বলছিলাম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এক সময়ের অটোমেটিক চয়েজ বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের কথা।
বল হাতে দলের প্রয়োজনে রাজ্জাকের কীর্তি সব সময় প্রশংসিত।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন পাঁচ উইকেট শিকারের বোলিং তিনি আরও তিনবার করেছেন। তিনবারই প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। ২০০৬ সালে বগুড়ায়, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ঢাকায়। চার উইকেট শিকার করেছেন ৫ বার। ওয়ানডেতে ১৫৩ ম্যাচ খেলে ৪.৫৬ গড়ে ২০৭টি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আব্দুর রাজ্জাক। ১৭৯ ম্যাচে ২৩২ উইকেটে শীর্ষে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও ১৭৭ ম্যাচে ২২৪ উইকেট শিকার করে দ্বিতীয় শীর্ষ শিকারি সাকিব আল হাসান।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো; ওয়ানডের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সেই আব্দুর রাজ্জাক আজ বাংলাদেশ দলে নেই। কোনো এক অশুভ শক্তির কালো ছায়া এই প্রমানিত পারফরমারকে দল থেকে ছিটকে দিয়েছে। প্রায় তিন বছর হতে চলেছে রাজ্জাক লাল-সবুজের দলে নেই। জাতীয় দলে এই মুহূর্তে একজন বাঁহাতি স্পিনারের খড়া যাচ্ছে। আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম রাজ্জাকের জায়গায় থিতু হওয়ার টেষ্টা করেছেন, পারেননি। এখন চলছে সানজামুলকে থিতু করার চেষ্টা।
বিষয়টি নিয়ে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল রাজ্জাক। টাইগার সেরা একাদশে একজন বাঁহাতি স্পিনারের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন তিনিও, ‘আমার কাছে মনে হয় আমাদের বাঁহাতি স্পিনারদের সময় দেয়া দরকার। যেহেতু ভালো হচ্ছে না। সাকিব অটোমেটিক চয়েজে খেলে এতে করে টিমের ক্যাপ্টেনের সুবিধা হয়। কেননা সাকিবকে নিয়ে দল একটা বোলার ও ব্যাটসম্যান পাচ্ছে। তো ওই জায়গাটায় অন্য কিছু ট্রাই করা যায়। সেক্ষেত্রে একটা লেফট আর্ম স্পিনার আসতে পারে। ’
পারফরমাররা সব জায়গায়ই আপন দ্যুতিতে মহিমান্বিত থাকেন। সেটা হোক জাতীয় দল কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটে। তথাকথিত টিম কম্বিনেশনে রাজ্জাক জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলতে পারছেন না ঠিকই, তাই বলে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরমেন্স থেমে নেই। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের গেল মৌসুমেও শেখ জামালের হয়ে ৪টি, ৫টি করে উইকেট থলিতে পুড়েছেন অহরহ। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমেন্স জাতীয় দলের দুয়ার খোলার অন্যতম চাবি হলেও রাজ্জাকের ভাগ্যে অবশ্য শিকে ছেঁড়েনি।
সামনেই বিপিএল। তাই এখন থেকেই ফিটনেসের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। শনিবার (৫ আগস্ট) মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে এসে দেখা গেল একা একাই মাঠে রানিং করছেন। এরপর প্রায় ঘণ্টাখানেকের জিম করে যখন বেরিয়ে এলেন গা দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছিল। আপাতদৃষ্টিতে তার এই অনুশীলন, এই সংগ্রাম বিপিএলের জন্য হলেও এর পেছনে আছে জাতীয় দলের ফেরার সুপ্ত বাসনা।
রাজ্জাক যোগ করেন, ‘এটা আমার পেশা। আমি কিন্তু অন্য কোনো কাজ করি না। আমাকে এটা দিয়েই চলতে হয়। তো এখানে কোনোরকম ছাড় দিলে ক্যারিয়ার ও জীবন থেকে আমি পিছিয়ে যাব। আমি আসলে পিছাতে চাই না। যেহেতু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট এখন প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, সেখানে খেলছি। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হলেও আপনাকে একইভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ’
ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে এসেই দল থেকে বাদ পড়ায় হয়তো রাজ্জাকের উপলব্ধিটা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। কিন্তু তার মতো অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনারকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজমেন্ট কতটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা সময়ই বলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ৫ আগস্ট ২০১৭
এইচএল/এমআরপি