ভারতীয় দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। তার মধ্যে কঠোর পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আছে; যা তাকে ভারত দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত করেছে।
কিন্তু এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলির ব্যাট এখন পর্যন্ত হাসেনি। গ্রুপ পর্বের তিন ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১ রান করে আউট হয়েছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছেন মাত্র ৪ রান। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে কোহলি 'গোল্ডেন ডাক'র শিকার হন। আর বৃষ্টির কারণে কানাডার বিপক্ষে ভারতের ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় কোহলির ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়নি।
এদিকে কোহলির সাবেক সতীর্থ বীরেন্দ্র শেবাগ একের পর এক সমালোচনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। প্রেসবক্স বসে তিনি কখনো বাবর আজমের সমালোচনা করছেন, বা কখনো সাকিব আল হাসানকে অবসর নিতে বলছেন। তবে সাকিবকে অবসর নিতে বলে তিনি বিতর্কের ঝড় তুলেছেন।
একথা সত্য, এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট ও বল দুই বিভাগে নিষ্প্রাণ ছিলেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব। তা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচের পর ভারতের সাবেক ওপেনার শেবাগ তো বলেই ফেলেন, সাকিবের উচিত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার কথা।
গ্রুপ পর্বে বোলাদের নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্রেফ ১১৩ রানে থামিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেই রান তাড়ায় নেমে ব্যর্থ হন ব্যাটাররা। কেবল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে লড়ে বাংলাদেশ। যদিও ৪ রানে হারতে হয় তাদের। দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব এমন কঠিন মুহূর্তে দলের হাল ধরতে না পারায় সমালোচিত হয়েছেন।
চারে নামা সাকিব পারেননি চাপ সামলাতে। ৪ বলে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৩ রান। এনরিখ নরকিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের বাউন্সারে পুল করতে যান তিনি। যেটি সহজেই তালুবন্দি করেন এইডেন মার্করাম। চাপের মুখে থাকা বাংলাদেশের হয়ে তার এমন পারফরম্যান্সে তাকে লজ্জা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দর শেবাগ।
সাকিবের লম্বা ক্যারিয়ারের পরও এভাবে উইকেট বিলিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি বলে জানান শেবাগ। ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘তুমি (সাকিব) অ্যাডাম গিলক্রিস্টও না, ম্যাথু হেইডেনও না। বরং বাংলাদেশি ক্রিকেটার। তোমার নিজের লেভেলে খেলা উচিত। কেন সে এমন মুহূর্তে নরকিয়ার বলে পুল শট খেলতে গেল? কেউ একজন যার ১৭ বছরেরও বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা রয়েছে তার এটা জানা উচিত ছিল যে এমন মুহূর্তে বল প্রতি রান দরকার ছিল। ’
একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের পাশাপাশি সাবেক অধিনায়কের এমন কাজে লজ্জা হওয়া উচিত বলে জানান শেবাগ। তিনি বলেন, ‘তুমি (সাকিব) একজন সিনিয়র খেলোয়াড়, সাবেক অধিনায়ক… অথচ এটাই তোমার ক্রিকেট সেন্স! তোমার লজ্জা পাওয়ার পাশাপাশি এই ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়া উচিত। ’
তবে নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে যে ফিরে আসা যায়, সেটাই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে আরেকবার প্রমাণ করছেন সাকিব। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের বিপদের সময়ে ঠিকই নিজের চিরচেনা রূপে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের 'পোস্টার বয়'। খেলেন ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংস। সেই সঙ্গে তার হাতে উঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার। ফলে মুখের কথায় নয়, বরং ব্যাট হাতেই সমালোচকদের জবাব দিলেন তিনি।
সর্বশেষ নেপালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লো-স্কোরিং ম্যাচে সাকিব ব্যাট হাতে ১৭ রান করেন যা দলের পক্ষে সর্বোচ্চ এবং বল হাতেও তিনি ছিলেন সাবলীল। নেপালের শেষ ২ উইকেটও সাকিব তুলে নেন। তার এমন ফিরে আসা দেখে নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন, শেবাগ কি এবার তার স্বদেশী কোহলিকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করবেন?
শেবাগের সমালোচনা সাকিবের জন্য যেমন সাপে বর হিসেবে ধরা দিয়েছে, তেমনই কি হবে বিরাটের ক্ষেত্রে? সুপার এইটে সাকিব এবং কোহলি মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। সুপার এইটে গ্রুপ ওয়ানে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে ভারত অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তান।
সুপার এইটকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী জ্ঞান বিলিয়ে বেড়ানো শেবাগ তার দিল্লির সতীর্থ বিরাট কোহলিকে কী পরামর্শ দেবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। ভারতের শতকোটি ক্রিকেটভক্ত আশা করবেন শেবাগের পরামর্শে হাসুক কোহলির ব্যাট। অবশ্য শেবাগকে কখনোই গঠনমূলক পরামর্শ দিতে দেখা যায় না, তিনি মুখ খুললেই প্রায়ই সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তাহলে কি সাকিবের মতো কোহলিকেও অবসর নেওয়ার পরামর্শ দেবেন শেবাগ?
◑ লেখক
মানবসম্পদ ও উন্নয়নকর্মী