ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আরবদের হাত ধরে জনপ্রিয় চট্টগ্রামের মেজবান

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
আরবদের হাত ধরে জনপ্রিয় চট্টগ্রামের মেজবান ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বিয়ে কিংবা ঘরোয়া আড্ডা, এককালে বাড়ির উঠোনে মেজবানের আয়োজন এখন চলে এসেছে কমিউনিটি সেন্টারে। খাবার টেবিলে নানান পদের মেন্যুতে মেজবানের মাংস থাকা যেন অনেক বছরের পুরোনো ঐতিহ্য।

যারা রসনাবিলাসী, তারা চট্টগ্রাম এসে মেজবানের মাংসের স্বাদ নেবেন না- এমনটি ভাবাই যায় না। গরম ভাতের সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা গরুর মাংস।

ছোলা বা মুগ ডালে মেশানো মাংসের টুকরো। সঙ্গে হাড় বা গরুর নলাতো আছেই।

চট্টগ্রামে দেড় শতাধিক কমিউনিটি সেন্টারে বছরজুড়েই চলে মেজবানের আয়োজন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মৃত্যুবার্ষিকী, বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানে মেজবান দিতে দেখা যায় সমাজসেবক, রাজনীতিবিদদের। বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ৫শ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে দেওয়া হয় মেজবান।  

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানে মাংসের প্রচলন কখন থেকে, তা নিয়ে কোনও তথ্য নেই গবেষকদের কাছে। তবে ১৫০০ শতকের কবি বিজয় গুপ্তের পদ্মপুরাণ কাব্যগ্রন্থে এই সংস্কৃতির তথ্য মিলে। ১৬০০ শতাব্দীর সৈয়দ সুলতানের নবীবংশ কাব্যগ্রন্থে ‘মেজোয়ানি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ভোজন অর্থে।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর ও গবেষক শামসুল হোসাইন এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, মেজবান ফারসি শব্দ। ১৫০০ ও ১৬০০ শতাব্দীর প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যে ‘মেজোয়ানি’ ও ‘মেজমান’ শব্দ দুটি পাওয়া যায়।

ফারসি মেজবান শব্দের অর্থ ‘অতিথি আপ্যায়নকারী’ এবং মেজবানি শব্দের অর্থ ‘আতিথেয়তা’বা ‘মেহমানদারি’। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একে মেজ্জান বলা হয়। চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী অঞ্চলে মেজবানি জেয়াফত নামে বহুল প্রচলিত। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায়ও বিভিন্ন উপলক্ষে ভোজের আয়োজন করা হয়। তবে মেজবানি চট্টগ্রাম অঞ্চলেই অধিক জনপ্রিয় ও বহুল প্রচলিত। এই অঞ্চলে পূর্বে হাট-বাজারে ঢোল পিটিয়ে বা টিনের চুঙ্গি ফুঁকিয়ে মেজবানির নিমন্ত্রণ প্রচার করা হতো।

বর্তমানের সাথে অতীতের মেজবান অনুষ্ঠানের কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। পূর্বে মাটিতে চাটাই বিছিয়ে ও মাটির সানকিতে আমন্ত্রিতদের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। বর্তমানে দুপুরে বা রাতে টেবিল চেয়ার ও সাধারণভাবে প্রচলিত থালায় খাবারের আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামে মেজবানের মাংস পাওয়া যায় বেশ কিছু হোটেলে। এর মধ্যে আছে- মেজ্জান হাইলে আইয়ুন, মেজবান বাড়ি, হোটেল জামান, আল মদিনা হোটেল, ওরিয়েন্ট রেস্টুরেন্ট প্রমুখ।

ইতিহাস গবেষক সাংবাদিক আলীউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় মাটির চুলোতে মেজবানের মাংস রান্না করা হতো। পরিবেশন করা হতো মাটির বাসন বা সানকিতে। তবে যুগের সঙ্গে পরিবর্তনে রান্না ও খাবার পরিবেশন- দুটোতেই এসেছে পরিবর্তন। চট্টগ্রামের মেজবানের স্বাদ পেতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে আসেন অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিতে। প্রবাসীরাও আয়োজন করেন মেজবান।

তিনি বলেন, নবম শতাব্দীতে (১২০০ বছর আগে) চট্টগ্রামের সঙ্গে আরবদের যোগাযোগ ছিল। তাদের হাত ধরেই চট্টগ্রামে মেজবানের মাংস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বলে ধারণা করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
এসএস/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।