চট্টগ্রাম: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক মো.ইমন। সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নে মোহাম্মদ রাসেল ও মিনু আক্তারের বড় ছেলে তিনি।
২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন প্রথম আটক হয়েছিলেন পুলিশের হাতে।
আন্দোলনে কিভাবে যুক্ত হলেন?
ইমন: আমি ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই বিভিন্ন অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ছিলাম। যখন চলতি বছর আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ডাক দিল, তখন আবার রাজপথে নেমেছি।
চট্টগ্রামে কিভাবে শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেছিলেন?
ইমন: আমরা যেকোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ডাক দিলেই সঙ্গে সঙ্গে তারা চলে আসতেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও কিছু শিক্ষার্থীকে যোগ করা হতো। একজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে ৫ জন বা পরিচিত থাকলে তার মাধ্যমে আরও শিক্ষার্থী আমাদের আন্দোলনে যুক্ত হয়। এছাড়াও নগরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে গোপনে আন্দোলনের বিষয় নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছিল।
আপনি জামালখান থেকে আটক হয়েছিলেন, কিভাবে মুক্তি পেয়েছেন?
ইমন: আমি জামালখান এলাকা থেকে আটক হই। যখন কেন্দ্রীয় কমিটির ছয়জন সমন্বয়ককে ডিবি’র হারুন তার কার্যালয়ে আটকে রাখেন, তখন তাদের মুক্তি চেয়ে আমরা ২৯ জুলাই রাজপথে কর্মসূচি দিলাম। সেদিন আমি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় ফটোসাংবাদিকরা আমার ছবি তুলছিলেন। আমি প্রিজন ভ্যান থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কেন কথা বললাম, সেজন্য আমাকে থানায় নিয়ে অনেক নির্যাতন করেছে। পরবর্তীতে আমাকে রাজনৈতিক ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় আমাকে রাত তিনটার দিকে অন্যদের সাথে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছিল।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কিভাবে আন্দোলনে যুক্ত করলেন?
ইমন: ২০২৪ সালের ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামের সংগঠনটির জন্ম হয় কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে। এই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। পাশাপাশি সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভূমিকাও ছিল। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই আন্দোলন অংশগ্রহণ করেছিল। আহত ও নিহতদের সংখ্যার মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তখন আমরা সম্মিলিতভাবে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপ চালাতাম। যৌক্তিক দাবি পূরণে সেই গ্রুপে চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে থাকে। একদিন ১০ জন হলে অন্যদিন ১৫ জন, তার পরদিন ২০ জন- এভাবেই বাড়তে থাকে সংখ্যা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ কিভাবে সম্পৃক্ত হলো?
ইমন: আন্দোলন চলাকালীন অনেক কোচিং সেন্টার খোলা ছিল। আমার বন্ধু-বান্ধবী ও পরিচিত অনেকে কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের আকার-ইঙ্গিতে আমাদের আন্দোলনের বার্তা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতাম। অনেকে বার্তা পাঠিয়ে দিতেন। অনেক চিকিৎসক আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে যেতেন। প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে যেতেন, যাতে আঘাত পেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন। আন্দোলন চলাকালে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ভবন থেকে আমাদের নাস্তা ও পানি দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন।
আন্দোলন চলাকালে কোথায় থাকতেন?
ইমন: আন্দোলন চলাকালে আমি বাসায় থাকতে পারতাম না। সারাদিন রাজপথে থাকতাম বা কোথাও প্রোগ্রাম হলে সেখানে চলে যেতাম। রাতের বেলায় জিইসির মোড়ের দিকে একটি বাসায় থাকতাম। আমি যেখানে থাকতাম, সেখানে এক বড় ভাই আমার থাকা ও খাওয়ার বিষয়গুলো দেখতেন। আরও কয়েকজন বড় ভাই আমাকে সহযোগিতা করতেন। আমি টিউশন করতাম ৫টি। সেগুলো করতে পারিনি ঠিকমতো। ২০১৮ সাল থেকেই আমার প্রতিষ্ঠিত নবম-দশম শ্রেণির একটা ব্যাচ চলছিলো। অনলাইনে ডিএনএ স্টাডি পয়েন্টের ফেসবুক পেইজে ভিডিও আপলোড করতে পারছিলাম না। একটু আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়ে যাই তখন।
কেমন চট্টগ্রাম দেখতে চান?
ইমন: এমন চট্টগ্রাম দেখতে চাই যেখানে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, রাজনীতি, কাস্টমস, বন্দর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহ সকল সেক্টর দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত, হয়রানি মুক্ত হবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ হোক। ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজি বন্ধ হোক। বর্তমান উপদেষ্টার কাছে জলাবদ্ধতা নিরসনের একটি ম্যাপ চাই। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম আরও সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হোক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের গর্জে ওঠা কণ্ঠস্বর আগামিতে আরও বলিষ্ঠ হোক। সকল শহীদদের আমরা স্মরণ করি, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তাদের রক্তদান আমরা বৃথা যেতে দেবো না। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবো, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
এমআই/এসি/টিসি