কারণেও রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিটিএ), সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং অভিজ্ঞ টি-প্ল্যান্টার জিএম শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, এই অধিক বৃষ্টিপাতের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে তো প্রায় দেড়শ’ বছর আগে বৃটিশরা এখানে চা আবাদ শুরু করে। নয়তো দেশের সব জায়গাকেই তারা চায়ের আওতায় নিয়ে আসতো। তা তো করেনি। বৃটিশরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চা শিল্পের জন্য সিলেটকেই নির্বাচত করেছে সবচেয়ে প্রথম। উঁচু-নিচু টিলাঘেরা এ অঞ্চলের পাহাড়ি জায়গাগুলো চায়ের জন্য তাই অত্যন্ত উপকারী।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১
বিবিবি/এএটি