চট্টগ্রাম: ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাশের হারের পাশাপাশি জিপিএ-৫এর সংখ্যাও বেড়েছে। এবছর জেলায় ৯৮ দশমিক ৭২ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
একই সঙ্গে এবছর ১২হাজার ৫৯১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
সোমবার নিজ কার্যালয়ের সভা কক্ষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফল ঘোষণা করেন। এর আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন সুলতানা জেলার সামগ্রিক ফলাফল জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন।
ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন,‘ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এবার প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ভাল সাফল্য এসেছে। যা আগামীর বাংলাদেশ বির্নিমার্ণে ভুমিকা রাখবে। ’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন,‘এবছর গতবারের তুলনায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। ’
এগিয়ে আছে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা:
এবছর নগরী থেকে এগিয়ে আছে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা। এবার প্রথম হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার শিক্ষার্থীরা।
এ উপজেলায় পাশের হার ৯৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী।
৯৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে জেলায় দ্বিতীয় হয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা। এই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৯৮০জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। এরমধ্যে ৪৯৯ জন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে ৫হাজার ৯৭৪জন শিক্ষার্থী।
নগরীর পাহাড়তলী থানা জেলায় তৃতীয় হয়েছে। এবছর এই থানায় ৫হাজার ২৫৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৫ হাজার ২৩৭ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬১৩জন।
অন্যদিকে নগরীর কোতোয়ালী থানার বিভিন্ন স্কুল থেকে ৬ হাজার ৩৯০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ছে ২ হাজার ৪০৪ শিক্ষার্থী । গত বছর ছিল ২ হাজার ১৫০ জন। পাশের হার ৯৮ দশমিক ৪০।
চান্দগাঁও থানায় ৬ হাজার ৯১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬ হাজার ৮২৬। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৭৩ । গতবার ছিল ৭০৫। পাশের হার ৯৮ দশমিক ৭৬।
৬ হাজার ৬২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে বন্দর থানার বিভিন্ন স্কুলে পাশ করেছে ৬ হাজার ৭ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১হাজার ২৩৫ জন। যা গত বছর ৮শ’ ৮০ এ ছিল। পাশের হার ৯৯ দশমিক ০৯।
পাঁচলাইশে ৭ হাজার ৬১৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৭ হাজার ৪৭০ জন। ১হাজার ৪৩৩ জিপিএ-৫ পেয়েছে, পাশের হার ৯৮ দশমিক ১২। গত এ থানায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ হাজার ১০৪ পরীক্ষার্থী।
নগরীর ডবলমুরিং থানায় ৮ হাজার ২৮৬ জনের মধ্যে পাশ করেছে ৮ হাজার ২২৭ পরীক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১হাজার ৮১৮ জন। এ সংখ্যা গতবার ছিল ১ হাজার ৪৮৩ জন। পাশের হার ৯৯ দশমিক ২৯।
এছাড়াও চট্টগ্রামের ১৪ টি উপজেলার মধ্যে বাঁশখালীতে ৯৫দশমিক ৯৫, রাউজান ৯৯দশমিক ৭, সন্দ্বীপে ৯৮ দশমিক ৭৬, ফটিকছড়িতে ৯৮ দশমিক ৩৪, পটিয়াতে ৯৭ দশমিক ৮২, আনোয়ারায় ৯৮ দশমিক ৭৬, বোয়ালখালীতে ৯৯দশমিক ৩৯, লোহাগাড়ায় ৯৮ দশমিক ৫৮, হাটহাজারীতে ৯৮ দশমিক ৬০, মিরসরাইয়ে ৯৯ দশমিক ৬৪, সীতাকুণ্ডে ৯৯ দশমিক ৩১ এবং সাতকানিয়ায় ৯৮ দশমিক ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
এগিয়ে আছে মেয়েরা:
এবছর চট্টগ্রাম জেলায় ছেলেদের চেয়ে ১০হাজার ৫৫৯ জন বেশি মেয়ে পরীক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিএসসি) অংশ নেয়। এরমধ্যে পাসের হারেও মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার ২০ থানার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১লাখ ৩৩হাজার ২৩৫জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। এরমধ্যে ৭১ হাজার ৮৯৭ জন মেয়ে এবং ৬১ হাজার ৩৩৮ জন ছেলে।
জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান বলেন,‘বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণেই নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ’
সেরা বিদ্যালয় নির্ণয় হয়নি:
অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষায় নগরীসহ বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা নির্ণয় করা হলেও প্রাথমিক সমাপনীতে তা করেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। থানা ওয়ারী সেরা থানার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা জানান, কোমলমতি শিশুদের সবাই ভাল করেছে তাদের প্রাথমিক সমাপনীতে। মফস্বল ও নগরী এরমধ্যে কোন তফাৎ নেই। সেরা কোন প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়নি।
এদিকে ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবছর নগরীর ৬টি থানাসহ জেলার অধীনে ২০ টি উপজেলার কোন উপজেলাতেই শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।