ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ, ছেলে শিবিরের সাথী

রমেন দাশগুপ্ত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩
পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ, ছেলে শিবিরের সাথী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নগরীর পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাট এলাকায় ককটেলসহ আটক হওয়া ইমাম হোসেন (২০) শিবিরের ‘সাথী’ বলে নিশ্চিত হয়েছে ‍পুলিশ। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেও বায়তুশ শরফ মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে ইমাম শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।



মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিবিরহাট এলাকা থেকে তাকে ছয়টি ককটেলসহ আটক করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এরপর নগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম হোসেন বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।


নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইমাম হোসেন শিবিরের কর্মকাণ্ড ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। নগরীতে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য আমরা পেয়েছি। শিঘ্রই তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করব। ’

পাঁচলাইশ থানার ওসি আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ইমাম হোসেন শিবিরের সাথী পর্যায়ের কর্মী। তাকে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার আদালতে হাজির করে তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম হোসেন জানিয়েছেন, তাদের পূর্বপুরুষ ফরিদপুরের আদি বাসিন্দা। উদ্বাস্তূ হিসেবে প্রায় ৪০ বছর আগে তার দাদা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির নয়নপুরে এসে বসতি গড়ে তুলেন। তার বাবা জিন্নাত মাঝিসহ পরিবারের সব সদস্য আওয়ামী লীগের সমর্থক। তার মামা খাগড়াছড়ির ভূঞাছড়ি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

ইমাম খাগড়াছড়িতে একটি মাদ্রাসায় দাখিল (এসএসসি সমমান) পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে নগরীর ধনিয়ালা পাড়া এলাকায় বায়তুল শরফ মাদ্রাসায় এসে আলিম শ্রেণীতে ভর্তি হন। প্রথমে বায়তুশ শরফে হোস্টেলে থাকলেও বছরখানেক আগে ইমাম এসে নগরীর চকবাজার এলাকার ডিসি রোডে হাসিনা মঞ্জিলে ছাত্রশিবিরের মেসে উঠেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, বায়তুশ শরফ মাদ্রাসার হোস্টেলে ইমাম যাদের সঙ্গে থাকত তারা সবাই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে ইমামকে প্রথম শিবিরে যোগদানের দাওয়াত দিয়েছে তার গৃহশিক্ষক যিনি নগরীতে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে আছেন। এরপর বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ইমাম এখন শিবিরের সক্রিয় কর্মী।

সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম জানিয়েছে, বাড়ি থেকে পড়ালেখার খরচের জন্য প্রতিমাসে তার বাবা দেড় হাজার টাকা পাঠায়। কিন্তু এ টাকায় তার খরচে কুলায়না। এজন্য সে বিনা পয়সায় শিবিরের মেসে থাকে। মাঝে মাঝে সে মেসের ক্যান্টিনে খায়।

শিবিরের কোন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার কিংবা মামলা হলে সাংগঠনিকভাবেই তার সব খরচ বহন করা হয় বলে ইমাম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে ইমামকে আটকের আগে অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করে শিবির। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে শিবিরের কর্মীরা ককটেল ছুঁড়লে ‍উভয়পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ শটগানের গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে ইমামকে নগর ছাত্রশিবিরের এক শীর্ষ নেতা মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে মুরাদপুরে আসতে বলে। ইমাম মুরাদপুরে যাবার পর ওই নেতা তাদের একটি হোটেলে চা-নাস্তা খাওয়ান। এরপর তার হাতে আটটি ককটেলসহ একটি ব্যাগ দিয়ে মিছিলে যোগ দিতে বলা হয় এবং পুলিশ দেখলে ককটেল ছুঁড়ে মারার নির্দেশ দেয়া হয়।

ঝটিকা মিছিল বের করার পর পুলিশ দেখেই ইমাম দু’টি ককটেল ছুঁড়ে দেয়। কিন্তু মিছিলের পেছনেও যে পুলিশ আছে সেটি তারা বুঝতে পারেনি। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পরিস্থিত তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ইমাম একটি গলির ভেতরে আশ্রয় নেয়। পুলিশ তাকে ৬টি ককটেলসহ আটক করতে সক্ষম হয়।

পাঁচলাইশ থানার ওসি আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, আটক ইমামের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪,২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।