টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা প্রায় ২০ বছরের। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও উল্লেখযোগ্য তেমন উন্নতি হয়নি বলেই প্রতীয়মান হয়।
চট্টগ্রাম টেস্টে হারের তিক্ত স্বাদ আস্বাদনের পর ঢাকা টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু উল্টো চতুর্থ দিনেই হেরে গেছে। শেষবেলায় কিছুটা লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত ১৭ রানের হার মানতে হয়। যে দলটির কাছে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ, এই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় অনভিজ্ঞ। অনেকে টেস্ট ক্রিকেটই আগে খেলেননি, বরং এই সিরিজেই হয়েছে অভিষেক।
এমন তথাকথিত দুর্বল একটা দলের কাছে হারের কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না সমর্থকরা। অনেকের মতে, টেস্ট খেলার জন্য বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুতই নয়। অথচ টেস্ট প্রাঙ্গণে দুই দশক ধরে বিচরণ বাংলাদেশের। অধিনায়ক মুমিনুলও মানলেন বিষয়টা। কিন্তু তার মত কিছুটা আলাদা।
ঢাকা টেস্ট শেষে রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মুমিনুল বলেন, ' আসলেই ২০ বছর হয়ে গেছে। তবে আমার মনে হয় ওইভাবে কোনো উন্নতিই হয়নি। আর উন্নতির শেষ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুযোগ থাকে। আমরা যতদিন খেলব, যতদিন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করব, ততদিন উন্নতি করতে হবে। '
২৩১ রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় নেমেও হেরে যাওয়ার পর কারণ অনুসন্ধানে নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতা চোখে পড়ছে মুমিনুলের, 'যেই রানটা ছিল সেটি তাড়া করা যেত। টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারে ভেঙে পড়ার কারণে রান তাড়া করতে পারিনি। পুরো চারদিনই ব্যাটিং খুব কঠিন মনে হয়নি। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটু কঠিন উইকেট থাকলে সেটি মানিয়ে নিতে হবে। খুব বেশি বাউন্সও ছিল না। কর্নওয়াল কিছু বাউন্স পেয়েছে তার উচ্চতার জন্য। আমাদের মানিয়ে নেওয়া উচিত ছিল। সেটা আমরা করতে পারিনি। যার কারণে দ্বিতীয় টেস্টটা হাত থেকে চলে গেছে। ব্যাটিংয়ে আমরা ভেঙে পড়েছি। সেখান থেকে আমরা ফিরতে পারিনি। দুই ইনিংসেই। '
চট্টগ্রামের হারে অবাক হয়েছিলেন মুমিনুল। ঢাকায়ও কি অবিশ্বাস্য লাগছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অবিশ্বাস্য না। প্রথম ইনিংসেই কিন্তু ওরা এগিয়ে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলাররা খুব ভালো বল করেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তামিম ভাই, সৌম্য যেভাবে শুরু করেছিল, তখন মনে হয়েছিল আমরা খেলায় ছিলাম। হঠাৎ দুই-তিনটা উইকেট পড়ে যাওয়াতে আমরা একটু পিছিয়ে পড়ি। শেষের দিকে মিরাজ খুব ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। মাঝখানে একটু উল্টোপাল্টা হয়ে গিয়েছে, যার কারণে আমরা ফিরতে পারিনি। '
ঢাকায় দুই ইনিংসেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ। তার টেস্ট সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তারপরও কেন তাকে দলে রাখা হলো সেই ব্যাখ্যায় মুমিনুল বলেন, 'সাকিব ভাই চলে যাওয়াতে আমাদের দলের সমন্বয় একটু ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। আমার একজন মিডিয়াম পেসার যিনি ব্যাটিং করেন, এমন কাউকে দরকার ছিল। আর সৌম্য অভিজ্ঞও ছিল। সম্প্রতি ওয়ানডেও খেলেছে। কিন্তু আপনি যখন হারবেন তখন অবশ্যই চোখ পড়বে। যদি জিততাম হয়তো...(হাসি)।
ইতিবাচক মানসিকতার কথা বলা হয়, সেটা কি চট্টগ্রামেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম টেস্টে আমরা খুবই ইতিবাচক ব্যাটিং করেছি। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা সেই রকম ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে পারিনি। '
অধিনায়ক হিসেবে ধবলধোলাইয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বিদেশের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের অভিজ্ঞতা ছিল। দেশের মাটিতেও হয়ে গেল। দল হারলে আপনি অবশ্যই হতাশ হবেন। আমাদের অনেক উন্নতি করার আছে। যেগুলো করতে পারলে হয়তো আমরা দেশে ও দেশের বাইরে ম্যাচ জিততে পারব। '
দলের সঠিক সমন্বয় কেন হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে মুমিনুল বলেন, 'সাকিব ভাই না থাকলে সঠিক সমন্বয় গড়া একটু কঠিন হয়। আমি আগেই বলেছি, দল হারলে অনেককিছুরই কমতি মনে হয়। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যখন আমরা জিতেছিলাম তখন এতো কিছু বের হয়নি। '
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
এমএইচএম