ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার ...

চট্টগ্রাম: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ২০ তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর)।

২০০৩ সালের এই দিনে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান হয়।

১৯২২ সালের ৬ জুলাই অবিভক্ত ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনাতে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। তাঁর পৈতৃক নিবাস রাউজান উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের দারোগা বাড়িতে।
১৯৪২ সালে কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে বিএ শ্রেণিতে পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৪ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি এই দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।  

পরবর্তীতে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক দল হয়ে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমান সারা দেশে দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরির উদ্যোগ নেন। সেই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে অধ্যাপক খালেদ দলটির ভিত্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর মনোনীত প্রার্থী হিসাবে আওয়ামী লীগের হয়ে রাউজান-হাটহাজারী সংসদীয় আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার ও মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সমগ্র পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি চট্টগ্রামে আন্দোলন বেগবান করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনায় এই সময় গঠিত ৫ সদস্যের চট্টগ্রাম সংগ্রাম কমিটির তিনি ছিলেন অন্যতম নেতা। ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় তিনি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের তথ্য দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে স্বাধীন বাংলা বেতারের উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। পাশাপাশি মুজিব নগর সরকারের মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত ‘জয় বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বৈদেশিক প্রচার দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সংবিধান কমিটির সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার গভর্নর নিযুক্ত করেন।

চট্টগ্রামের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ অধ্যাপক খালেদ চট্টগ্রামের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে শত নাগরিক কমিটি গঠন করে দল মত নির্বিশেষে সকলকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার আন্দোলনে সব সময় সক্রিয় ছিলেন। তাঁর স্মরণে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রতি বছর ‘অধ্যাপক খালেদ স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করে থাকে। চট্টগ্রাম একাডেমি প্রতি বছর ‘অধ্যাপক খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান করে থাকে। বাংলা একাডেমি তাঁর জীবনী গ্রন্থ ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সালে অধ্যাপক মোহাম্মদ মোহাম্মদ খালেদকে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।