লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ার লক্ষ্মীপুরের উপকূলে আছড়ে পড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, চরমার্টিন, নাসিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ, কালকিনি ও রামগতির চরগাজী ও চর আবদুল্লাহসহ মেঘনা তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা যায়।
মঙ্গলবার (২৫ মে) ও বুধবার (২৬ মে) এ দুইদিন মেঘনার ঢেউয়ের আঘাতে কমলনগরের নাসিরগঞ্জ বাজার এলাকার প্রায় ৫০ মিটার বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে গাছপালা। পার্শ্ববর্তী একটি বেড়ি ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এদিকে ইয়াসের প্রভাবে মেঘনা উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। তবে ইয়াস তেমন কোনো আঘাত হানেনি। এসব এলাকার কোনো মানুষও আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। সবাই নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করেছেন।
মেঘনার ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে তারা এখন অদম্য সাহসী। তাদের মাঝে কোনো আতঙ্কও নেই। নাসিরগঞ্জ এলাকায় কয়েকজন শিশুকে দেখা যায় নদীতে ভেসে আসা প্লাস্টিক কুড়িয়ে নিতে। তখনো নদীর প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। ইয়াসের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ পুরো জেলায় প্রবল বাতাস বইছে।
অন্যদিকে এ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে জেলাব্যাপী ১০৯টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১০০ টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগের আগে ও পরে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার চেষ্টাও করা হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক রাকিব হোসেন সোহেল বলেন, ইয়াসের প্রভাবে মেঘনা উত্তাল হয়ে উপকূলে ভাঙন বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্রুত নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নিলে অতীতের মতো এসব এলাকার বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে। গত দুইদিনে নাসিরগঞ্জ বাজারসহ কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, দুই-তিনটি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের দ্রুত বাঁধ সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পানিবন্দি দেড় শতাধিক পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল মোমিন বলেন, মেঘনার জোয়ারে কিছু কাঁচা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া তেমন বেশি প্রভাব রামগতিতে পড়েনি। প্রায় ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে লক্ষ্মীপুরে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রচারণা চালানো হয়েছে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য। একই সঙ্গে মেঘনা তীরবর্তী বাসিন্দাদের জন্য দুর্যোগ মুহূর্তে ২৭৯ মেট্টিক টন চাল, নগদ ২৪ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ৯ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ১৩ লাখ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২১
এসএইচডি/আরএ