ঢাকা: রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, পুলিশের লাঠিপেটা খেয়ে সাধারণ দর্শকদের সংগ্রহ করতে হয় ‘সোনার হরিন’ টিকিট। অন্যদিকে চলে টিকিট বানিজ্য।
স্টেডিয়ামের গেট কিপার, বিসিবি’র আইডিকার্ডধারী কর্মচারীরা চায়ের দোকানে বসে টিকিটের এই বানিজ্য চালিয়ে যান দাপটের সঙ্গে। জমজমাট টিকিট ব্যবসার আবার ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছেন বিসিবির এ সকল আইডিকার্ডধারী কর্মীরা। বিসিবি থেকে সবধরণের টিকিট একটি করে পাওয়া গেলে সেটিকে বলে ‘প্যাকেজ’। আর প্যাকেজ বিক্রি করতে পারলেই এক দিনে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা দেদারছে আয় করে নেওয়া যায়।
এমন অবস্থা দূর করতে এবার অনলাইনে টিকিট ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে বিসিবি। আগামী সিরিজগুলোতে অনলাইনেই টিকিট কিনতে পারবেন দর্শকরা। শনিবার (১১ জুলাই) তেমন আভাসই মিলল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথায়।
নাজমুল হাসান পাপনের দাবি অনুযায়ী, তিনি সভাপতি হওয়ার পর থেকেই ফ্রি টিকিট দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শনিবার সংবাদমাধ্যমের কাছে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘টিকিট বিক্রিতে একটা স্বচ্ছতা আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে হয়তো অনলাইনেই টিকিট বিক্রয়ের ব্যবস্থা করব। কেননা, এত ঝামেলার মধ্যে থাকতে চাচ্ছি না। ’
পাপন আরও যোগ করেছেন, ‘টিভিতে দেখলাম টিকিট কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ানো ছেলেদের লাঠিচার্জ করছে পুলিশ। এই দৃশ্য দেখে আমার খারাপ লেগেছে। এই রোজার মধ্যে টিকিট কেনার জন্য কষ্ট করে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে; এর মধ্যে আবার লাঠিচার্জ! এটা (টিকিটি বিক্রি) আমরা শিগগিরই অনলাইনে নিয়ে যাব, এমনই চিন্তা ভাবনা করছি।
বিসিবি অনেক ফ্রি টিকেট বিলি করে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজমুল হাসান পাপন। ‘৪০ থেকে ৫০ ভাগ সৌজন্য টিকিট আমরা দিই। এর মধ্যে সব ফ্রি নয়। কিছু সংস্থা রয়েছে যাদের টিকিট দিতেই হয়। তবে আগে যে পরিমাণ সৌজন্য টিকিট দেওয়া হতো এর চেয়ে অনেক কম পরিমাণ এখন দেওয়া হয়। এ ছাড়া আগে সব সাংসদ পেতেন। এখন ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো সাংসদ সৌজন্য টিকিট পান। সব মন্ত্রণালয়েও টিকিট যায় না; শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটা মন্ত্রণালয়ে যায়। এটি ঢালাওভাবে কোথাও পাঠানো হয় না; রাজনৈতিকভাবে তো একেবারেই না। ’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলতি সিরিজেই টিকিট নিয়ে চরম হতাশাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ দর্শকরা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টিকিট নিয়ে বিসিবির এমন গোলকধাঁধার কারণে অনেকেই অতিষ্ট হয়ে ক্ষোভে খেলা দেখার চিন্তাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলছেন।
তবে আগামীতে অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাবে-এমন খবর শুনে খুশি সাধারণ দর্শকরা। মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডে দেখতে আসা মনিরুল ইসলাম জানান, এটা আরো আগেই করা উচিৎ ছিল। ডিজিটাল যুগেও কেন আমাদের সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কষ্ট করে টিকিট কিনতে হবে। দেরিতে হলেও এটা ভালো খবর।
কলেজ ছাত্র ইশতিয়াক জানান, ‘বাংলাদেশের সব খেলাই মাঠে এসে দেখতে ইচ্ছা করে। কিন্ত টিকিট সংগ্রহের ঝক্কি-ঝামেলার কথা মনে পড়লে আঁতকে উঠি। অনলাইনে হলে এই কষ্টটা লাঘব হবে। তবে অনলাইনে যেন সারাক্ষণ আপডেট থাকে। কতটা টিকিট বিক্রি হলো। কতটা অবিক্রীত আছে-এমন তথ্য যেন দেওয়া হয়। নইলে ওখানেও ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে। ’
ক্রিকেট বোর্ডের টিকিট পার্টনার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ক্যাশ অফিসার মো: ওয়ালীউল্লাহ বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে টিকিট নিয়ে কাজ করছি। আমার মতে, সব টিকিটই অনলাইনে দেওয়া উচিত। তাহলে আমাদের ঝামেলা থাকে না, দর্শকদেরও থাকে না। ’
ভারত সিরিজ শুরুর আগেও নাজমুল হাসান পাপন গুলশানে তার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, টিকিট অনলাইনে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এর পর দুটো সিরিজ শেষ হতে চললেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। টিকিট-বানিজ্যের সঙ্গে জড়িত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন সভাপতি সাহেবের কান ভারী না করলেই হলো!
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৫
এসকে/আরএম