শেষটা নিজেই টানতে পারতেন জেমস অ্যান্ডারসন। যেমনটা করেছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড- শেষ বলে উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করা।
লর্ডসে শুরু, লর্ডসেই শেষ। তার শেষটা বড় জয়ে রাঙিয়েছে ইংল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১১৪ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। ম্যাচশেষেই অ্যান্ডারসনের সাক্ষাৎকার নিতে ইংলিশ ড্রেসিংরুমে ছুটে যান সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন।
অ্যান্ডারসন বলেন, 'সত্যি বলতে ক্যাচটা ফেলে দেওয়ায় আমি এখনো হতাশ। তবে অসাধারণ এক সপ্তাহ কেটেছে। মাঠের চারপাশে সবাই, দর্শক ও সতীর্থদের অভিনন্দনে আমি অভিভূত। যা অর্জন করেছি তার জন্য কেবল গর্বিত মনে হচ্ছে নিজেকে। '
কথা বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল অ্যান্ডারসনের। শেষবেলায় এসে আবেগকে ধরে রাখতে পারেননি ৪১ বছর বয়সী এই পেসার, 'দুই দলের গার্ড অব অনার ও দর্শকের অভিবাদনের কারণে অবশ্যই আজকের সকালটা বেশ আবেগপূর্ণ ছিল। আমি এখনো (আবেগ) ধরে রাখার চেষ্টা করছি। তবে ২০ বছর ধরে খেলার জন্য আমি খুবই গর্বিত। বিশেষ করে একজন ফাস্ট বোলারের জন্য যা এক অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টা। '
'আমি খুশি এতোদূর আসতে পেরে এবং যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিলাম যে, ক্যারিয়ারজুড়ে অনেকটা সময় ইনজুরিমুক্ত থাকতে পেরেছি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলাটা বিশ্বের সেরা চাকরি। আমি সেটা দীর্ঘ সময়ের জন্য করতে পারার সুযোগ পেয়েছি। '
লর্ডস টেস্টে প্রথম দিন ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরুর বার্তা দিয়েছিলেন অ্যান্ডারসনের মেয়েরা। তা দেখে আবেগে ছলছল করছিল তার চোখ। তিনি বলেন, 'স্মৃতি তৈরি করা নিয়ে ড্রেসিংরুমে আমরা প্রচুর কথা বলেছি এবং এটি আমাদের পাশাপাশি আমাদের পরিবারেরও ক্যারিয়ার। এই যাত্রায় তারাও আমাদের সঙ্গে থাকে। এমন অনেক সময়ে আছে যেখানে আমি বাড়ি থেকে বাইরে ছিলাম সিরিজ এবং সেই সময়ে তারা অবিশ্বাস্য সমর্থন দিয়ে গেছে, আমাকে যতদিন ইচ্ছা খেলতে দিয়েছে। তারা আমার জন্য যা করেছে সেটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞ যে এই সপ্তাহের অংশ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে তারা। '
সতীর্থদের নিয়ে অ্যান্ডারসন বলেন, 'কিছু অসাধারণ ও প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পেরে আমি ভাগ্যবান তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি সত্যিকারের কিছু মানুষ ও আজীবনের জন্য কিছু বন্ধু পেয়েছি। এই ধরনের বন্ধুত্ব ও পরিবেশ সৃষ্টি করায় ক্রিকেট সত্যিই একটি বিশেষ খেলা। নতুনদের জন্য কিছুটা ঈর্ষা হচ্ছে কারণ আগামী কয়েক বছরে সেটা অনুভব করবে তারা। যেটা আগেও বলেছি আমাদের দলটা তরুণ এবং অনেক অবিশ্বাস্য প্রতিভা আছে এখানে। তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করো। কারণ রাইডটা অসাধারণ। '
'এখন টেস্ট ম্যাচ জিতে যে অনুভূতি হচ্ছে, এর চেয়ে ভালো অনুভূতি আর নেই। আমি জানি দেখলে মনে হবে আমরা দাপট দেখিয়েছি, কিন্তু এই জয়ের আমাদের সত্যিই কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। বাকিদের সঙ্গে সাফল্য ভাগাভাগি করে নেওয়াটাও মিস করব। গাস অভিষেকে দারুণ করেছে, একই সঙ্গে জেমি স্মিথও। মাঠে নেমে এই ছেলেরা নিজের প্রতিভা দেখাচ্ছে, যা দেখতে অবিশ্বাস্য। জয়ের পর এখানে বসে একসঙ্গে উদযাপন করাটা, সেসব পারফরম্যান্স এবং অবিশ্বাস্য সব স্মৃতি যা আমি অবশ্যই মিস করব। বছরের পর বছর কত অসাধারণ খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি আমি, তা ভাবলে অবাস্তবই মনে হয়। '
'এই ম্যাচে বোলিং করে নিজেকে ৫৫ বছর বয়সী মনে হয়েছে। ব্যথা ও যন্ত্রণা নিয়ে চলার সময়গুলো মিস করব আমি। দীর্ঘ সময় ধরে যা করে আসছি তা করতে পারায় আমি খুবই সৌভাগ্যবান। আমি খুশি তা এতোদূর টেনে আনতে পারায়। '
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও পেশাদার ক্রিকেটকে এখনো বিদায় বলেননি অ্যান্ডারসন। কাউন্টিতে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে আর খেলবেন কি না নিশ্চিত নন তিনি নিজেও, 'আমি আসলে এতোটা সামনের পথ ভাবার জন্য এখনো প্রস্তুত নই। গ্রীষ্মের বাকি সময় পর্যন্ত আমি তাদের (ইংল্যান্ড) থাকব এবং যতটা সম্ভব বোলিং গ্রুপকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। এরপর দেখব জীবন কোথায় নিয়ে যায়। আমি অতোটা দূরের কথা এখনো ভাবিনি। '
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
এএইচএস