মিরপুর শেরে-ই বাংলা স্টেডিয়াম থেকে: টি-টোয়েন্টি মানেই বাড়তি উন্মাদনা, রানের ফুল ঝুড়ি। চার ছক্কার আসরে দর্শক মনে আগ্রহের শেষ নেই।
স্বাগতিক হয়ে হয়তো ট্রফি জয়ের স্বাদ নিতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু দর্শকদের সামনে রেখে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে আমরাই ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রাণ, গ্যালারিতে সত্যিকার চ্যাম্পিয়ন আমরাই। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচ, ভারত শ্রীলঙ্কার মত দুই দলের লড়াই কে না দেখতে চাইবে। সব বাধা পেরিয়ে চার ছক্কা হই হই গাইতে গাইতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঠিকই ম্যাচ শুরুর আগেই তিল ধরানোর জায়গা খুজে পাওয়া গেল না বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
একদিকে সাঙ্গাকারা-মাহেলার বিদায়ী টি-টোয়েন্টি ম্যাট অপর দিকে ভারত অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনীরও ইতিহাস হওয়ার হাতছানি। এই মহারণে সামিল গোটা বিশ্ববাসী। তবে এই মাহেন্দ্র ক্ষণে যারা রংবেরঙ্গের পোশাক আর ভারত শ্রীলঙ্কার পতাকা হাতে মাঠে এসেছেন সবাই নিজেরাও যেন জিততে এসেছেন। গ্যালারীতে পতাকা উড়ানো, হাততালি আর দুই দেশের জাতীয় সংগীত গাইতে প্রতিযোগীতা চোখে পড়ার মত। ডিজের মিউজিক আর ঢোলের তালে তালে দুই দল মাঠে প্রবেশের আগেই সবাই উঠে দাড়িয়ে সম্মান জানাতে ভুল করল না। যখন মাঠে দুই দলের খেলোয়াড় তালিকা ঘোষণা করা হচ্ছে তথনও যেন পাল্লা। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের যেন আলাদা আলাদা ফ্যানের শেষ নেই। ধোনি-কোহলি আর মাহেলা-সাঙ্গাদেরই ছাপিয়ে দুই দলের সবারই নিজস্ব ভক্ত রয়েছে। দর্শকদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মত।
গ্যালারি ঘুরে ঘুরে মজার সব কাণ্ড হাসির খোরাক জোগাবে। মাঠে ফাইনাল খেলা দেখতে আসা ভারতের ডাই হার্ট ফ্যান ডাক্তার আফসানা মৌলি বাংলানিউজকে জানালেন,‘বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা আর ঘরে বসে থাকি কেমন করে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠে এসেই খানিকটা টেনশনে ছিলাম। ভেজা মাঠে খেলা হবে কিনা এমন সন্দেহ হচ্ছিল। কোহলিদের ব্যাটিংয়ের সামনে শ্রীলঙ্কা দাড়াতেই পারবে না। পাশে বসা স্বামীর সাথে বাজি ধরে খুনসুটি চলছে সারাক্ষণ।
মাঠের প্রবেশ মুখে কথা হল মশিউর রহমান মুন্নার সাথে। তিনি শত ব্যস্ততা ফেলে মাঠে এসেছেন। তার সাথে কথা বলতে চাইলে সময় নেই খেলা শুরু হচ্ছে বলে দৌড়ানোর চেষ্টা। সাঙ্গাকারার বিদায় মুহূর্ত মাঠে থাকব না তা হতে পারে না। দেখেন ভাই আজ সাঙ্গা শতক হাকাবে- বলতে বলতে গ্যালারিতে ঢুকে গেলেন।
কালোবাজারিদের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে মাঠে এসেছেন জাহানারা ফেরদৌস। অফিস থেকে আগেই ছুটি মাঠে এসেছেন। তবে তার অভিযোগ কালোবাজারিরা প্রকাশ্যে এমনটা করছে কেই কিছু বলছে না। বিসিবির অনেকের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন তিনি। শুধু ইতিহাসের স্বাক্ষী হবেন বলেই এমন চড়া মূল্যে টিকিট কিনে মাঠে এসেছেন। এখন ভালো একটা ম্যাচ দেখার অপেক্ষা।
তবে আর যাইহোক ক্রিকেট উত্তেজনায় সব ছাপিয়ে নতুন মাত্রা যোগ করল বাংলাদেশ। যেখানে দেশের রাজনৈতিক কারণে আইসিসি বিশ্বকাপের ভেন্যু বাতিল করতে চেয়েছিল তার বেশ শক্ত জবাব হয়তো গ্যালারি থেকেই পেয়ে গেছে। যাদের ক্রিকেট রক্তে মিশে গেছে তারা মাঠে এই পাগলামি করবে এমনটাই স্বাভাবিক। সব সন্দেহের ঘোর কাটিয়ে সফল এক আয়োজন দেখল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। আর এই সফলতার মাঝে সবচেয়ে বড় সফল দর্শকদের চার ছক্কার গগনস্পর্শী রাজসিক উদযাপন পুরো আইসিসির মনে জায়গা করে নিয়েছে এমনটি বলতেই পারে লাল সবুজের পতাকাবাহীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, ০৬ এপ্রিল ২০১৪