ঢাকা, সোমবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রথমে বিস্ফোরণ, তারপর আগুন লাগে জাহাজে: কমডোর মাহমুদুল 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
প্রথমে বিস্ফোরণ, তারপর আগুন লাগে জাহাজে: কমডোর মাহমুদুল  ...

চট্টগ্রাম: স্বাভাবিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের পর বিস্ফোরণ ঘটলেও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ‘বাংলার জ্যোতি’ অয়েল ট্যাংকারে প্রথমে বিস্ফোরণ ও পরে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন বিএসসির এমডি কমডোর মাহমুদুল মালেক।  

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় বিএসসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

 

তিনি বলেন, বিএসসির ৭টি জাহাজ আছে। এর মধ্যে ৫টি জাহাজ সমুদ্রগামী।

বাকি দুইটি লাইটারিং করে অপরিশোধিত তেল। বিপিসির সব ক্রুড অয়েল আমরা পরিবহন করি। ১৯৮৭ সালে ডেনমার্কে তৈরি ‘বাংলার জ্যোতি’ জাহাজটি। এটিতে প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটে, তারপর অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, টানেল কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স ফায়ার ফাইটিং করেছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটা জাতীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমি সব সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।  

তিনি জানান, ১৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার এ ট্যাংকারে ১১ হাজার ৭১৬ টন অপরিশোধিত তেল ছিল জাহাজে। কিছু খালাস করেছে। যদি জাহাজে থাকা তেলে আগুন লেগে যেত তাহলে ভয়াবহ হতো। জাহাজে ফাটল দেখা দিলে বিপদ হতো। পরিবেশ বিপর্যয় ঘটলে আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে যেতে পারত। আগুন নেভানোর পর দুর্ঘটনা স্থলে গ্যাস আছে কিনা আমরা দেখিছি। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আইসোলেটেড করে রাখা হয়েছে। তেল খালাসের পর জাহাজটি টাগ বোটের সহায়তায় ডকে নেওয়া হবে।  

দেশের লাইফ লাইন জ্বালানি আমদানি ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। অপরিশোধিত তেল খালাসে বিএসসি অপারেশন চালিয়ে যেতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেফটি ও সিকিউরিটির জন্য আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অননুমোদিত লোক গ্যাংওয়েতে ঢোকার সুযোগ নেই। আজ ৪২ জন শিপ ক্রু ছিল। বিএসসির নিজস্ব ওয়ার্কশপ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী লোক যায়। ওয়াচম্যান ঢোকে, কোনো সার্ভিস প্রোভাইডার যারা মেশিনারি বা পার্টস সরবরাহ করে তারা ঢোকে। অননুমোদিত কেউ জাহাজে ঢোকার সুযোগ নেই। দুর্ঘটনার সময় সেখানে তিনজন লোক ছিল।  

তিনজনেরই প্রাণহানি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিহতরা হলেন-বিএসসির নিজস্ব মেরিন ওয়ার্কশপের চার্জম্যান চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম, ২৫-৩০ বছর ধরে বিএসসিতে ডেইলিবেসিস কাজ করা কিশোরগঞ্জের মো. হারুন, বরিশাল মেরিন একাডেমি থেকে পাস করে বের হওয়া ঝিনাইদহের ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা।  

বিএসসির টেকিনিক্যাল ডিরেক্টরকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত কমিটি বের করবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় কী করণীয় তা-ও তুলে ধরবে কমিটি। ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য। আরেকটি ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি যে তিনজন মারা গেছে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর, দাফন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ক্ষতি নিরূপণ, আইনগতভাবে আর্থিক সহায়তা যা যা পাবে তা নির্ধারণ করবে। যারা চলে গেছেন তাদের পরিবারের পাশে থাকবো আমরা। এর জন্য আমি রেসপন্সিবল থাকবো। এ তিনজনের বিষয়ে বিএসসি সচেতন ও ওয়াবদ্ধ থাকবে।   

দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন বিস্তারিত বললে তদন্তে বিঘ্ন ঘটবে। তবুও আপনাদের জানার জন্য বলছি। তারা তিনজন রশি অ্যাডজাস্ট করছিল। নিচের পেইন্ট স্টোর থেকে গ্যাস নির্গত হতে পারে। ইলেকট্রিক শর্টসার্কিট হতে পারে। তদন্ত টিম সবার সঙ্গে কথা বলে, পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃত কারণ বের করতে পারবে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল জাহাজে। তখন পাওয়ার সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেছে। তা ছাড়া এত বড় অগ্নিকাণ্ড জাহাজের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সম্ভবপর ছিল না। আজ জাহাজে বড় কোনো মেরামত কাজ হচ্ছিল না। ছোটখাটো সমস্যা প্রায়ই সমাধান করি। জাতীয় অর্থনীতিতে এ জাহাজ বড় অবদান রাখছিল। নবীন ক্যাডেটদের ট্রেনিংয়েও এটি বড় ফ্যাক্টর। সিঙ্গেল মুরিং পাইপলাইন প্রকল্প চালু হলে অপরিশোধিত তেল লাইটারিংয়ের প্রয়োজন হবে না।  
  
১২-১৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে সরকার। যার মাদার ভ্যাসেল পার্ট ও লাইটারিং করে বিএসসি। আমাদের লাইটারিং জাহাজ আছে দুইটা বাংলার সৌরভ ও বাংলার জ্যোতি। সৌরভের ইঞ্জিনে সমস্যা হওয়ায় এমনও হয়েছে প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা খরচ একটি টাগ ব্যবহার করেও আমরা লাইটারিং করেছি। বাংলার জ্যোতি ১০-১৫ দিন ডকে চলে যাবে। আমরা এ জাহাজের ক্রেন, ইঞ্জিনসহ মেজর সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। যদি কোনো সময় মনে হয় এটা পছন্দের হচ্ছে না। তখন অন্য জাহাজ চাটার্ড করতে হলেও তা-ও করবো। এটা জাতীয় ইস্যু। দেশে তেল উৎপাদন না থাকায় আমদানি নির্ভর।  

তিনি জানান, অতীতকাল থেকে জাহাজের মাস্টাররা নিজেদের সন্তান মনে করে জাহাজকে। দুর্ঘটনার সময়ও তারা জাহাজ ছেড়ে নামতে চান না। মাস্টার সালাউদ্দিন অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেও দাঁড়িয়ে ছিলেন জাহাজে। আমরা তাকে জোর করে নামিয়ে এনেছি। আমরা কখনো চাই না, কেউ হতাহত হোক। জানের ওপর কিছু নেই। অগ্নিনির্বাপণের পর ডলফিন ৭ নম্বর জেটিতে নোঙর করা হয়েছে। এরপর নিহত তিনজন ছাড়া সব নাবিককে আমরা পেয়েছি।  

তদন্তে যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পাইনি।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।