ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চমেক হাসপাতাল: গাইনিতে কেন এত দালাল? 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২২
চমেক হাসপাতাল: গাইনিতে কেন এত দালাল?  ...

চট্টগ্রাম: আনোয়ারার হাইলধর এলাকার নাঈমা আক্তার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে আসেন চমেক হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রোগীকে হাসপাতালের ৩৩ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি  করে দেন।

সেখানেই আয়া ও ওয়ার্ডবয়ের যোগসাজশে দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়েন তিনি।

উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে তারা হাতিয়ে নেয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

অথচ এই হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় খরচ হয় দেড় থেকে ২ হাজার টাকা।

শুধু নাঈমা আক্তার নন, প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে এ দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ব্যয় করতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে অনেক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে।

সরেজমিন দেখা যায়, শারমিন আক্তার নামে এক গর্ভবতী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে ঘিরে ধরেন কয়েকজন দালাল। নানান প্রলোভনে মুগ্ধ করার চেষ্টা চালায় রোগীর অভিভাবকদের। একপর্যায়ে ১০ রকমের ওষুধের ফর্দ রোগীর স্বামীর হাতে ধরিয়ে দেন তারা। এরপর ওই ফর্দ নিয়ে পাশে থাকা আরেক দালাল ফার্মেসিতে গিয়ে রোগীর ভাইকে প্রায় ৭ হাজার টাকার ওষুধ কিনে দেন। তৎক্ষণাৎ এত টাকা না থাকায় মোবাইলে অন্যজনের কাছ থেকে ধারে টাকা এনে ওষুধের দাম পরিশোধ করেন। ওষুধ নিয়ে গাইনি ওয়ার্ডে ঢুকতেই সেখানেও পিছু নেয় দালালরা। ওষুধগুলো রোগীকে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় এক আয়া।  

অভিযোগ আছে, হাসপাতালের আয়াদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে দালালদের। আয়ারা ওয়ার্ডে কাজ করার সময় রোগীর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। যা পরবর্তীতে দালালরা জানতে পারে।  পরে দালালদের সিন্ডিকেট বিভিন্ন প্রলোভনে রোগী ও তার স্বজনদের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ টাকা।  এভাবে প্রতিনিয়ত তাদের হাতে জিম্মি হচ্ছে চট্টগ্রামের শত শত রোগী।  

এদিকে, গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শুধু গাইনি ওয়ার্ড থেকে ১৫ দালালকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসেই ৭ জন এবং চলতি ডিসেম্বর মাসে ৪ জনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় আরও ৪ জনকে এ গাইনি ওয়ার্ড থেকে আটক করে পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ বার বার অভিযান চালালেও দালালের দৌরাত্ম্য কমানো যাচ্ছে না হাসপাতাল থেকে। দালাল ধরার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ না থাকা এবং দেশের প্রচলিত আইনে এ অপাধের (দালালি) নির্দিষ্ট ধারা না থাকায় মামলা দায়ের করার সুযোগ থাকে না। ফলে শুধুমাত্র অভিযোগ দাখিল করে আদালতে পাঠানো হয় দালালদের। জরিমানা দিয়ে জামিন পাওয়ার পর আবারও হাসপাতালে এসে এই কাজে জড়ায় তারা।  

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, দালাল নির্মূলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হলে হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু হাসপাতাল একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেই হাসপাতালের ভিতর অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকলে পুলিশ অভিযান চালাতে পারে।  

চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুর উল্লাহ আশেক বাংলানিউজকে বলেন, আমার প্রায় সময় হাসপাতাল থেকে দালাল আটক করে থাকি। গত ছয় মাসে ২০ থেকে ২৫ জনকে আটক করেছি। যার বেশিরভাগই গাইনি ওয়ার্ড থেকে। আমরা দালাল আটক করার পর আদালতে সোপর্দ করি। আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।  

গাইনি ওয়ার্ডে দালালের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত এই ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেশি। মা ও সন্তানের প্রতি পরিবারের ভালোবাসাকে পুঁজি হিসেবে বেছে নেয় দালাল চক্র। ফলে রোগীরা প্রতারণার শিকার হয় বেশি।  

চমেক হাসপাতালে উপ-পরিচালক ডা. অং সুই প্রু বাংলানিউজকে বলেন, ‘দালালমুক্ত হাসপাতালের জন্য গেটপাস, ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ফলে অতীতের তুলনায় দালাল অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি প্রতি ওয়ার্ডে আনসার সদস্যরা দায়িত্বে আছে। তবুও কিছু অসাধু ব্যক্তি হাসপাতালে দালালি করছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের দালাল প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি’।  

তিনি বলেন, ‘একজন মানুষ এসে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে চলে গেলে হবে না। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, কেন যাব? সুতরাং লোকজন সচেতন হলে দালালি থাকবে না’।

বাংলদেশ সময়: ১৩০০, ডিসেম্বর ২১, ২০২২
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।