ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

লু হাওয়ায় পুড়ছে খুলনা, ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
লু হাওয়ায় পুড়ছে খুলনা, ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির মাটি ফেটে চৌচির। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: দিনভর সূর্যের তীর্যক রশ্মি আর লু হাওয়ায় প্রকৃতি যেন তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ছে। রোদের প্রখরতায় মাথা দিয়ে ঘাম ঝরছে অনবরত।


তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা মিশে ভ্যাপসা গরম আরও বাড়িয়ে তুলছে। ফলে ক্রমেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন।

একফোঁটা বৃষ্টির আশায় চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে আছে সবাই। দীর্ঘ খরায় পুড়ছে খুলনাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত। প্রচণ্ড রোদে মাঠে কাজ করতে যেতে পারছেন না কৃষক।  

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে খরা ও মরুময়তা বাড়ছে। জাঁকিয়ে বসছে গরম। সূর্যের চোখরাঙানিতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। প্রচণ্ড গরমের ফলে বোঁটা শুকিয়ে খসে পড়ছে গাছের আম ও লিচু। দিনভর সূর্যতাপে নুইয়ে পড়ছে গাছের পাতাও। নেতিয়ে পড়ছে সবজি। ফসলি ক্ষেত বৃষ্টির অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তরমুজ চাষিরা।
আর্থিক সক্ষমতাসম্পন্ন কৃষকরা জমিতে অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) বসিয়ে সেচ দিতে পারলেও অধিকাংশ দরিদ্র কৃষক তাকিয়ে আছেন বৃষ্টির দিকে।

টানা আট মাস অনাবৃষ্টি। ফলে এ মৌসুমে বোরো আবাদ চাষির অনুকূল ছিল না। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলনও পায়নি কৃষক।

জানা যায়, এবছর খুলনার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, কয়রা, রূপসা ও পাইকগাছা উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তরমুজ চাষ হয়েছে। কিন্তু সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবং সেচের পানির অভাবে তরমুজ চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘ খরায় পুকুর, নদী-খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় এলাকায় তীব্র পানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেকের ক্ষেতের গাছ মরে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় দীর্ঘদিন বৃষ্টি হয়নি। ফলে স্থানীয় পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের পানির অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

পানির অভাবে তরমুজ ক্ষেতের দুরবস্থা তুলে ধরে দাকোপের কৈলাশগঞ্জ এলাকার কৃষাণী শ্যামলী রায় বলেন, চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। অনেক স্বপ্ন ছিল ভালো ফলন পাবো। কিন্তু পানির অভাবে তরমুজ গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বৃষ্টিও নেই আমাদের শ্যালো মেশিনও নেই। যে কারণে ক্ষেতে পানি দিতে পারিনি।

ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া এলাকার চাষি আবু হানিফ জানান, বৃষ্টির অভাবে জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তিল ও পাটের ক্ষেতে পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘকাল বৃষ্টি না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ডুমুরিয়ার শোভনা ইউনিয়নের মলমলিয়া গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, ১০ বিঘা জমিতে পানির অভাবে তরমুজ গাছ বাড়ছে কম। ফল ছোট হচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত সেচের ব্যবস্থা করতে পারছি না। যার কারণে ক্ষতির আশঙ্কা করছি।

তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে বটিয়াঘাটার চাষিদেরও। চাষিরা জানান, এলাকার অনেক খালের পানি শুকিয়ে গেছে। বৃষ্টির অভাবে এখন পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শিগগিরই বৃষ্টি না হলে তরমুজ চাষিরা পথে বসে যাবেন।   

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি বছরের মধ্যে এবার খরা বেশি। দীর্ঘ প্রায় আট মাস বৃষ্টি হয় না। সেচ ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য ১০২টি খাল খননের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ৩০ কিলোমিটার খাল খনন শুরু হয়েছে। দীর্ঘ খরায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরমুজ ক্ষেত। দুই কিলোমিটার দূর থেকে এক কলস পানি এনে তরমুজ গাছে দিতে হচ্ছে কৃষককে। যা খুবই কষ্ট কর। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে নদী-খালগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে এ অঞ্চলের কৃষি হুমকির মধ্যে পড়বে।

খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। দীর্ঘ খরার কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।