সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ‘লবণ পানির আগ্রাসন ঠেকাও’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১৪ আগস্ট) সকাল ১১টায় শ্যামনগর উপজেলা অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে বিশ্ব যুব দিবস উপলক্ষে পরিবেশবাদী উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এ সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে ও বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা গাজী আল ইমরানে সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আইয়ুব ডলি, উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান গাজী আব্দুর রউফ ও ইউপি সদস্য উমা রানী মল্লিক।
আলোচনায় অংশ নেন- বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা বিশ্বজিত মণ্ডল, যুব প্রতিনিধি রুবিনা পারভীন, মলিনা রানী রপ্তান, জোৎস্না রানী মণ্ডল ও যুব সংগঠক প্রদীপ মণ্ডলসহ স্থানীয় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিবৃন্দ।
নাগরিক সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা বাবলু জোয়ারদার।
বক্তারা জানান, এবারের যুব দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘আন্তঃপ্রজন্মের প্রতি সংহতি জানিয়ে সকল বয়সের মানুষের উপযোগী একটি বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলি’।
তারা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অধিক জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর অধিকমাত্রায় নির্ভরশীলতা ও দুর্বল অবকাঠামো ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সংঘটিত সাইক্লোন, নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতার পাশাপশি প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারণে লবণাক্ততা বাড়ছেই।
নাগরিক সংলাপে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা মলিনা রানী রপ্তান, জোৎস্না রানী মণ্ডল ও যুব সংগঠক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, বার বার নদীর বাঁধ ভাঙার কারণে লবণ পানির আগ্রাসনে নারীদের মাসিকসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গায়ের রং কালো হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের লবণ পানি অপসারণ করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে হবে। নদী ভাঙনের হাত থেকে মিষ্টি পানির পুকুরগুলো বাঁচানো গেলে মানুষ উপকৃত হবে।
ইউপি সদস্য গাজী আব্দুর রউফ বলেন, বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে মিষ্টি পানির পুকুরগুলো লবণ পানিতে ডুবে আছে। রাস্তাঘাট সব নষ্ট হয়ে গেছে। নারীদের পানি সংগ্রহ করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এলাকার কিছু বড় পুকুর থেকে লবণ পানি অপসারণ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের চারদিকে লবণ পানি ছাড়া পানি নেই। এলাকার অনেকেই অ্যাসবেস্টস-এ পানি ধরে সংরক্ষণ করে রাখছেন, এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
ইউএনও আক্তার হোসেন বলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে সম্প্রতি কয়েকবার বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। এতে লবণাক্ততার প্রকোপ বেড়েছে। এলাকার মানুষের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে আগামীতে এডিপির সিংহভাগ অর্থ পানির জন্য খরচ করা হবে। এলাকায় যতগুলো মিষ্টি পানির খাল রয়েছে, এর মধ্যে যেগুলো ইজারা দেওয়া, সেগুলো স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ইজারা বাতিল করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন বলেন, জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ তিনটি বিপদ মাথায় নিয়ে আমরা উপকূলে বসবাস করি। আমরা চেষ্টা করছি, এলাকার বড় পুকুরগুলো থেকে লবণ পানি অপসারণ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের।
সংলাপে বক্তারা প্রতিটি গ্রামের ন্যূনতম দুটি পুকুর থেকে লবণ পানি অপসারণ এবং পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ, পুকুরে যাতে লবণ পানি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পাড় উঁচু, শক্ত ও মজবুতকরণ, এ কাজে স্থানীয় নারীদের মতামত এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, পুকুরের পাড়ে প্রচুর বৃক্ষ রোপণ, সুপেয় পানির আধার তৈরি ও সংরক্ষণে সহায়তা, এলাকায় যত মিষ্টি পানির নালা ও খাল আছে, সেগুলো পুনঃখনন, প্রাকৃতিক জলাশয়ের ইজারা বাতিল, এলাকা উপযোগী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিতে যুবকদের সংযুক্তকরণ, বেড়িবাঁধ সংস্কারের উপকরণ স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি ও যুব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে কেনার সুপারিশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
এসআই