‘তাকেই কেন চলে যেতে হলো?’
প্রশ্নটির উত্তর বোধ হয় আজও খুঁজে বেড়ান মাইক হাসি। ১০ বছর কেটে গেছে, কিন্তু এখনো অবিশ্বাস্যই লাগে।
অস্ট্রেলিয়ার সীমিত ওভারের দলে এখন প্রায় নিয়মিত সদস্য শন অ্যাবট। সেই দুঃস্বপ্নকে পেছনে ফেলে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করাটা সহজ ছিল না ডানহাতি এই পেসারের। তিনিই বা কী করে জানতেন, তার ঘণ্টাপ্রতি ৯০ মাইল গতির বাউন্সারটি সোজা গিয়ে হিউজের ঘাড়ে আঘাত হানবে।
মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়া হিউজের পরের লড়াইটি ছিল হাসপাতালে। দুদিন পর ঠিক এই ২৭ নভেম্বরেই মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয় তাকে। তাও জন্মদিনের (৩০ নভেম্বর) তিন দিন আগে। অথচ শেফিল্ড শিল্ডে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি খেলে জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ওপেন করতে নেমে বেশ ছন্দেই ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তুলে নেন ফিফটিও, কিন্তু ইনিংসের ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলেই থেমে যায় ম্যাচ। থেমে যান ২৫ বছরের হিউজ। আজীবনের জন্য অসম্পূর্ণ থেকে গেল অপরাজিত ৬৩ রানের ইনিংসটি।
নিউসাউথ ওয়েলসের ম্যাকসভিল শহরে জন্ম নেওয়া হিউজ ক্রিকেটের পাশাপাশি প্রতিভাবান ছিলেন রাগবিতেও। তবে ২২ গজের মঞ্চ কাঁপানোর জন্য নিজেকে গড়তে থাকেন তিনি। ক্লাব তো বটেই বাড়িতেও রোজ বোলিং মেশিনের সাহায্যে প্রায় ১৫০ ডেলিভারি মোকাবিলা করতেন। অবশেষে ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জাতীয় দলের দরজা খোলে তার জন্য।
শুরুটা অবশ্য ভুলেই যেতে চাইবেন। কেননা সাজঘরে ফিরতে হয় রানের খাতা খোলার আগেই। তবে জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ইনিংসেই নিজের জাত চেনান হিউজ। খেলেন ৭৫ রানের দারুণ এক ইনিংস৷
পরে ডারবান টেস্টে তো ইতিহাসই গড়ে ফেললেন। ডেল স্টেইন, মাখায়া এনটিনি, মরনে মরকেল ও জ্যাক ক্যালিসদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে সর্বকনিষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন তিনি। প্রথম সেঞ্চুরিটি অবশ্য স্পর্শ করেন টানা দুই ছক্কা মেরে।
চার বছর পর প্রথম অজি ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকে সেঞ্চুরি করেন হিউজ। পরের বছর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরিও হাঁকান এই বাঁহাতি। সেটাও অজি ব্যাটারদের মধ্যে প্রথম।
প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় দলে কখনো নিয়মিত হতে পারেননি হিউজ। মৃত্যুর কারণে ২৬ টেস্টে ১৫৩৫ ও ২৫ ওয়ানডেতে ৮২৬ রানে থামে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। সেই মৃত্যু ১০ বছর পরও ভারাক্রান্ত করে তোলে অনেককেই।
চলমান বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির দ্বিতীয় টেস্টে হিউজকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নানান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডিলেইডে গোলাপি বলের ম্যাচটি শুরু হবে ৬ ডিসেম্বর থেকে।
বাংলাদেশ সময়
এএইচএস